কুড়িগ্রাম ও শ্রীমঙ্গল অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এ ছাড়া শৈত্যপ্রবাহ বিস্তার লাভ করতে পারে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে।
শনিবার(৩০জানুয়ারি) আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে এই তথ্য জানিয়েছে।
আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এই কারণে দেশের আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা এবং সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে।
মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে নদী-অববাহিকার কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়েছে, সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে।
২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রাঙ্গামাটি ও টেকনাফে ২৯ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সর্বনিম্ন শ্রীমঙ্গলে ৯ দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম থেকে নয়ন দাস জানান: পৌষের মাঝামাঝি থেকে শীতের প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে এখানে। দিনের বেলা সূর্যের তাপে তেমন শীত অনুভূত না হলেও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথেই ঠাণ্ডার তীব্রতা বাড়তে শুরু করে। রাত যতই গভীর হয় ঠাণ্ডার ততই বাড়তে থাকে। এ অবস্থা চলে পরের দিন সূর্যোদয় পর্যন্ত।তীব্র শীত ও কনকনে বাতাসে দুর্ভোগে পড়েছে মানুষ। গত দুই দিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। এক সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা চলছে। মাঝে দু-এক দিন হঠাৎ সূর্যের দেখা মিললেও একটু পরই তা মিলিয়ে যায়। সারা দিন ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকে চারদিক। এ অবস্থায় ব্যাহত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
টানা শৈত্য প্রবাহে চরম দুর্ভোগে পড়েছে জেলার মানুষের জনজীবন। প্রচন্ড শীত আর ঘন কুয়াশায় স্থবির হয়ে পড়েছে এ জনপদ। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না মানুষ। সন্ধ্যার পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দোকান পাঠ। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে পাঁচ শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের মানুষসহ নিম্নবিত্ত, দিনমুজুর, ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষ। শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।
২৯ জানুয়ারি সকাল ৬টায় এ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফেব্রুয়ারি মাসে আরও দুটি শৈত্য প্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে রাজারহাট আবহাওয়া অফিস।
দিনে সামান্য কিছু সময় সূর্যের দেখা মিললেও অধিকাংশ সময় মিলছে না সূর্যের দেখা। দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে যানবাহন। প্রয়োজন ছাড়া লোকজন বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না। রাস্তা-ঘাট ও বাজারে কমেছে লোকজনের আনাগোনা।
খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন অনেকেই। এ কনকনে ঠাণ্ডায় গরম কাপড়ের অভাবে দুর্ভোগ বেড়েছে হতদরিদ্র পারিবারের শিশু ও বৃদ্ধদের। অন্যদিকে টানা শীতে জেলার হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে।
যাত্রাপুর এলাকার ঘোড়ার গাড়িচালক আয়নাল মিয়া বলেন, অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় ঘোড়াগুলো দৌঁড়াতে পারছে না। আমারও প্রচুর ঠাণ্ডা লাগছে। কিন্তু কী করবো? মালামাল পরিবহন না করলে না খেয়ে থাকতে হবে।
কুড়িগ্রাম শহরের ভ্যানচালক জব্বার আলী নয়ন দাসকে জানান, কয়েক দিন থেকে প্রচুর ঠাণ্ডা যাচ্ছে। শীতের কাপড় পরেছি। তবুও ভ্যান চালালে সেই কাপড় ভেদ করে ঠাণ্ডা বাতাস লাগছে। শৈত্য প্রবাহে খুবই কষ্ট হচ্ছে।
ভোগডাঙ্গা এলাকার খড়ি বিক্রেতা দুলাল মিয়া নয়ন দাসকে বলেন, আমি গরিব মানুষ। একদিন খড়ি বিক্রি করতে না পারলে পেটে ভাত যায় না। শীতবস্ত্র কেনারও সামর্থ্য নেই। তাই হালকা কাপড়েই বেরিয়ে পড়েছি খড়ি বিক্রি করতে। খুবই ঠাণ্ডা লাগছে।
রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, শুক্রবার কুড়িগ্রামের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এতে জেলাজুড়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ চলমান রয়েছে। এছাড়া ফেব্রুয়ারি মাসে আরও দুটি শৈত্য প্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে।