| *ভাড়া নতুন নিয়মে *স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব হচ্ছে না *ভাড়া আদায় করা হচ্ছে দ্বিগুণ। * মাঠে নেমেছেন ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট
নাজমুল হোসেন
চট্টগ্রাম: করোনা মহামারি কারণে দেশে আবারও দ্রুত সংক্রমণ বাড়ায় সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে গণপরিবহনকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নতুন নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। বুধবার (৩১ মার্চ) থেকে এ নতুন নিয়ম কার্যকর হলেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।
আবার কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে। এছাড়া সাধারণ ছুটি ছাড়া সড়কে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। গাড়িতে না উঠতে পেরে শতশত যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। গাড়ি না পেয়ে অনেককে হেঁটে অফিসে যেতেও দেখা গেছে।
এদিকে, সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের নিয়মে ফিরে যেতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
বুধবার (৩১মার্চ ) সারাদিন নগরীর ইপিজেড, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, জিইসি সরেজমিনে ঘুরে গণপরিবহণের এমন চিত্র দেখাগেছে।
কাঠঘর থেকে বিআরটিসি’র একটি বাস স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই এক সিট ফাঁকা না রেখেই কাপ্তাই রাস্তার মাথার দিকে যাচ্ছিল। বাসটি ইপিজেড এসে থামলে দেখা যায়, ঘেঁষাঘেঁষি করে যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছেন। নিয়ম না মেনে কেন চলছে, জানতে চাইলে গাড়িটির সহকারি বলেন, বারবার নিষেধ করার পরও যাত্রীরা ঠেলাঠেলি করে গাড়িতে উঠছেন। আমরা কোনোভাবেই মানাতে পারছিন তাদেরকে। স্বাস্থ্যবিধি নেই আবার ভাড়াও বেশি নিচ্ছেন- এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, যাত্রীর চাপ বেশি হওয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মানা অনেকক্ষেত্রে সম্ভব হচ্ছে না। ভাড়া নতুন নিয়মেই নিচ্ছি।
যাত্রী রাফি বলেন, হঠাৎ করে গণপরিবহনে ৬০ শতাংশ যাত্রী নেওয়ার সিদ্ধান্ত আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য অনেক অসুবিধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি সকাল ৮টায় এসে টাইগারপাস থেকে ১০টা পেরিয়ে গেলেও কোনো বাসে উঠতে পারিনি। পরে এক পুলিশের সহায়তায় বিআরটিসি বাসে উঠলাম। গাড়িতে বসা দূরের কথা দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। কোনো ছুটি ছাড়া এমন নিয়মে আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে।
হাবিব নামে এক যাত্রী বলেন, ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে দিলে আমার আসে ১৬ টাকা। স্বাভাবিক ভাড়া ১০ টাকা। তবে, তারা নিয়েছে ২৫ টাকা, যা দিগুণের চেয়ে বেশি। কোনো নিয়ম নেই গণপরিবহনে।
৬৫ বছর বয়সী হোসেন নামের এক বৃদ্ধ অন্যান্য যাত্রীর মতো ঝুলে মুরাদপুর যাচ্ছেন। তিনি বলেন, সল্টগোলা ক্রসিংএ দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছি। কোনো গাড়ি পায়নি, শেষে ভিড়ের মধ্যে বিআরটিসিতে উঠেছি সিড়ির পাশে দাঁড়িয়ে যাছি। কি করবো! আজ হাজার হাজার যাত্রী গাড়ি পাচ্ছে না!
জামালখান মোড়ে সকাল ১০ টায় অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। টমটম, টেম্পুতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করছে।
সালাহ্ উদ্দিন নামে একজন বলেছেন, ‘করোনা কালীন পরিস্থিতির জন্য ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করেছে সরকার। কিন্তু সকাল না হতেই ভাড়া ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি হয়ে গেল। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যথাযথ ব্যবস্থা নিলে জনদুর্ভোগ লাঘব হবে।’
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, সাধারণ ছুটি ঘোষণা না করে গণপরিবহনে এমন সিদ্ধান্ত যাত্রীদের ভোগান্তি ছাড়া আর কিছু নয়। ৫০ শতাংশ যাত্রী বাসে গেলে বাকি ৫০ শতাংশ যাত্রী কিভাবে যাতায়াত করবে? গাড়ি সংখ্যা কি বেড়েছে? সবারই তো অফিসে যেতে হবে, কাজে যেতে হবে। এ বিষয়ে গতকালও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি।
সরকারের ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া ছাড়াও যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আছে এমন প্রশ্নের উত্তরে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেন, ভাড়া তো আগে থেকে বাড়িয়ে নিচ্ছে অনেক গাড়ি। ৬০ শতাংশ বেশি ভাড়া নানাভাবে নিয়েছে প্রতিনিয়ত। এখন সরকার যে নতুন ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সেটা আরও বেশি পড়বে। সাধারণ ছুটি না দিয়ে গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে চলাচল করার সিদ্ধান্তকে প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখন সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পড়ছে যাত্রীরা। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ১০০ ভাগ যাত্রী নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ডিসি স্টাফ অফিসার ওমর ফারুক বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, আজ থেকে সরকারের নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী গণপরিবহনে অর্ধেক যাত্রী ও ৬০ শতাংশ ভাড়া নিয়ে চলাচল করছে। তবে বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ পাওয়ার পর ইতোমধ্যে নগরীতে ৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে নেমেছে।
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের ২১ মার্চ থেকে সবধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেয় সরকার। দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর গেলো বছরের ১ জুন থেকে স্বাস্থ্যবিধি মানার শর্ত সাপেক্ষে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তখন ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়। দীর্ঘদিন চলার পর করোনা সংক্রমণ একটু কমে এলে গত সেপ্টেম্বর মাসে শতভাগ আসনে যাত্রী নিয়ে চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। তখন থেকে মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) পর্যন্ত শতভাগ আসনেই যাত্রী নিয়ে চলছিলো গণপরিবহন।
এদিকে, নতুন করে গণপরিবহনে চলাচলের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এতে বলা হয়েছে ধারণক্ষমতার ৫০ ভাগের অধিক যাত্রী পরিবহন করা যাবে না, বিদ্যমান ভাড়ার অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ এর বেশি ভাড়া নেওয়া যাবে না, সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাতে আন্তঃজেলা যান চলাচল সীমিত করতে হবে, প্রয়োজনে বন্ধ রাখতে হবে। গণপরিবহনে যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার/কন্ডাক্টর, হেলপার এবং টিকেট বিক্রি কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মাস্ক পরিধান/ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে, তাদের হাত ধোয়ার জন্য পর্যাপ্ত সাবান-পানি/হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে, যাত্রার শুরু ও শেষে যানবাহন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে, বাসের ওঠার ও নামার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে, গণপরিবহনের জন্য প্রযোজ্য অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
| |