বিজনেসটুডে ২৪ প্রতিনিধি
পঞ্চগড়: গুণে-মানে রঙে পঞ্চগড়ের আলু উন্নত হওয়ায় এ জেলার আলু কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে আমদানিকারকেরা। তারা পঞ্চগড়ের উৎপাদিত আলুর আগাম চাহিদা দিয়ে রেখেছেন।
মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হওয়ার পাশাপাশি নেপাল, ভুটানসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশেও এ জেলার আলু রপ্তানির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রপ্তানির জন্য আলু প্রক্রিয়াজাত করায় নানা ধাপে বেশ কিছু শ্রমিকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। জমি থেকে আলু সংগ্রহের পর আলু বাছাই, গ্রেডিং, ওজন, প্যাকিং, ট্রাকে লোডসহ নানা কাজে দৈনিক ব্যস্ত জেলার আলু শ্রমিকেরা।
যদিও, এবার আলুর বাম্পার ফলনে জেলার বাজারে আলুর দাম কিছুটা পড়ে গেছে। কিন্তু বিদেশে রপ্তানি শুরু হওয়ার পর আবার বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এতে আলু চাষিরা আশার আলো খুঁজে পেয়েছেন।
জেলা বিএডিসি সূত্রে জানা যায়, ২৮ মেট্রিক টন ডায়মন্ড জাতের আলু রপ্তানির মধ্যে দিয়ে জেলার আলু রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়। দেশের রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কেএস ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এবং মালয়েশিয়ার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সিনহুয়া ট্রেডিং কর্পোরেশনের মাধ্যমে ওই দেশে পঞ্চগড়ের আলু রপ্তানি করা হচ্ছে।
সাড়ে ৮ কেজির প্রতি প্যাকেট আলু পঞ্চগড় থেকে কন্টেইনারে করে প্রথমে যাবে চট্টগ্রাম বন্দরে। পরে তা কার্গো জাহাজে করে পৌঁছাবে মালয়েশিয়ায়।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ৯ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্রানুলা, টিপিএস, কারেছ, এস্টারিসসহ ২০টির বেশি জাতের আলুর চাষ হয়েছে। প্রতি আলুর সাইজ ৯০ থেকে ২০০ গ্রাম পর্যন্ত।
এবার মোট আলু উৎপাদিত হয়েছে ২ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৯ মেট্রিক টন। এর মধ্যে জেলায় বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ চাষিরা প্রদর্শনী প্লটসহ ৩০০ একর জমিতে আলুর চাষ করেছে। এর মধ্যে ২০ একর জমিতে রপ্তানিযোগ্য ডায়মন্ড জাতের আলুর চাষ হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩০ হেক্টর জমিতে রপ্তানিযোগ্য অন্যান্য জাতের আলুর চাষ হয়েছে।
জেলার সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের তহশীলদার পাড়ার বিএডিসির চুক্তিবদ্ধ আলু চাষি মো. আব্দুল মতিন জানান, এবার ১১ একর জমিতে ডায়মন্ড জাতের আলুর চাষ করেছি। প্রতি কেজি ১৪ টাকা দরে উৎপাদিত আলুর মধ্যে সাড়ে ১৮ মেট্রিক টন আলু মালয়েশিয়ায় যাচ্ছে। টাকাও মিলছে নগদ। তবে আলুর দামটা যদি ১৮ থেকে ২০ টাকা হতো তাহলে আমরা আরও লাভবান হতে পারতাম। কেননা আলুর উৎপাদন খরচ আগের চাইতে অনেকাংশে বেড়ে গেছে।
জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়নের কেরামত পাড়া এলাকার বিএডিসির আলু চাষি মো. বায়েজীদ বোস্তামী জানান, চলতি মৌসুমে ২৩ একর জমিতে ডায়মন্ডসহ কয়েকটি জাতের আলুর চাষ করেছি। আমার উৎপাদিত মোট আলুর মধ্যে ৩ মেট্রিক টন আলু দিয়েছি। বাকি আলু বিএডিসি কর্তৃপক্ষ তাদের ভিত্তিবীজ মান ঘোষিত বীজ হিসেবে নিবে। অবশিষ্ট কিছু আলু সংরক্ষণ করব এবং বাকিগুলো বাজারে বিক্রি করবো।
রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ন্যানো এগ্রোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. ইকবাল হোসেন জানান, বাংলাদেশের আলুর বাজার মালয়েশিয়া, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কাসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে রয়েছে। কেএস ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় আলু রপ্তানি করছি। ইতোমধ্যে পঞ্চগড় থেকে ২৮ মেট্রিক টন আলু আমরা কিনেছি। নতুন অর্ডার পেলে সেখান থেকে আরও আলু কেনা হবে।
তিনি আরো জানান, চলতি মৌসুমে তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১০০ মেট্রিক টন আলু রপ্তানি হয়েছে। আরও বেশ কিছু আলু অন্য কোম্পানির মাধ্যমে যাচ্ছে। বর্তমানে যে অর্ডার আছে সে পরিমাণ আলুই কিনবেন তারা। নতুন অর্ডার পেলে তারা আরও রপ্তানি করবেন, সেই প্রস্তুতিও রয়েছে তাদের।
পঞ্চগড় জেলা বিএডিসি হিমাগারের উপপরিচালক (টিসি) মো. আব্দুল হাই সজিব জানান, মানসম্পন্ন বীজ আলু উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং কৃষক পর্যায়ে বিতরণ জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) পঞ্চগড় জোনের আওতায় চুক্তিবদ্ধ আলু চাষিদের মাধ্যমে উৎপাদিত আলু মালয়েশিয়ায় রপ্তানি হচ্ছে।
এবার জেলায় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে এখানকার আলু। পঞ্চগড়ের মাটি বেলে দোআঁশ হওয়ায় আলু চাষে খুবই উপযোগী। এ ছাড়া আলু শীত প্রধান ফসল হওয়ায় এ অঞ্চলে বেশি শীতের কারণে আলুর বাম্পার ফলন হয়। এবার চাহিদায় তুলনায় বেশি আলু উৎপাদিত হওয়ায় চাষিরা ন্যায্যমূল্যে থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টায় এখানকার আলু বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে বলে জানান তিনি।