বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: অতীতের সব ভুল ছুঁড়ে ফেলে চট্টগ্রামকে সর্বাধুনিক বাস উপযোগী বিশ্বমানের উন্নত ও নান্দনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলাসহ ৩৭টি প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা এম রেজাউল করিম চৌধুরী নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছেন।
শনিবার (২৩ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে তিনি এ ইশতেহার ঘোষণা করেন।
আটটি খাতকে অগ্রধিকারে রেখে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি বরাদ্দ দিয়েছেন। সিডিএ, ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশনের মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ মনোযোগ থাকবে। ১০০ দিনের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান করা হবে।
নগরীতে সড়কের তুলনায় যানবাহনের সংখ্যা অনেক বেশি। এতে প্রতি কর্মদিবসে সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজট। সংশ্লিষ্ট পক্ষের সাথে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিবো। নগরীতে জনসংখ্যার ঘনত্বের বিপরীতে সড়ক আছে মাত্র ১৫ শতাংশ। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেমও কঠোর মনিটরিং করা হবে।
আরও বলেন, পরিবেশ উপযোগী ও উন্নত দেশের আদলে টেকসই সড়ক তৈরি করা হবে। নালা নর্দমা, খাল -নদী দখলদার উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে। ৭০ লক্ষ নাগরিকের মহানগরীতে প্রতিদিন হাজার হাজার টন বর্জ্য জমছে। বর্জ্য রিসাইক্লিং প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জালানি তৈরি করা হবে। অপচনশীল বর্জ্য আলাদা ডাম্পিং ইয়ার্ডে করে রিসাইক্লিং প্ল্যান্টে রপ্তানি উপযোগী গৃহস্থালী সামগ্রী তৈরি করা হবে। পর্যটন খাতকে আরো আধুনিক করে গড়ে তোলা হবে। সবার সাথে আলোচনার মাধ্যমে হোল্ডিং ট্যাক্স সমস্যার সমাধান করা হবে।
আরও কিছু অঙ্গীকার করে বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে জোরদার ভুমিকা রাখবো। বন্ধ হয়ে যাওয়া নাগরিক সেবা কার্যক্রম পুরনায় চালু করবো। ভূ-প্রকৃতির ক্ষতি না করে উন্নয়ন কার্যক্রম চালু করবো। ব্লু ইকোনমি, অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হবো। পাহাড়, হ্রদ, বনানী সংরক্ষণ, সবুজায়ন ও বেড়িবাঁধ গড়ে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূলসহ নগর সুরক্ষার গুরুত্ব দেওয়া হবে। নদী দখল মুক্ত করে নগর পরিবহনে বাড়তি চাপ কমাতে নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ, স্টিমার চালু করবো। মশকমুক্ত নগর গড়তে কার্যকর কীটনাশক প্রয়োগ করবো। অপরিকল্পিত স্থাপনা তৈরি ও ফুটপাত দখলে নিরুৎসাহিত করা হবে। আধুনিক পাবলিক টয়লেট তৈরি করা হবে। সড়কে পর্যাপ্ত লাইট দেওয়া হবে। স্বল্প খরচে মানসম্মত শিক্ষার বিকাশে মনোযোগ থাকবে। স্থাস্থ্য সেবাকে ডিজিটাল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে। সব সেবাকে ওয়ানস্টপ ডিজিটাল সার্ভারের আওতায় আনা হবে। প্রতিটি ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সমন্বয়ে অপরাধ নির্মূল কমিটি গঠন করা হবে। সাইবার দূষণ ও আসক্তি নির্মূলে কাজ করবো। প্রতিটি ওয়ার্ডে মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থান গড়ে তোলা হবে। মেয়েদের জন্য আলাদা পাবলিক পরিবহনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দুস্থ ও বিশেষ চাহিদার নাগরিক ও শিশুদের বাড়তি যত্ন ও মেধাবিকাশে মনোযোগ দিবো। প্রতিটি ওয়ার্ডে ইন্টারনেট শিক্ষাকেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নিবো। সরকারি জমি লিজ দিয়ে আধুনিক ইকোপার্ক, থিমপার্ক, শিশু পার্ক গড়ে তোলা হবে। রাত ১০ টার পর মাইক ব্যবহার ও শব্দ দূষণ বন্ধ করার উদোগ নিবো। ডিজিটাল পাঠাগার কমপ্লেক্স করা হবে। পাহাড় কাটা বন্ধে কঠোর মনিটরিং করা হবে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হবে। মাদকের আখড়া গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। কিশোর গ্যাং বন্ধ করা হবে।
নাগরিক তথ্য সেবাসহ সব সেবা কেন্দ্রীয় সার্ভার নেটওয়ার্ক আওতায় আনা হবে। ব্যক্তিগত স্বার্থের চেয়ে সমষ্টিগত স্বার্থে জোর দেওয়া হবে।
ইশতেহার ঘোষণাকালে তিনি বলেন, অঙ্গীকারে স্বপ্নের কাচ্চি বিরিয়ানি নয়, নগরের বিপুল জনগোষ্ঠীকে ন্যূনতম সেবা দিতে পারাটাই আসল যোগ্যতা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অনুপম সেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম, সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।