এ কিউ রাসেল: টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলায় লেবু চাষ করে প্রায় ৯’শতাধিক কৃষক এখন স্বাবলম্বী। শুধু তাই নয় এ এলাকার উৎপাদিত লেবু বিক্রি হচ্ছে বিদেশে। যার ফলে বদলে গিয়েছে কৃষকদের ভাগ্যের চাকা। পাশাপশি অন্যান্য ফসলের চেয়ে লেবুর আবাদ লাভবান হওয়ায় লেবু চাষের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন অন্যান্য কৃষকরা।
এবার উপজেলার লাউহাটি ইউনিয়নের লাউহাটী, তাতশ্রী, তারটিয়া, দারিয়াপুর, হেরেন্দ্রপাড়া ও ফাযিলহাটি ইউনিয়নের ফাযিলহাটী পুটিয়াজানি, ভবানীপুর,শৈলকুড়িয়া, কুমারজানি ও এলাসিনসহ বিভিন্ন অঞ্চলে বাণিজ্যিক ভাবে লেবু চাষ করা হচ্ছে। বর্তমানে ৯ শ’ত হেক্টর জমিতে লেবু চাষ করা হচ্ছে। পরিত্যাক্ত জায়গায় অন্য যেকোন ফসলের চেয়ে তিনগুণ লাভ বেশি হওয়ায় এবং বাজারে এর অনেক চাহিদা থাকায় ক্রমেই লেবু চাষ করতে আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে এখানকার কৃষকদের। এই অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষক এখন অন্য সব ফসল চাষ না করে লেবু চাষ করছেন।
এ এলাকার অনেক যুবকরা এক সময় তাস, জুয়া বা অহেতুক গল্প গুজব করে দিন কাটাতো। তারাও এখন এসব ছেড়ে দিয়ে লেবু চাষের কাজে সারা বছর ব্যস্ত সময় কাটচ্ছেন।
বর্তমানে লাউহাটি, ফাযিলহাটি ও এলাসিন ইউনিয়নে ৯শ’ত হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হচ্ছে। লেবুচাষ লাভজনক ও কম ঝুকিপূর্ণ হওয়ায় নিয়মিত পরিচর্যা করে সহজেই রোগবালাই থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
বেকারত্ব¥ মোচনে লেবুচাষ হয়ে উঠছে এই এলাকার অন্যতম মাধ্যম। কারণ যে সমস্ত জমি বছরের পর বছর অনাবাদী থাকে সে সমস্ত জমিই লেবুচাষের জন্য উপযুক্ত করে নেয়া যায়। সুগন্ধি জাতের লেবু চাষ এখন বেকার ও কৃষকদের জন্য আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে। একবার চারা রোপণ করে ২০বছর এভাবে বিক্রি করতে পারে। আর গাছ ভালো হলে একটি গাছ থেকে বছরে প্রায় ৫০০ পিস লেবু পাওয়া যায়। বর্তমানে ১০০’শ লেবু বাজারে ৫’শ থেকে ৬০০শ’ত টাকা দরে বিক্রী হচ্ছে। ধান চাষের চেয়ে লেবু চাষে তিনগুন লাভ বেশি হওয়ায় এই অঞ্চলের সকল কৃষক ধান চাষ না করে লেবু চাষ করছে। লেবু চাষ করে যে কোন ফসলের তিনগুণ টাকা পাওয়া যায়। বর্তমানে এই লেবু চাষে সকল কৃষকই এখন স্বাবলম্বী। দেলদুয়ারের লেবুর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট হচ্ছে–এসব লেবুর ত্বক খুবই পাতলা,বিচি নেই, টাক কম, রস বেশি, সুগন্ধ এবং খেতে খুবই সুস্বাদু।
কয়েকজন চাষী বলেন, প্রতি হেক্টর জমিতে লেবু চাষে ৫০ হাজার টাকার মত খরচ হয়। খরচ বাদে পুরানো লেবু বাগানের চাষীদের আড়াই লক্ষ ও নতুন বাগানে দুই লক্ষ টাকার মত লাভ হয়। উৎপাদিত লেবু স্থানীয় বিভিন্ন হাট–বাজারে বিক্রি করা হয়। আর এখান থেকেই পাইকারি ক্রেতাদের মাধ্যমে লেবু ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশ।
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো ঃ শাহআলম জানান, লেবু চাষ দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে সিংগাপুর, কুয়েত,কাতার ও সৌদিআরবেও লেবু রপ্তানি করা হচ্ছে। এ অঞ্চলে একটি লেমন জুস কারখানা হলে বাংলাদেশের মানুষ জুস খেয়ে যেমন ভিটামিন সি–র অভাব পুরণ করতে পারবে তেমনিই এই অঞ্চলে লেবু চাষীরা লাভবান হবে।
কৃষি বিভাগের তদারকি, সরকারী সহায়তা ও ব্যাংক ঋণ ও বাজারজাত করণের সুবিধা পাওয়া গেলে লেবু হয়ে উঠতে পারে টাঙ্গাইলের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল। যা বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
*লেখক : সাংবাদিক ও সম্পাদক,
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা,
উপজেলা শাখা, গোপালপুর–টাঙ্গাইল।