Home First Lead ভয়ঙ্কর হত্যালীলা চলছে মিয়ানমারে

ভয়ঙ্কর হত্যালীলা চলছে মিয়ানমারে

সেনার সামনে নত সন্ন্যাসিনী

আমাকে গুলি করো, সন্তানদের ছেড়ে দাও

মিয়ানমারে সশস্ত্র সেনার সামনে মঙ্গলবার মাথা নুইয়েছেন এক সন্ন্যাসিনী। দু’হাত ছড়িয়ে ধুলোয় হাঁটু মুড়ে বসে বলছেন, “আমাকে গুলি করো। কিন্তু আমার সন্তানদের ছেড়ে দাও।” সন্ন্যাসিনীর কাতর অনুরোধকে সম্মান জানিয়ে মিনিট খানেকের স্তব্ধতা। তারপরেই তাঁর পিছনের বিক্ষোভকারীদের নিশানা করে ঝঁঝরা করে দেয় সেনাবাহিনী। সন্ন্যাসিনীর চোখের সামনেই খুলি উড়িয়ে দেওয়া হয় কয়েকজনের।

অশান্ত মায়ানমারের আরও এক ভয়ঙ্কর ছবি উঠে এসেছে। একজন বয়স্কা নানের সামনে সেনাবাহিনীর এমন নৃশংস আচরণের তীব্র নিন্দা শুরু হয়েছে বিশ্বজুড়ে।

এখন আর বিক্ষোভকারীদের মিছিল থামানোর চেষ্টা করে না সেনা –পুলিশের বাহিনী। প্রতিবাদের স্লোগান উঠলেই সরাসরি গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হচ্ছে। শহরে শহরে কার্ফু। বিক্ষোভকারীদের জমায়েত দেখলেই কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটানো হচ্ছে। নির্বিচারে গুলি চালাচ্ছে মায়ানমারের সশস্ত্র সেনা। মৃত্যুমিছিল শুরু হয়ে গেছে। এখনও অবধি ৫৪ জন বিক্ষোভকারীকে খুন করা হয়েছে। জখম শতাধিক।

3 Protesters Killed As Myanmar Workers Go On Strike

সোমবার সারা রাত বিক্ষোভকারীদের আটক করে রাখা হয়েছিল ইয়াঙ্গুন শহরে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে মহিলাদের মিছিল আটকাতেও সংযম দেখায়নি মায়ানমারের সেনা। মারধর, এলোপাথাড়ি গুলি চলে। আটকে রাখা হয় অনেক মহিলাকে।

তাঁদের মুক্তির দাবিতে পথে নামেন ক্যাথোলিক চার্চের সন্ন্যাসিনীরা। নান অ্যান রোজ় সরাসরি সেনাবাহিনীর সামনে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের প্রাণভিক্ষা করেন। হাঁটু মুড়ে বসে বলেন, “গুলি করতে হয় আমাকে করো, আমার সন্তানদের অত্যাচার করা বন্ধ করো।” দুজন সেনাকে জোড়হাতে নানের সামনে বসে পড়তেও দেখা যায়। তাঁরা সন্ন্যাসিনী অ্যানকে সেই জায়গা থেকে চলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কয়েক মিনিটের জন্য গুলি চালানো বন্ধ হয়। কিন্তু তার পরে ফের হিংস্র হয়ে উঠতে দেখা যায় সেনাবাহিনীকে। নানের সামনেই কয়েকজন বিক্ষোভকারীর মাথায় গুলি করে খুলি উড়িয়ে দেওয়া হয়। সন্ন্যাসিনীকে আড়াল করে তাঁর পিছনে থাকা বিক্ষোভকারীদের গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিতে থাকে সেনা।

Stop Murdering Protesters: UN Tells Myanmar Military

রক্ত ঝরছে একাধিক শহরে। পথে নেমেছেন ডাক্তার, শিক্ষক, বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও। সরকারি কর্মীরা গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই অসহযোগ আন্দোলন চালাচ্ছেন। গণতন্ত্রকামী বিক্ষোভকারীদের দাবি, সেনার অভ্যুত্থান নয়, গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাই লক্ষ্য মায়ানমারের। সেনার অত্যাচার থেকে মুক্তি চায় সাধারণ মানুষ। দেশের এনএলডি নেত্রী তথা স্টেট কাউন্সিলর আউং সান সু চি-সহ আটক নেতানেত্রীদের মুক্তি চেয়েও পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষজন।

Myanmar coup: Protesters defy military warning in mass strike - BBC News

শহরে শহরে চলছে বিক্ষোভ-আন্দোলন। রাজধানী নেপিদো এবং অন্য বড় শহরগুলি এই মুহূর্তে সেনার দখলে। রাস্তায় টহল দিচ্ছে বিশাল বাহিনী। ইন্টারনেট ও টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থাও সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অহিংস পথে শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবের ছবিটা সম্পূর্ণ বিপরীত। বিক্ষোভকারীদের থামাতে যথেচ্ছভাবে জলকামান চালাতে দেখা গেছে সেনাবাহিনীকে। বলপ্রয়োগ করেছে সেনা-পুলিশ। সেনা-অভ্যুত্থানের বিরোধী আন্দোলন চলছে প্রায় চার সপ্তাহ ধরে। বিক্ষোভের আঁচ এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। রাজপথ দিনে দিনে রণক্ষেত্রের চেহারা নিচ্ছে। এখনও অবধি প্রতিবাদের যে সমস্ত ছবি ও ভিডিও সামনে এসেছে তাতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়াতে দেখা গিয়েছে আন্দোলনকারীদের। ইতিমধ্যেই সাতজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের হয়েছে। দেশের সাইবার নিরাপত্তাও ভেঙে পড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য এখন সেনার হাতের মুঠোয়। বিক্ষোভকারীদের ওপর নজরদারি চালাতে নামানো হয়েছে ড্রোনও।

-বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক