তাপস প্রান্ত
চট্টগ্রাম: সবজির ব্যাপক দরপতনে লোকসানে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এক সপ্তাহ আগে যে সিম ও ফুলকপির কেজি বিক্রয় হয়েছে ২০ টাকা, শুক্রবার ( ১৫ জানুয়ারি ) তা বিক্রি করতে হয়েছে ৬ টাকা থেকে ৭ টাকায়। একইভাবে ১০ টাকার মুলা বিক্রি করতে হয়েছে ৩ টাকা থেকে ৪ টাকায় হচ্ছে।
দক্ষিনের সর্ববৃহৎ দোহাজারী কাঁচাবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কৃষকরা একরকম পানির দরে তাদের অনেক কষ্টে উৎপাদিত শাক-সবজি বিক্রি করছেন। তারা আলু বিক্রি করছেন ১৫ থেকে ১৮ টাকা, গোল বেগুন ১০টাকা, মটরশুঁটি ১২ থেকে ১৪টাকা, টমেটো ২০টাকা, কাঁচা মরিচ ২২টাকা এবং পাতাকপি ৫/৬ টাকা কেজি করছেন।
সাতকানিয়া উপজেলার আলীনগর গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী তার ৩ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছেন। তাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। আর উৎপাদিত ফসল বেচে এ পর্যন্ত আয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মত। আরও কিছু সবজি মাঠে আছে। তা বিক্রি করে যা পাওয়া যাবে তাতে উৎপাদন খরচও মিটবে না। অথচ তিনি ধার-দেনা করে চাষের খরচ নির্বাহ করেছেন। এখন সেই টাকা কিভাবে শোধ করবেন সেই চিন্তায় তিনি অস্থির। এমন দুর্বিপাকে কেবল মোহাম্মদ আলী নয়, কম বেশি প্রায় সবার।
সাতকানিয়ার শিলঘাটায় এ বছর ২৭ শতক জমিতে সীমের আবাদ করেছেন সজিব বড়ুয়া। প্রথমদিকে প্রতিকেজি সীম ৫০/৬০ টাকা বিক্রি করলেও এখন বিক্রি করছেন ১০ থেকে ১২ টাকা দরে। এ দামে সীম বিক্রি করে আবাদের খরচ ওঠেনি বলে তিনি জানান।
চন্দনাইশ ধোপাছড়ি এলাকার কৃষক মাহমুদুল হাসান জানান, তারা কষ্টে উৎপাদিত কাঁচা শাক-সবজির মূল্য পাচ্ছেন না। বরং তাদের কাছে থেকে কিনে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীরা ভালো লাভ করছেন। আর এই শাক-সবজি শহরে বা আশপাশের হাট-বাজারে প্রায় দ্বিগুণমূল্যে খুচরা বিক্রি চলছে।
মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ী কালাম বলেন, তারা কৃষকের কাছ থেকে কম দামে সবজি কিনলেও পাইকারি বাজারে অতিরিক্ত খাজনা, পরিবহন খাতে অধিক ব্যয় ছাড়াও স্থানে স্থানে চাঁদাবাজির কারণে বেশি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান হলেও শহর ও আশপাশের বাজার থেকে দ্বিগুণ দরে সবজি কিনে খেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
দরপতনের কারণ হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ মঞ্জুরুল হুদা জানালেন, বছরের এই সময়ে বাজারে সবজির চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি হয়। তাই প্রতিবছর এই সময়ে সবজির দাম কম থাকে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি সবজি উৎপাদন হয়েছে। তিনি আরো বলেন কৃষকদের আমরা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অগ্রিম উৎপাদন পরামর্শ দিয়ে থাকি, কিন্তু কৃষক সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে তাই লোকসানের মুখে পড়ে।
তিনি জানান, চলতি মওসুমে ৫ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এবার আবাহাওয়া অনুকূল থাকায় সবজির বাম্পার ফলন হয়েছে।