রংপুরের নিভৃত পল্লীতে কৃষক পিতার অনুপ্রেনা থেকে মাত্র ৫০ শতক জমিতে ড্রাগন ফল চাষ করে এলাকায় চমক সৃষ্টি করেছেন। জেলার তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী (কর্ণেল) ফরিদ আলমের স্ত্রী শামীমা আক্তার। তিনি রংপুরে প্রথম নারী কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে বাণ্যজ্যিক ভাবে এই সাফল্য অর্জন করেছেন। ইতিমধ্যেই ড্রাগন ফলের বাগান থেকে ৪ শ” টাকা কেজিতে প্রায় ১’শ কেজি ফল বিক্রি করে চল্লিশ হাজার টাকা আয়ও করেছেন।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের পশ্চিম রহিমাপুর খানসাহেব পাড়া গ্রামের আলহাজ্ব শামসুল কাদের সরকার কন্যা শামীমা আক্তার। তার পিতা শামসুল কাদের সরকার একজন সামর্থবান সফল কৃষক ছিলেন। তিনি তার জমিতে মাছ, লেচু, কলা, আদা চাষে সফলতার পাশাপাশি আদা চাষ করে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারের কাজ থেকে পুরুস্কারও পেয়েছেন।
শামীমা বেগম জানান পিতার সেই কৃষি কাজের অনুপ্রেরণাই তিনি গাছের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ছোট বেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি বসতভিটাসহ বিভিন্ন জায়গায় নানা প্রজাতির ফুল ফল ও ওষুধি গাছের চারা লাগাতেন। এরপর ১৯৯৫ সালে তার বিয়ে হয় ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ আলম (অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল) এর সাথে।বিয়ের পর নুতুর সংসারে গিয়ে বাড়ির ছাদে নানান রকম ফলসহ বিভিন্ন প্রজাতির ওষুধী গাছের চারা লাগান। শামিমা জানান ভিয়েতনামে ভ্রমনে গিয়ে সুস্বাদু ড্রাগন ফল খেয়ে তার গ্রামের বাড়িতে ড্রাগন ফল চাষের সিদ্ধান্ত নেন।তিনি বাংলাদেশ স্কাউট পরিচালক মমতাজ আলীর কাছ থেকে ও বিভিন্ন নার্সারী থেকে চারা সংগ্রহ করে প্রাথমিক ভাবে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া পঞ্চান্নশতক জমিতে ড্রাগন ফলের চারা রোপন করেন। পিতা শামসুল কাদের সরকারের পরামর্শ ও সহযোগীতায় ২০১৬ সালের শেষ দিকে তার ৫০ শতক জমিতে ৮শ” টি ড্রাগন ফলের চারা রোপন করেন। ধীরে ধীরে চারা বড় হতে থাকে শাম্মীর আশা পূরণ হয় এবং স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন।
নারী উদ্যোক্তা শামিমা জানান, ড্রাগন ফলের পাশাপাশি ৬০ শতক জমিতে তিনি মাল্টা ফলের চাষ করেছেন। ড্রাগন ফল বিক্রি করে কয়েক হাজার টাকা আয় করেন। ড্রাগন ফলের প্রতিটি গাছে বছরে ৫০ থেকে ৭০ টি পর্যন্ত ড্রাগন ফল ধরে। ওজনে একটি ফল ৬শ গ্রাম থেকে ৮শ” গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।বাড়ির আঙ্গিনা অথবা ছাদে ড্রাগন চাষ করে পরিবারের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। ড্রাগন ফলের প্রতি কেজি বাজার মূল্য ৬ শত” থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত।শামীমা জানান, ব্রাঞ্চ কেটে মাটিতে লাগালেই এ গাছ বাড়তে থাকে। প্রতিটি ব্রাঞ্চ বা চারা ৫০ টাকা করে বিক্রি হয়। দুই বছরের মধ্যে ব্রাঞ্চ কেটে ও ছয় থেকে সাত বছরে মধ্যে বীজ থেকে ড্রাগন ফল ধরা শুরু করে।সাধারনত ৩০ থেকে ১শ” বছর পর্যন্ত সঠিক পরিচর্যা করলে বাগান থেকে ফল পাওয়া যেতে পারে। পাতা বিহীন হওয়ায় পোকা মাকড়ের তেমন আক্রমণ হয় না। ড্রাগন ফল লাল গোলাপী সাদা প্রকারের হয়ে থাকে। দুই একবার জমিতে সার দেওয়া ছাড়া ছাড়া তেমন একটা পরিচর্যার প্রয়োজন হয়না। তবে মাঠ পর্যায়ে কৃষক ও খামারিদের মাঝে বিদেশি এ ফলের চাষাবাদ ছড়িয়ে দিতে আরো প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন। তাহলে বিদেশি ফলের আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে। রংপুর হটিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আফতাব হোসেন জানান, ড্রাগন চাষ অত্যান্ত লাভজনক। এতে খরচ কম লাভ বেশি। রংপুরের সবচেয়ে ড্রাগনের বড় বাগান হচ্ছে তরাগঞ্জ উপজেলার নারী কৃষি উদ্যোক্তা শামীমা আক্তারের। কৃষি বিভাগ তাকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগীতা করে আসছে। এছাড়ার রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকায় কিছু সৌখিন ড্রাগন চাষী আছেন যারা বাড়ির ছাদে এর চাষ করে থাকেন। রংপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান জানান, রংপুরে ২৭ টি ড্রাগন ফলের বাগান আছে । প্রায় ৬.৬২ হেক্টর জমিতে ড্রাগনের চাষ হয়। জেলার মিঠাপুকুর, গংগাচড়া ও তারাগঞ্জ উপজেলায় এর চাষ হয়ে থাকে। ড্রাগন চাষে কৃষকদের উৎসাহ দেওয়ার জন্য কৃষি বিভাগ সকল প্রকারের সহযোগীতা করে যাচ্ছে।
-লিয়াকত আলী বাদল