বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: অবশেষে জাহাজের আউটসাইড মুভমেন্টে বেসরকারি পাইলটিং স্থগিত করা হয়েছে। শিপিং এজেন্টদের ক্ষোভের মুখে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের নৌ বিভাগ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে।
২০২০ সালের ২২ মার্চ নৌ বিভাগ বেসরকারি পাইলটিং-এর বিষয়ে স্মারক জারি করে। আর গত ৭ মার্চ তা স্থগিত করা হয়েছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে।
বেসরকারি পাইলটিং নিয়ে বন্দরের সার্কুলারে শিপিং এজেন্টদের মধ্যে উদ্ভুত অসন্তোষ ও ক্ষোভের প্রেক্ষিতে তা বাতিল চেয়ে ৩১ জানুয়ারি নৌ প্রতিমন্ত্রী বরাবরে শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ ইকবাল আলী একটি পত্র দেন।
এতে উল্লেখ করা হয়, জাহাজের আউটসাইড মুভমেন্ট-এর বিষয়টি বন্দরের নিরাপত্তা এবং বহির্বিশ্বে বন্দরের সুনামের সাথে সংশ্লিষ্ট। এমন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে শিপিং এজেন্টদের সাথে কোনরূপ আলোচনা না করে সেটা প্রতিপালনের দায়িত্ব ‘নেভিগেশনাল ফ্যাসিলিটেটরস’ নামে ৫টি নামসর্বস্ব, অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানের ওপর দিচ্ছে। মেরিন বিভাগের সার্কুলারটি নিয়ে শিপিং এজেন্টদের তীব্র আপত্তি রয়েছে। পত্রে বলা হয়, বাস্তবসম্মতভাবে বন্দরেরে নিরাপত্তা ও গতিশীলতার জন্য যে কোন উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এসোসিয়েশন। কিন্তু এটাকে নয়। ঐ উদ্যোগ পাইলটিংয়ের জন্য একটি নতুন সিন্ডিকেট তৈরি করবে। যা বিদেশি প্রিন্সিপ্যালের কাছে শিপিং এজেন্টদের ভাবমূর্তির সংকট তৈরি করবে। সেই সঙ্গে শিপিং এজেন্টদের জন্য ব্যবসায়ীক বিপর্যয় ডেকে আনবে।
এরআগে, বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শফিকুল আলম জুয়েল বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ সংক্রান্ত সার্কুলারটি স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে পত্র দেন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন যে সংগঠনের ৮ সদস্য প্রতিষ্ঠান লিখিতভাবে আপত্তি জানিয়েছে এবং ৫৮ সদস্য যৌথভাবে আপত্তি জানিয়েছে বেসরকারি পাইলটিং নিয়ে।
বে পাইলটিং-এর বিষয়টি বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন ( বিএসএএ )’র আসন্ন নির্বাচনে অন্যতম ইস্যুতে পরিণত হয়। সম্মিলিত পরিষদ শুরু থেকে বেসরকারি পাইলটিং-এর বিপক্ষে কঠোর অবস্থানে। অপর গ্রুপের দলনেতা শাহেদ সরওয়ার বিজনেসটুডে২৪ কে জানান,‘ ৮/১০ টি শিপিং এজেন্ট সংশ্লিষ্ট জাহাজের আউটসাইড মুভমেন্টের সাথে। ২০১৯ সালের শেষদিকে যখন বে পাইলটিংয়ের ব্যাপারে বন্দর উদ্যোগ নেয় তখন বিএসএএ’র প্রতিনিধি হিসেবে বন্দরের সাথে বৈঠকে আহ্বান জানিয়েছিলাম ব্রেকবাল্ক জাহাজের এজেন্টদের সাথে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে। ২০২০ সালের মার্চে বন্দর সার্কুলার দিলে সাথে সাথে বিএসএএ চেয়ারম্যানকে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেছিলাম।’
যে কোন বন্দর সীমানায় জাহাজের মুভমেন্ট নিজস্ব পাইলট দিয়ে হয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা হিসেবে। চট্টগ্রামে বড় বড় জাহাজসমূহের মুভমেন্ট কুতুবদিয়া থেকে আলফা, ব্রেভো বা চার্লি নোঙর পর্যন্ত মাস্টারের তত্ত্বাবধানে হয়। যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই প্রথা। বন্দর কর্তৃপক্ষ এর পরিবর্তে তাদের সীমানায় জাহাজের আউটসাইড মুভমেন্ট নির্দিষ্ট ৫ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ করা পাইলট দিয়ে পরিচালনা বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেয়। কোথাও বেসরকারি পাইলট দিয়ে মুভমেন্ট না হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষের সেই আগ্রহে তীব্র ক্ষোভ তৈরি হয় শিপিং এজেন্টদের মধ্যে।
এদিকে, বেসরকারি বে পাইলটিং দরপত্রে অংশ নেয়া এক কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহি জানান, চলমান ব্যবস্থায় কিছু শিপিং এজেন্ট লাইসেন্স নেই এমন ব্যক্তিকে পাইলট পরিচয় দিয়ে জাহাজপ্রতি ৪ হাজার ডলার পর্যন্ত এখাতে চার্জ আদায় করে থাকে। অথচ তা ১২০০ ডলারের বেশি হওয়ার কারণ নেই যদি এক্ষেত্রে কর্ণফুলী চ্যানেলের ট্যারিফকে দৃষ্টান্ত হিসেবে ধরা হয়। আউটসাইড মুভমেন্টে নতুন ব্যবস্থায় পাইলটিং হলে শিপিং এজেন্টদের এ খাতের বিশাল বাণিজ্য হাতছাড়া হয়ে যাবে বলে তারা বিরোধিতা করেছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের উদ্যোগ স্থগিত করলেও জাহাজের আউটসাইড মুভমেন্টে পাইলটিংকে আগামীতে সিস্টেমের মধ্যে আনবে বলে তিনি আশা করেন।