নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে উত্তাল উত্তর-পূর্বের একাধিক রাজ্য। ইতিমধ্যেই অসম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, মণিপুরের একাধিক জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। স্তব্ধ মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা। রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। পুলিশের গুলিতে প্রাণ গিয়েছে বিক্ষোভকারীদের। এই পরিস্থিতিতে ভারতের এই অংশে বেড়াতে আসার ক্ষেত্রে পর্যটকদের সতর্ক করল আমেরিকা ও ব্রিটেন। রীতিমতো নির্দেশিকা জারি করে একথা জানিয়েছে দুই দেশ।
ব্রিটেনের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, “নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে দেখা যাচ্ছে। খবর এসেছে ভারতের উত্তর-পূর্বে, বিশেষ করে অসম ও ত্রিপুরাতে বিক্ষোভ বড় আকার নিয়েছে। গুয়াহাটিতে কার্ফু জারি করা হয়েছে ও অসমের ১০ জেলায় মোবাইল পরিষেবা বন্ধ। তাই এই এলাকায় বেড়াতে গেলে সমস্যায় পড়তে পারেন পর্যটকরা।” নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, কারও যদি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কোনও কারণে সেখানে যেতেই হয়, তাহলে যেন তিনি এই নির্দেশিকায় জানানো সব বিষয় মাথায় রাখেন ও যে যে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে তা মেনে চলেন। এছাড়াও তিনি বা তাঁরা যেন সবসময় ব্রিটেনের পর্যটন দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন।
আমেরিকার তরফে জারি করা বিবৃতিতেও প্রায় একই কথা লেখা রয়েছে। তবে তারা অসমে এই মুহূর্তে কাউকে বেড়াতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।নাগরিকত্ব আইন বিরোধী বিক্ষোভে গত কয়েকদিন ধরে অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে অসম। ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও মৃত্যুর খবর এসেছে। ১ হাজারের বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে। ৬৫ জন গ্রেফতার হয়েছে। গোলমাল থামাতে গিয়ে বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মীও আহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার অসমে পুলিশের গুলিতে তিন আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়েছে। গুয়াহাটির লাসিতনগরে গুলি চালানোয় মৃত্যু হয় দীপাজ্জ্বল দাসের। তিনি গুয়াহাটির সৈনিক ভবনের ক্যান্টিনের কর্মী। নিহত যুবকের বাড়ি অসমের ছয়গ্রামে। গুয়াহাটিরই হাতিগাঁও এলাকার শঙ্করপথে পুলিশকে লক্ষ্য করে আন্দোলনকারীরা টানা পাথর ছু়ড়তে শুরু করলে এক সময় গুলি চালায় পুলিশ। তাতে আরও এক আন্দোলনকারীর মৃত্যু হয়। তৃতীয় বার গুলি চালানো হয়েছে গুয়াহাটিরই বৈশিষ্ট্যের নতুন বাজারে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঘটনায় মৃতদের নাম-পরিচয় এখনও জানা যায়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে সিদ্ধান্ত হয়, অসমের অন্তত ১০টি জেলায় আরও ৪৮ ঘণ্টা ইন্টারনেট ও মোবাইল পরিষেবা বন্ধ রাখা হবে। গুজব রুখতে বুধবার ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তপ্ত অসমে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্ব দেওয়া হয় সেনাবাহিনীকে। গুয়াহাটির ইউনিফায়েড কমান্ডারের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একইসঙ্গে ওদালগুড়ি, শোণিতপুর, ডিব্রুগড়, ডিমহাস-সহ বেশ কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপারদের সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।