পশ্চিম আফ্রিকার নাইজার। সেখানে বাস করে যাযাবর পশুপালক উপজাতি ওডাআবে। শতাব্দীর পর শতাব্দী তারা পালন করে আসছে এক অদ্ভুত উৎসব গেরেওল। এই উৎসবে পুরুষরা যোগ দেয় পরের বউকে চুরি করার উদ্দেশ্য নিয়ে এবং যৌবনবতী পরস্ত্রীরা মুখিয়ে থাকে উৎসবে এসে পছন্দ করা পরপুরুষের সঙ্গে পালাবার জন্য। তাই এই উৎসবের অন্য নাম– বউ চুরি উৎসব।
ওডাআবে সমাজে অবাধ যৌনতার সুযোগ পান নারী, পুরুষরা। কোনও রাখঢাকের ব্যাপার নেই। গোষ্ঠীপতি শাসিত এই সমাজে একজন নারী বা পুরুষের অসংখ্য যৌনসঙ্গী থাকা স্বাভাবিক ও সমাজস্বীকৃত ঘটনা। বিয়ের আগে ওডাআবে উপজাতির মেয়েরা যার সঙ্গে ইচ্ছা শারীরিক সম্পর্ক করতে পারে। বিয়ের পরেও যতখুশি স্বামী রাখতে পারে।
ওডাআবে উপজাতির কাছে বছরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় মাস হল সেপ্টেম্বর। সারাবছর এই উপজাতির মানুষেরা ছোট ছোট পরিবার নিয়ে গড়া দলে বিভক্ত হয়ে ঘুরে বেড়ায় নাইজারের মরুভূমি অঞ্চলে। কয়েক মাস ধরে মরুভূমির মধ্যে দিয়ে হাঁটার পর যৌন স্বাধীন এই উপজাতির হাজার হাজার নারীপুরুষ বিভিন্ন জায়গায় একত্রিত হয়ে পালন করে গেরেওল উৎসব।
টানা সাতদিন সাতরাত ধরে চলে এই উৎসব। অন্যের বউ চুরির করার চিরাচরিত চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে এই উৎসবে চলে নাচগান, খানাপিনা। মরুভূমির বিভিন্ন মরুদ্যানে প্রতিবছর উৎসবটি হয়। উৎসবের স্থানগুলির নাম আগে থেকে বলা হয় না। উৎসবের কিছুদিন আগে স্থান ও দিন ঘোষণা করা হয়।
গেরেওল উৎসবের সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিস হল পুরুষদের প্রজনন নৃত্য ‘ইয়াকে’ প্রতিযোগিতা।এই প্রতিযোগিতার জন্য পুরুষরা কয়েকমাস আগে থেকে নিজেকে তৈরি করা শুরু করে। ওডাআবে উপজাতির নারী, পুরুষরা তাদের সৌন্দর্য্য নিয়ে ভীষণ গর্বিত। পুরুষরা মনে করে তারাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ। এমনকি তাদের রুপচর্চায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে তাই তারা সঙ্গে আয়না নিয়ে ঘোরে। ওডাআবে পুরুষরা বিশ্বাস করে তাদের সৌন্দর্য্য নির্ভর করে চোখের সাদা ভাব, টিকোলো নাক আর ঝকঝকে সাদা দাঁতের উপরে। প্রতিযোগিতায় নামার আগে এগুলোর সৌন্দর্য্য বাড়াবার চেষ্টা করে।
লম্বা ও অ্যাথলিটের মতো চেহারার ওডাআবে পুরুষরা প্রতিযোগিতা শুরুর আগে প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে সাজে। লাল মাটি দিয়ে তৈরি করা রঙ মুখে মাখে, নিজেদের তৈরি করা আই-লাইনার লাগায় চোখকে সাদা দেখাবার জন্য। লিপস্টিকও ব্যবহার করে দাঁতকে ঝকঝকে সাদা দেখাতে। নিজেকে আরও লম্বা দেখাতে উটপাখির পালক গাঁথে মাথার চুলে।
পুরুষরা এমনভাবে যত্ন করে নিজেকে সাজায় ঠিক যেন কোনও সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নামতে যাচ্ছে। এসবের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু পরস্ত্রীর নজর কাড়া। মজার ব্যাপার হল, সাজার পর প্রত্যেক পুরুষকে একইরকম দেখতে লাগে। কালো, হলুদ, সাদা রঙ দিয়ে অলঙ্করণ করা একই ধরনের সরু মুখ, বড় বড় চোখ। রোমানদের মতো খাড়া নাক, যার তীক্ষ্ণতা বাড়ানো হয় সাদা লাইন টেনে। পুঁতি ও কড়ি দিয়ে গাঁথা বিনুনি। বোঝা যায় না পুরুষটি কোন দলের। তাই পুরুষদের একে অপরকে টেক্কা মারতে হয় যৌন আবেদন দিয়ে।
বাদ্যযন্ত্রের উদ্দাম তালে তাল মিলিয়ে দলবেঁধে পুরুষেরা বৃত্তাকারে ‘ইয়াকে’ নাচতে শুরু করে। নৃত্যরত অবস্থাতেই বিভিন্ন যৌনভঙ্গিমা প্রদর্শন করে। যেমন করে পুরুষ ময়ূর পেখম মেলে যৌনসঙ্গীকে আমন্ত্রণ করে, ঠিক সেরকম ভাবেই হাজার হাজার পরস্ত্রীর সামনে প্রত্যেক পুরুষ নৃত্যের মাধ্যমে পরস্ত্রীকে বোঝাতে চেষ্টা করে যৌনসঙ্গী হিসেবে সেই শ্রেষ্ঠ। এই নৃত্যের সময় পুরুষরা তাদের দাঁত ইচ্ছে করে বের করে রাখে। যাতে তাদের আক্রমণাত্মক ও অত্যন্ত উত্তেজিত দেখায়।
উপজাতির সেরা তিন সুন্দরী পরস্ত্রীকে প্রতিযোগিতায় বিচারকের ভূমিকা পালন করতে হয়। বিচারকেরা তাদের চোখে সেরা পুরুষ বেছে নেয়। বিচারকদের রায়ে যৌন আবেদনের দিক থেকে সেরা তিন পুরুষ সমবেত পরস্ত্রীদের মধ্যে থেকে বেছে নিতে পারে তার পছন্দ সই নারী, এমনকি বিচারকদের মধ্যে থেকে কাউকেও। ওডাআবে সমাজ সেটাকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দেয়।
তিনজন পুরুষ না হয় পছন্দের নারী পেলেন,কিন্তু বাকিরা? না। বাকিরা প্রতিযোগিতা জিততে না পেরে একটু হতাশ হন না। কারন প্রতিযোগিতাগুলির পরেই হয় আসল বউ চুরি উৎসব। নাচতে নাচতে পুরুষরা তাদের চারধারে ভীড় করে থাকা পরস্ত্রীদের দিকে অর্থপূর্ণ যৌন ইঙ্গিত করেন। পুরুষদের ইঙ্গিতে সবার অলক্ষে সাড়া দেন বিভিন্ন পরস্ত্রীরা। তাদের মধ্যে থেকে পছন্দের পরস্ত্রীকে নজরে রাখে পুরুষরা।
প্রতিযোগিতার শেষে ভিড়ের সুযোগে পছন্দ করা পরস্ত্রীর কাঁধে টোকা মারে পুরুষ। রাতের অন্ধাকারে পরপুরুষের সঙ্গে মেলায় হারিয়ে যায় পরস্ত্রী। সব পুরুষকেই একই রকম দেখতে লাগায় ‘বউ চোর’ পুরুষ সহজে ধরা পড়ে না। এই উৎসবে কেউ যদি ধরা না পড়ে সফলভাবে পরের বউকে চুরি করে নিতে পারে এবং তাহলে সেই নারীটির দ্বিতীয় স্বামী হিসেবে ‘বউ চোর’ পুরুষটিকে স্বীকৃতি দেয় গোষ্ঠীপতিরা। বউ চুরি উৎসবের সুযোগে, দেখতে খারাপ স্বামীর সুন্দরী স্ত্রী বা যৌনমিলনে অসুখী স্ত্রীরা স্বামীকে পাল্টে নেয়।
রাতের অন্ধকারে মরুভূমির বালিতে বা ঝোপের ভেতর চলে নতুন জুটিদের উদ্দাম যৌনমিলন। কেউ বাধা দেয় না। কেউ বিরক্ত করেনা। তৃপ্ত নারীরা ভোর হওয়ার আগেই স্বামী, ছেলেমেয়ে ও দল ছেড়ে পালিয়ে যায় পরপুরুষদের সঙ্গে। নারীদের ছেলেমেয়েদের লালন পালন করে বউয়ের বাবা, মা ও গোষ্ঠী। আর বউ পালানো বর শপথ নেয়, আগামী বছরের গেরেওল উৎসবে পরের বউকে চুরি করবেই করবে। ততদিন তাকে প্রেমিকা আর পরস্ত্রীদের নিয়ে চালিয়ে নিতে হবে এই আরকি!