Home চট্টগ্রাম মাইকিংয়ে বেড়ে গেছে শব্দদূষণ

মাইকিংয়ে বেড়ে গেছে শব্দদূষণ

মাইকিংয়ে ভোটাররা আকৃষ্ট হওয়ার চেয়ে বেশি বিরক্ত হচ্ছে

তাপস প্রান্ত

চট্টগ্রাম: সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র প্রার্থী, কাউন্সিলর প্রার্থী, মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা। পাশাপাশি নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে মাইকিং প্রচারণায় শব্দ দূষণ, উৎকট বাজনা ও বিকট শব্দের গানে ভোটারদের যতটা না আকৃষ্ট করেছে, তার চেয়ে বেশি বিরক্ত হচ্ছেন সাধারণ ভোটারেরা। নগরীতে মারাত্মকভাবে বেড়েছে শব্দ দূষণ।

শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুসারে নির্ধারিত শব্দের মানমাত্রা নীরব, আবাসিক, মিশ্র, বাণিজ্যিক ও শিল্প এলাকার জন্য দিবাকালীন যথাক্রমে ৫০, ৫৫, ৬০, ৭০ ও ৭৫ ডেসিবল এবং রাত্রিকালীন যথাক্রমে ৪০, ৪৫, ৫০, ৬০ ও ৭০ ডেসিবল। এই আইন অমান্য করলে প্রথমবার অপরাধের জন্য ১ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য ৬ মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।

সরেজমিনে দেখাযায়, নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণা নিয়ম অনুযায়ী বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মাইক বা সাউন্ড বক্স ব্যবহারের বিধান থাকলেও তা মানা হচ্ছেনা। সকাল থেকে কোথাও রাত অবধি নির্বাচনী প্রচারে উচ্চস্বরে বাজছে এসব যন্ত্র। এতে করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। অন্য দিকে বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার জন্য জনপ্রিয় সব গানের কথাও বদলে দেয়া হচ্ছে। যুক্ত করা হচ্ছে প্রার্থীর পক্ষে প্রশংসার ফুলঝুরি।

এ ধরনের প্রচারণায় অন্যতম সমস্যা হিসেবে উদ্ভব হয়েছে শব্দদূষণ।

সেইভ দ্যা নেচার অফ বাংলাদেশের সভাপতি মোয়াজ্জেম রিয়াদ বলেন, নির্বাচণ চলাকালীন সময়ে সবচেয়ে বেশি শব্দ দূষণ হয়। এই সময় শব্দের মানমাত্রা ১২০ ডেসিবল ছাড়িয়ে যায়। কিছুদিন ১০০ ডেসিবল শব্দ শ্রবনে স্থায়ী বধির হয়ে যেতে পারে মানুষ। মাইকিংয়ের শব্দ মানুষের মস্তিষ্কে আঘাত করে। এতে শ্রবণশক্তি হ্রাস ছাড়াও হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে। তবে শব্দদূষণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। শব্দদূষণ তিন বছর বা তার কম বয়সী শিশুদের মানসিক বিকাশে ক্ষতি করে। এখন ডিজিটাল প্রচারণার অনেক সুযোগ আছে, সবাই ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বললেও বাস্তবে প্রয়োগ হচ্ছেনা।

ইএনটি বিশেষজ্ঞ সুপ্রন বিশ্বাস বলেন, শব্দের একটি মাত্রা আছে। সেই নির্দিষ্ট মাত্রার শব্দ আমরা শুনতে পাই। আবার নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় শব্দ উৎপন্ন হলে তখন আমাদের অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যা তৈরি হয়। কেউ প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শব্দ শুনতে থাকলে তখন কোনো কারণ ছাড়াই মানুষ রেগে যায়, মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়। আর রাগের মাথায় মানুষ অনেককিছুই করে ফেলে যা পরে অনুশোচনা তৈরি করে। মাত্রারিক্ত উচ্চ  শব্দে হার্ট ও কানের রোগীরা ঝুঁকিতে থাকে। নির্বাচনের  সময় মাইকের শব্দে লোকজনের সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয়। কমিশন মাইকিং করার ব্যাপারে আরো কঠোর হলে জনগণ উপকৃত হবে বলে তিনি জানান।

চেরাগী পাহাড়ের বাসিন্দা উজ্জ্বল দাস বলেন, কিছুক্ষণ পর পর রাস্তা দিয়ে মাইক বাজিয়ে ভোট চাওয়া হচ্ছে। কখনও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সাউন্ড বক্স বাজানো হচ্ছে। একেক সময় একেক প্রার্থীর। ছেলে মেয়েদের পড়ায় মন বসছে না। নানা রকম উৎকট গান বাজনা বাজিয়ে পরিবেশ ও জনগনের ক্ষতি করছেন প্রার্থীরা। তারা সবাই  ডিজিটাল দেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও প্রচারণা  করছে সব এনালগ পদ্ধতিতে।

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তুরের পরিচালক ( মহানগর) নুরুউল্লাহ নুরী বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত আরচণ বিধি অনুয়ায়ী মাইকের ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। অন্যতায় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না পেলেও আচরণবিধি প্রতিপালনে তৎপর রয়েছেন তারা। প্রার্থীদের বলা হয়েছে তাদের প্রচারের মাইক যেন উচ্চস্বরে বাজানো না হয়। যেখানে দেখছি মানুষের অসুবিধা হচ্ছে, সেখানে শব্দদূষণ না করার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।