Home আন্তর্জাতিক কাতারে বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে ১০১৮ বাংলাদেশির মৃত্যু

কাতারে বিশ্বকাপ প্রস্তুতিতে ১০১৮ বাংলাদেশির মৃত্যু

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হয় দশ বছর আগে । এরপর থেকেই দেশটি বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে দশ বছরে ১ হাজারের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে দেশটিতে। এই সময়ে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশ (ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কা) থেকে মারা গেছেন সাড়ে ছয় হাজারের বেশি প্রবাসী শ্রমিক।

মঙ্গলবার (২৩ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান দেশগুলোর শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার বিভিন্ন সংগঠন এবং দূতাবাস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে জানিয়েছে, ২০১০ সালের ডিসেম্বরের যে রাতে কাতার আয়োজক দেশ হওয়ার স্বীকৃতি পায় তার পর থেকে ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে গড়ে ১২ জন প্রবাসী শ্রমিক মারা গেছেন। মৃতরা এই পাঁচটি দেশের নাগরিক।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক দশক ধরে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে। এতে মোট ৫ হাজার ৯২৭ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। অপরদিকে কাতারে থাকা পাকিস্তান দূতাবাস জানিয়েছে গেল এক দশকে ৮২৪ পাকিস্তানি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে সেখানে। আর বাংলাদেশের মারা গেছে ১০১৮ জন।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে শ্রমিকের মৃত্যুর সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে শুধু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর হিসেবই দেয়া হয়েছে। তবে সেখানে ফিলিপাইন ও কেনিয়াসহ বিশ্বের আরো অনেক দরিদ্র দেশ থেকে মানুষ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যায়। আবার এই হিসেবে গেল বছরের শেষ দিকে মৃত্যুর সংখ্যা যুক্ত করা হয়নি।

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ১০ বছর আগে কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষিত হয়। এরপর থেকেই দেশটি বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। তৈরি হয় অসংখ্য ভবন। সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতেও স্থাপিত হয় নানা স্থাপনা। ফুটবলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত স্থাপনাও রয়েছে এরমধ্যে। তৈরি হয়েছে ৭টি ফুটবল স্টেডিয়াম। এছাড়া নতুন বিমানবন্দর, রাস্তা, গণ-পরিবহণ, হোটেল ও নতুন একটি শহরও তৈরি করা হয়েছে। সবই বিশ্বকাপকে সামনে রেখে।

ফেয়ার স্কোয়ার প্রজেক্টের পরিচালক নিক ম্যাকগিহান বলেন, কাতারে শ্রমিকরা কোন সেক্টরে কাজ করছেন তা নির্দিষ্ট করে তালিকাভুক্ত করা হয় না। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বকাপ সম্পর্কিত অবকাঠামো প্রকল্পগুলোতে কাজ করতে গিয়েই এই বিশাল সংখ্যক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, ২০১১ সালের পর কাতারে অভিবাসী শ্রমিক মৃত্যুর হার বেড়ে গেছে কারণ দেশটি বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ পেয়েছে।

গার্ডিয়ানের তথ্য বলছে, ভারতীয়, নেপালি ও বাংলাদেশী শ্রমিকদের মধ্যে ৬৯% মৃত্যুর ঘটনাকে প্রাকৃতিক হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একক হিসেবে ভারতীয়দের ক্ষেত্রে সেই সংখ্যা ৮০%।

গার্ডিয়ান এর আগে জানিয়েছিল, এই ধরনের তালিকা সাধারণত ময়নাতদন্ত ছাড়াই তৈরি করা হয়, প্রায়শই এই মৃত্যুর অন্তর্নিহিত কারণগুলোর জন্য বৈধ চিকিৎসার ব্যাখ্যা দিতেও ব্যর্থ হয়।

২০১৯ সালে দেখা গেছে যে, কাতারের তীব্র গ্রীষ্মের উত্তাপ অনেক শ্রমিকের মৃত্যুর ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হতে পারে। গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা দ্বারা চালিত গবেষণায় দেখা যায়, বছরে কমপক্ষে চার মাস ধরে কর্মীরা বাইরে কাজ করার সময় প্রচণ্ড তাপ ও চাপের সম্মুখিন হন।

২০১৪ সালে কাতার সরকারের নিজস্ব আইনজীবীদের একটি প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছিল যে, এটি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট (হার্ট অ্যাটাক) থেকে অভিবাসী শ্রমিকদের মৃত্যুর বিষয়ে একটি গবেষণা কমিশন গঠন করা দরকার এবং আইনটিকে ‘অপ্রত্যাশিত বা আকস্মিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে ‘ময়নাতদন্তের অনুমতি দেওয়ার’ জন্য তা সংশোধন করার পরামর্শ দেয়। কিন্তু সরকার কিছুই করেনি।

কাতারের সরকার বলেছে, মৃত্যুর সংখ্যা- যা নিয়ে বিতর্ক করা ঠিক না। কারণ প্রবাসী শ্রমশক্তির আকারের সাথে এটা সমানুপাতিক এবং এই পরিসংখ্যানগুলোতে হোয়াইট-কলার কর্মীরাও (কায়িক শ্রমের কাজে নিযুক্ত নয় এমন) রয়েছেন যারা বহু বছর ধরে কাতারে থাকার পরে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছেন।

কাতারি সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই সম্প্রদায়ের মধ্যে মৃত্যুর হার জনসংখ্যার আকার এবং জনসংখ্যার জন্য প্রত্যাশিত সীমার মধ্যে। যাইহোক, প্রতিটি হারানো জীবন ট্র্যাজেডির এবং আমাদের দেশে প্রতিটা মৃত্যু রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

ওই কর্মকর্তা আরও যোগ করেছেন যে, সমস্ত নাগরিক এবং বিদেশি নাগরিকদের বিনামূল্যে প্রথম শ্রেণির স্বাস্থ্যসেবার অ্যাক্সেস রয়েছে এবং শ্রম ব্যবস্থায় স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা সংস্কারের কারণে গত এক দশক ধরে ‘অতিথি কর্মীদের’ মধ্যে মৃত্যুর হার ক্রমাগত হ্রাস পেয়েছে।

বাংলাদেশি, ভারতীয় ও নেপালিদের মধ্যে মৃত্যুর অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কারণ হল সড়ক দুর্ঘটনা (১২%), কর্মক্ষেত্রের দুর্ঘটনা (৭%) এবং আত্মহত্যা (৭%)।

কোভিড-সম্পর্কিত মৃত্যু, যা কাতারে এখনো অত্যন্ত কম রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশটিতে মাত্র আড়াইশ’র বেশি প্রাণহানি হয়েছে।