হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহি মাটির ঘর। আধুনিকতার উৎকর্ষতায় আর কালের আবর্তে গরীবের এসি খ্যাত সেই মাটির বাড়ি এখন নেই বললেই চলে।
সরেজমিনে আত্রাই উপজেলার কিছু গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে গ্রাম বাংলার চির চেনা মাটির ঘর এখন আর নেই বললেই চলে। উপজেলার পতিসর, মনোয়ারী,কয়েড়া, বাঁকা,পালশা, কচুয়া,কাশিয়াবাড়ী, পাঁচুপুর,জয়সাড়া,পৈঁসাওতা, শিমুলকুচি, ইসলামগাঁথী, জগদাশ, মালিপুকুর, শিকারপুর,ভূপাড়া, মহাদীঘি,বেওলা, সাহাগোলা, মির্জাপুর, দীঘা, সিংসাড়া, ব্রজপুর, রসুলপুর, পাইকাড়া, মারিয়া, বান্দাইখাড়া, দমদমা, নওদাপাড়া, মিরাপুর, কালিকাপুর, দাঁড়িয়াগাথী, ঘোষপাড়া উপজেলার গ্রাম গুলোর বেশি পরিমান মাটির ঘর ভেঙ্গে ফেলে নতুন করে মটির ঘড় নির্মাণ করা হচ্ছে। একাধিক এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা হলে তাঁরা জানান, মাটির ঘড়ে বসবাস করার অনেক শান্তি শীত ও গরম উভয় মৌসুমে আরামদায়ক এ ঘর।
প্রাচীনকাল থেকে গ্রাম বাংলায় মাটির ঘরের প্রচলন ছিল। এঁটেল মাটি দিয়ে তৈরি করা হতো এসব ঘর। মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে কাদায় পরিণত করে সেই কাদা ২০-৩০ ইঞ্চি চওড়া করে দেয়াল তৈরি করা হয়। এ দেয়াল তৈরি করতে বেশ সময় লাগে, কারণ একসাথে বেশি উঁচু করে তৈরি করা যায় না।
প্রতিবার এক দেড় ফুট উঁচু করে দেয়াল তৈরি করা হয়। কয়েকদিন পর শুকিয়ে গেলে আবার তার উপর একই উচ্চতার দেয়াল তৈরি করা হয়। এভাবে দেয়াল ১০-১২ ফুট উঁচু হলে বেশ কিছুদিন ধরে রোদে শুকানো হয়। তারপর এই দেয়ালের ওপর বাঁশের চাল তৈরি করে খড় বা টিন দিয়ে ছাউনি দেয়া হয়।
একটি মাটির ঘর তৈরি করতে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত সময় লাগে। মাটির ঘর শীত গরম উভয় মৌসুমে বেশ আরামদায়ক। তবে বন্যা, ভূমিকম্প বা প্রবল ঝড় না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। অনেক সময় মাটির ঘর দোতলা পর্যন্ত করা হয়। এ সমস্ত ঘর বেশি বড় হয়না।
গৃহিনীরা তাদের নরম হাতের কোমল ছোঁয়ায় নিপুনভাবে কাদা দিয়ে লেপে মাটির ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করত। এখন আর সেই মাটির ঘর চোখে পড়ে না বললেই চলে। তবে এখনো বাপ-দাদার স্মৃতি ধরে রাখতে অনেকেই খরচ করে দু’একটা মাটির ঘর টিকিয়ে রেখেছে। বর্তমানে মাটির ঘরের স্থান দখল করে নিয়েছে ইট, সিমেন্ট, বালি ও রডের তৈরি পাকা ঘরগুলো।
মাটির ঘরগুলো বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিশেষ ক্ষতি সাধন হয়, বলেই মানুষ ইট সিমেন্টের ঘর-বাড়ি নির্মাণ করছে। তাছাড়া গ্রামের মানুষ আগের তুলনায় এখন অনেক আধুনিক৷ প্রতি বছর মাটির ঘরে খরচ না করে একবারে বেশি খরচ হলেও পাকা ঘর-বাড়িই নির্মাণ করছে। বর্তমানে মাটির ঘরের সংখ্যা কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কাছাকাছিতে ঠেকেছে।
এভাবে চলতে থাকলে মাটির ঘরের কথা দিনে দিনে হয়তো মানুষের মন থেকে হারিয়ে যাবে, আগামী প্রজন্মের মানুষের কাছে মাটির ঘর রূপকথার গল্প হয়ে টিকে থাকবে।