Home Second Lead করোনা পজিটিভ নেগেটিভ চিনতে পারে কুকুর

করোনা পজিটিভ নেগেটিভ চিনতে পারে কুকুর

ছবি:সংগৃহীত

২২ কোটি রকমের গন্ধ পায় কুকুর। সঠিক প্রশিক্ষণ দিলে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগীকেও চিনিয়ে দিতে পারে। কুকুরের ঘ্রাণশক্তির কথা কারও অজানা নয়। এই বিশেষ ক্ষমতাকেই করোনা মোকাবিলার কাজে লাগানো যায় কিনা সে নিয়ে গবেষণা শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেই গবেষণায় ৯৬ শতাংশ সাফল্য এসেছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কুকুররা শুধু করোনাভাইরাসের গন্ধ পায় তাই নয়, শুঁকে ভাইরাস পজিটিভ ও ভাইরাস নেগেটিভ রোগীকে আলাদা করে চিনিয়ে দিতে পারে।

সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের আলাদা গন্ধ আছে। কুকুররা সেই গন্ধ চিনতে পারে। গবেষকদের দাবি এমনটাই। প্রস্রাব বা ঘামের গন্ধ শুঁকে কুকুররা ধরে দিতে পারে সেই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন কিনা। সংক্রামিত রোগীর নমুনা শুঁকিয়ে কুকুরদের প্রতিক্রিয়া কেমন হয়, সে নিয়ে এত মাস ধরে গবেষণা চলছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনও অবধি যেসব নমুনা শুঁকে কুকুররা সংক্রমণ ধরেছে তা প্রায় ৯৬ শতাংশ সফল। সংক্রমণের উপসর্গ নেই এমন রোগী অর্থাৎ অ্যাসিম্পটোমেটিক যাঁরা, তাঁদের মূত্র বা ঘামের গন্ধ থেকেও সংক্রমণ চিহ্নিত করেছে কুকুর। থুতু-লালার মধ্যে ভাইরাসের কণা যতটা থাকে মূত্রে ততটা থাকে না। ভাইরাল লোড কম হলেও তা শণাক্ত করতে পারে কুকুর, এতটাই আশ্চর্য ঘ্রাণশক্তি তাদের।

ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়া স্কুলের ওয়ার্কিং ডগ সেন্টারে নানা প্রজাতির কুকুর নিয়ে পরীক্ষা করছিলেন গবেষকরা। বিজ্ঞানী ডক্টর সিন্থিয়া ওট্টো বলেছেন, মানুষের গায়ের গন্ধ শুঁকে তাদের আলাদা করে চেনার ক্ষমতা যেমন আছে কুকুরদের, তেমনি বিভিন্ন অসুখের গন্ধ শুঁকে তা চিনিয়ে দেওয়ার দক্ষতাও আছে। সার্স-কভ-২ ভাইরাল স্ট্রেনের গন্ধ কেমন, মানুষের শরীরে ঢুকলে থুতু-লালা, ঘাম বা বর্জ্যের নমুনায় ভাইরাল স্ট্রেন থাকলে তার গন্ধ কেমন হবে সেসবই কুকুরদের শেখানো পড়ানো হচ্ছিল এতদিন।

Viral scents? Dogs sniff out coronavirus in human sweat | Science News for  Students

সিন্থিয়া বলছেন, সহজাত দক্ষতাতেই কুকুররা সেটা ধরে ফেলছে। ল্যাব্রাডর রিট্রিভার ও বেলজিয়ান ম্যালিনয়েস প্রজাতির কুকুররা নমুনা শুঁকেই ধরতে পারছে কোনটা ভাইরাস পজিটিভ আর কোন নমুনায় ভাইরাসের স্ট্রেন নেই। কোভিড টেস্ট কিট যা সম্পূর্ণ সফলভাবে পারেনি সেই কাজই নাকি করে দেখিয়েছে কুকুর। কোভিড টেস্টের রিপোর্টেও ‘ফলস পজিটিভ’ ডেটা পাওয়া গেছে। মানে সংক্রমণ নেই অথচ টেস্ট রিপোর্টে নমুনা ভাইরাজ পজিটিভ দেখিয়েছে। কুকুররা সে ভুল করেনি। ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে নমুনার সঠিক চিহ্নিতকরণ করেছে।

Dogs are being trained to sniff out coronavirus cases - The Washington Post

ল্যাব্রাডর ও বেলজিয়ান ম্যালিনয়েসদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে যে, কোনও নমুনায় ভাইরাসের মিউট্যান্ট স্ট্রেন থাকলে সেটাও ধরে দিতে পারবে। তবে একই ব্যক্তির নমুনা বার বার শোঁকালে কাজ হবে না। প্রতিবার স্যাম্পেল বদলে এই পরীক্ষা করলে সাফল্য আসবে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনও নমুনা শুঁকে কুকুর যদি বোঝে রোগ আছে, তাহলে তার প্রতিক্রিয়া বদলে যাচ্ছে। যে নমুনায় জীবাণু নেই সেটা শুঁকলে আবার প্রতিক্রিয়া অন্য। লুকনো জায়গায় রাখা বোমা বা অপরাধীদের খোঁজ পেতে ঠিক যেভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কুকুরদের, রোগ ধরতেও ঠিক সেভাবেই ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে।

Scientists Are Training Dogs to Sniff Out COVID-19 | Time

কুকুরের ঘ্রাণশক্তি কতটা শক্তিশালী তার কয়েকটা পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখা গেছে, প্রায় ২২ কোটি সেন্ট রিসেপটর আছে কুকুরের শ্বাসযন্ত্রে। মানুষের সেই সংখ্যা ৫০ লক্ষের কাছাকাছি। শুধু তাই নয়, মানুষের সেন্ট রিসেপটরের থেকে কুকুরদের সেন্ট রিসেপটর ১০ হাজার গুণ বেশি সঠিক ও নির্ভুল। তার মানে, কয়েক লক্ষ কোটি গন্ধের মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট কোনও গন্ধ আলাদা করে চিহ্নিত করতে পারে কুকুররা। প্রতি মিনিটে তারা শ্বাস নেয় ৩০০ বার, এর মানে হল কুকুরদের অলফ্যাক্টরি কোষ ক্রমাগত নতুন নতুন গন্ধের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে এবং সেইসব গন্ধ মনেও রাখতে পারে। কুকুরা স্রেফ শুঁকে ধরে দিতে পারে অনেক জটিল রোগ। এমনকি ক্যানসারের মতো মারণ রোগও চিহ্নিত করতে পারে কুকুররা। ফুসফুসের ক্যানসার, স্তন ক্যানসার, ব্লাডার ক্যানসার এমনকি প্রস্টেট ক্যানসারও আলাদা করে ধরতে পারে। শুধুমাত্র গন্ধ শুঁকেই।

-বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক