১৮৫৭ সালের ১০ মে, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনীতে কর্মরত সিপাহিরা বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে। অবিভক্ত ভারতের মিরাট শহরে শুরু হয়েছিল এই বিদ্রোহ। ক্রমশ এই বিদ্রোহ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল উত্তর ও মধ্য ভারতে। ১৮৫৮ সালের ২০ জুন, বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হয়েছিল ব্রিটিশরা, কিন্তু এই বিদ্রোহ থেকেই শুরু হয়েছিল ভারতের স্বাধীনতার অন্দোলন। যার কাছে নতি স্বীকার করতে হয়েছিল ব্রিটিশদের। আজ দেখব সিপাহি বিদ্রোহের সময়ে লখনৌ শহর ও তার আশেপাশে তোলা কিছু বিরল ছবি।

সিপাহি বিদ্রোহের প্রাক্কালে লখনৌ শহরের আর্মি ব্যারাকে বিদ্রোহী সেনারা। গেটের সামনে সেনাদের জটলা। ছবির ডানদিকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বন্দুক। আক্রমণ করার জন্য ও আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য সেনারা প্রস্তুত। পরিস্থিতি আঁচ করে ছবিটি তুলে রেখেছিলেন কোনও ইংরেজ।

লখনৌ শহরের সিকান্দারবাগ ভবনের ভেতরের দৃশ্য। ১৮৫৭ সালের নভেম্বর মাসে, এখানেই ৯৩ নং হাইল্যান্ডার এবং ৪ নং পাঞ্জাব রেজিমেন্টের প্রায় দু’হাজার ভারতীয় বিদ্রোহী সেনাকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিদ্রোহীদের কঙ্কাল।

১৮৫৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। বিদ্রোহী সিপাহিরা মাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল লখনৌ শহরের ছত্তর মঞ্জিল বা আম্ব্রেলা প্যালেস। জেনারেল হেনরি হ্যাভলকের সৈন্যদলের প্রচুর ক্ষতি হয়েছিল এই বিস্ফোরণে।

লখনৌ শহরের ‘৩২ নং মেস হাউস’ হয়ে উঠেছিল বিদ্রোহী সেনাদের ঘাঁটি। ১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রায় দশ ঘন্টা ধরে এক নাগাড়ে কামানের গোলা ছুঁড়ে প্যালেসটি থেকে বিদ্রোহী সেনাদের হঠাতে সক্ষম হয়েছিল ব্রিটিশরা।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে ছোট ইমামবাড়ার প্রবেশপথ। বিদ্রোহী সিপাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ব্রিটিশদের মাদ্রাজ রেজিমেন্টের সেনারা।

বিদ্রোহী সিপাহিদের সাহায্য করার অপরাধে ফারুকাবাদের নবাব তাফাজ্জুল হুসেন খানকে বন্দি করা হয়েছিল। কিছুদিন কারাগারে রাখার পর মক্কায় নির্বাসনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

লখনৌ-এর লালবাগে অবস্থিত চিনেবাজার। এই ছবিটি তোলার কিছুদিন আগে, ১৮৫৭ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর, এই প্যালেসে আক্রমণ চালিয়ে বিদ্রোহী সিপাহিরা হত্যা করেছিল অত্যাচারী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জেমস নিলকে।

১৮৫৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। লখনৌ-এর সিপাহি বিদ্রোহ দমনের জন্য কানপুরের ঘাঁটি থেকে ২৫০০ সেনা আর প্রচুর কামান নিয়ে লখনৌ চললেন মেজর জেনারেল হেনরি হ্যাভলক।

বিদ্রোহী সিপাহিদের হাত থেকে লখনৌ রেসিডেন্সি পুনরুদ্ধার করার জন্য এসেছিলেন স্যার জেমস আউট্রাম। ১৮৫৭ সালের নভেম্বর মাসে প্রায় ৪০০০ সেনা আর প্রচুর গোলা বারুদ নিয়ে লখনৌ শহরের উপকন্ঠে থাকা আলমবাগে তাঁবু ফেলেছিলেন।

আলমবাগের একটি প্যালেসে ব্রিটিশ সেনারা। কানপুর রোডের ওপর থাকা এই প্যালেসটি ছিল ব্রিটিশদের অন্যতম প্রধান ঘাঁটি। এই প্যালেসের ভেতরে ছিল বাগান ও মসজিদ। কিছু সময়ের জন্য প্যালেসটি দখল করে নিয়েছিল বিদ্রোহী সিপাহিরা।

বিদ্রোহী সিপাহিদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার উদ্দেশ্যে হাতির সাহায্যে ‘ফিল্ড’ কামান নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রণক্ষেত্রে।

ধরা পড়ার পর বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট না করে বিদ্রোহী সিপাহিদের এভাবেই ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দিতো ব্রিটিশরা। ছবিতে একজনও ব্রিটিশ নেই। কিন্তু ছবিটি তুলে রেখেছিলেন কোনও এক ব্রিটিশ। এটাও ছিল এক ব্রিটিশ চাল।