সমস্যা শব্দটা তাঁর অভিধানে নেই। জীবনের না পাওয়ার হিসাবটা দাঁড়িপাল্লায় ফেলে মাপেন না। বরং যা কিছু অধরা তাকেই আঁকড়ে ধরার বাসনা তীব্র। শারীরিক অক্ষমতা লক্ষ্য জয়ের পথে বাধা হয়নি। নিজের খামতিগুলোকেই হাতিয়ার করে লড়েছেন পারিপার্শ্বিক প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে। তাই নিজেকে প্রতিবন্ধী ভাবতে রাজি নন এই তেজস্বিনী। বাধার সঙ্গে লড়াই করাই তাঁর নেশা। জেসিকা কক্স। জন্ম থেকেই দু’হাত নেই। তাও জয় করেছেন আকাশ। জেসিকাই বিশ্বের একমাত্র মহিলা পাইলট যিনি পা দিয়েই বিমান ওড়াতে পারেন। সিঙ্গল ইঞ্জিন এয়ারপ্লেনের পাশাপাশি যুদ্ধবিমান ওড়াতেও দক্ষ। তাইকোন্ডা চ্যাম্পিয়ন, পুরস্কারপ্রাপ্ত স্কুবা ডাইভার, জেসিকা এক বিস্ময়কন্যা।
জন্মের পরে চমকে উঠেছিলেন মা, শিশুর দুটো হাতই যে নেই! ১৯৮৩ সালে অ্যারিজোনায় জন্ম। প্রসবের পরেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা ইনেজ। ফুটফুটে মেয়ের দুই হাতই নেই। কাঁধের পর থেকে একরাশ শূন্যতা। কী হবে! প্রতিবন্ধী হয়ে অন্যের দয়ার পাত্রী হয়ে উঠবে কি তাঁদের আদরের কন্যা! ভাবনায় রাশ টানেন ইনেজ। এক অঙ্গের খামতি অন্য অঙ্গের শক্তি দিয়ে জয় করার সাহস যোগান মেয়েকে। ভর্তি করেন সাধারণ স্কুলেই। পড়াশোনা, খেলাধূলার মাঝে কিশোরীবেলা থেকেই জেসিকা শিখে যায় সাফল্যের পথ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু গতেবাঁধা পথে এগোয় না, ব্যতিক্রমী হয়েও যুদ্ধ জিতে নেওয়া যায়। আর সে হল সেই ব্যতিক্রমী সত্ত্বা।
নিজের ব্লগে জেসিকা বলেছেন, “ছোটবেলায় দেখতাম আমাকে একটু বেশি স্নেহ দেওয়ার চেষ্টা করতেন লোকজন। আমার নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করতেন চারপাশের মানুষ। কিন্তু মা শিখিয়েছিলেন অন্যের সাহায্য না নিয়েই পথ চলতে।” ঠাট্টা, বিদ্রুপও যে সইতে হয়নি এমনটা নয়। তবে তাতে শিশুমন কখনও বিচলতি হয়নি। দুর্বলতাকে জয় করার শক্তি জেসিকা মুঠোবন্দি করেছিল তার কিশোরীবেলাতেই।
প্রস্থেটিক হাত ফেলে দিয়েই শিখলেন স্কুবা ডাইভিং, তাইকোন্ডাতে পেলেন ব্ল্যাক বেল্ট
বয়স তখন ১৪ বছর। জেসিকা বুঝলেন কৃত্রিম হাত তাঁর আত্মবিশ্বাসে ফাটল ধরাচ্ছে। প্রস্থেটিক হাত ফেলে দিয়ে নিজের দু’পায়ের উপর ভরসা করলেন বেশি। নিজেকে গড়ে তুললেন এমনভাবে যে, হাত দিয়ে যে কাজ হয় তার সবই করা যাবে দুই পা দিয়েও। জেসিকা জানিয়েছেন, ছোট থেকেই শারীরিক কসরৎ করতেন। নাচ শিখেছেন, নিয়েছেন তাইকোন্ডার প্রশিক্ষণ। জাতীয় স্তরে চ্যাম্পিয়নও হন। কিবোর্ডে অসাধারণ দ্রুত গতিতে চলে তাঁর দুই পায়ের আঙুল। প্রতি মিনিটে ২৫টা শব্দ টাইপ করতে পারেন জেসিকা। সঙ্গীতেও তাঁর রুচি। শিখেছেন মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট বাজানো। পিয়ানো বাজাতে পারেন, পায়ের আঙুল দিয়েই ঝঙ্কার তোলেন গিটারে।
স্কুবা ডাইভিংয়ের নেশা ছিল ছোট থেকেই। সাঁতার শিখে নিয়েছিলেন স্কুলে পড়ার সময়েই। বাড়ির লোকজনকে লুকিয়ে অনেক সময়েই ডুব সাঁতার দিতেন। “আমার ট্রেনার প্রথমে বলেছিলেন তুমি পারবে না। স্কুবা ডাইভিং এইভাবে করা সহজ নয়। পরে আমার জেদ দেখে তিনি আর না করেননি। এখন আমি একজন দক্ষ স্কুবা ডাইভার। অনেক পুরস্কারও পেয়েছি,” বলেছেন জেসিকা।