বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
সাদার্ন ইউনিভার্সিটির প্রথম উপাচার্য, কলা, সমাজ বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের ডিন এবং ইসলামিক শিক্ষা বিভাগের প্রধান ইসলামী ইতিহাস ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মঈনুদ্দীন আহমদ খান আর নেই। ইন্না লিল্লাহী ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
রবিবার (২৮মার্চ ) সকাল ৯টায় নিজ বাস ভবনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর
বয়স হয়েছিলো ৯৬ বছর। বাদ যোহর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ প্রাঙণে মরহুমের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক গুণী এই শিক্ষক ও ইসলামী চিন্তাবিদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সাদার্ন ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ।
জন্ম ও পারিবারিক পরিচয়:
প্রফেসর ড. মঈনুদ্দীন আহমদ খান ১৯২৬ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম জেলার লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ঐতিহ্যমন্ডিত একটি প্রাচীন শিক্ষিত ও মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবার ডিপুটি বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ডিপুটি পরিবার ধারাবাহিকভাবে মুঘল, ব্রিটিশ, পাকিস্তান পরবর্তী বাংলাদেশ আমলের অন্যতম উচ্চশিক্ষিত পরিবার। ইতিহাস পন্ডিত ড. মঈনুদ্দীন আহমদ খান, ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ভাষা সৈনিক ফরমান উল্লাহ খান, ড. শফিক আহমেদ খান এই ডেপুটি বাড়ির ইতিহাসকে আরো উজ্জ্বল করেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ও সাবেক বিভাগীয় প্রধান ড. নিয়াজ আহমেদ খান এই পরিবারের সন্তান।
শিক্ষা জীবন ও গবেষণা:
প্রফেসর খান তাঁর পড়াশোনা শুরু করেন ২০০ বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চুনতি হাকিমিয়া কামিল(এমএ) মাদ্রাসায়। পরবর্তীতে তিনি ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামী স্টাডিজ নিয়ে স্নাতক ও ১৯৫১ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় ঈর্ষণীয় ফলাফল করায় তৎকালিন একজন স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী।
তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে শামসুল উলামা মাওলানা বেলায়েত হোসাইন(রহ.) এর তত্বাবধানে কুরআন ও হাদিসের উপর ব্যাপক পড়াশোনা করেন। তিনি ঐ সময় ভাষায় একটি জটিল তুলনামূলক শব্দতত্ত্ব সংক্রান্ত পদ্ধতির বিকাশ ঘটান। এরপর তিনি কানাডার মন্ট্রিয়লের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুল-ব্রাইট স্কলারশিপ লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে ম্যাকগিল থেকে গবেষণাপত্রসহ তিনি আর্টিবাস ইসলামী ইতিহাসে ম্যাজিস্ট্রেটস সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন ও সমাজকর্ম:
প্রফেসর ড. মঈনুদ্দীন আহমদ খান ১৯৫৯ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা সচিবালয়ে জাতীয় পুনর্গঠন ব্যুরোতে একজন গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে তাঁর মহান কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত তিনি একটি মৌলিক গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করেন, পরে তাঁর অনুসন্ধানগুলো বাংলায় মুসলিম স্বাধীনতা সংগ্রাম নামে একটি মনোগ্রাফ আকারে প্রকাশিত হয়েছিল। যেটি ব্রিটিশ সম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ বাংলার ইতিহাস বা ইসলামিক পুনর্জাগরনের মুসলিম আল্ট্রা-অর্থোডক্স প্রতিক্রিয়া মুসলিম বিদ্রূপ হিসেবে পরিচিত; ভবিষ্যতে তাঁর অনুসন্ধানের ক্ষেত্র এবং জটিল প্রচলিত প্রথার মাধ্যমে ব্রিটিশ আমলে বাংলার ইতিহাস বিশ্লেষণ করতে আগামী প্রজন্মের গবেষকদের, কর্মীদের এবং নীতি নির্ধারকদের নতুন কল্পনার দ্বার উন্মোচন করবে।
প্রফেসর ডক্টর মঈনুদ্দীন আহমদ খান (১৯২৬-চলমান) একজন অবসরপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক এবং তিনি সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এ একজন পণ্ডিত গবেষক হিসেবে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলার মুসলিম ইতিহাসে বর্তমান সময়ের একজন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও পণ্ডিত। তিনি একাধারে ইসলামি দর্শন, ইসলামী অর্থনীতি চিন্তাবিদ এবং তিনি ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে আধুনিকতাবাদী এবং পুনর্জাগরণবাদী। এ পর্যন্ত তাঁর ১৮টির বেশি বই এবং ১০০টির মতো গবেষণাপত্র ও নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রফেসর খান ওয়েস্টার্ন একাডেমিয়া এবং ইসলামী বিশ্ব উভয় দিকে অত্যন্ত সম্মানিত বুদ্ধিজীবী ব্যক্তিত্ব। তিনি একজন শিক্ষক এবং পন্ডিত ব্যক্তি হিসাবে বিগত পাঁচ দশক ধরে চিত্তাকর্ষক একাডেমিক এবং বৌদ্ধিক রেকর্ডের সাথে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন।