*নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৪৮ শতাংশ
নাজমুল হোসেন
চট্টগ্রাম: এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজে সুষ্ঠু পরিকল্পনাহীনতায় ভুগছে নগরবাসী। এই মেগাপ্রজেক্টে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শেখ মুজিব সড়কের আগ্রাবাদ চৌমুহনী থেকে বারেক বিল্ডিং অংশে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীরা।
সড়কটির বিভিন্ন অংশে সৃষ্ট খানাখন্দ নতুন করে মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে টানা বর্ষণে। পথচারীদের পাশাপাশি রাস্তায় নামামাত্রই বিপদে পড়তে হচ্ছে সড়কে চলাচলকারী যানবাহনকে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রকল্পের নির্মাণকাজের কারণে সৃষ্ট গর্তে যান আটকে যানজটে পড়া কর্মজীবীদের নিত্য দুর্ভোগের পাশাপাশি প্রায়শ ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনাও। সড়কের বেহাল দশায় অনেকটা নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে ।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বরত কর্মকর্তারা বলছেন, অপরিকল্পিত কাজ নয়, বর্ষার কারণেই মূলত সড়কের বেহাল দশা। পুরোপুরিভাবে দুর্ভোগ লাঘবে নগরবাসীকে অপেক্ষা করতে হবে আরও মাস তিনেক।
সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণকাজের জন্য দেওয়া বেষ্টনীর কারণে সড়ক সংকুচিত হওয়ায় ব্যক্তিগত ও গণপরিবহনের পাশাপাশি ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে বন্দরগামী ট্রাক-লরিকে। পাশাপাশি নির্মাণকাজের কারণে সড়কের বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোটবড় গর্ত। এর মধ্যে ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ হয়েছে ভারি বর্ষণ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কটি পানি ও কাদায় একাকার।
নগরীর বাদামতলীর একটি বেসরকারি ব্যাংকের চাকরিজীবী রাহান চৌধুরী অফিসে আসেন নিমতলা এলাকা থেকে। কিন্তু বছরখানেক ধরে এ সড়কে আসা-যাওয়া করতে তাকে পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে। সড়কটি নিয়ে অভিব্যক্তি জানাতে গিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন এই ভুক্তভোগী। তিনি বলেন, ‘উন্নয়নকাজ চললেও তা পরিকল্পিত হওয়া উচিত। অপরিকল্পিত কর্মকাণ্ডের ফলে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।’
অনেকটা একই অভিযোগ জানান ব্যবসায়ী খন্দকার শরীফ হোসেন বলেন, ‘২০ বছর ধরে এই সড়কটি ব্যবহার করছি। কিন্তু গত আট মাস ধরে ভয়াবহ দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। উন্নয়নকাজ চললে একটু দুর্ভোগ হবে এটাই স্বাভাবিক, আমরা তা মানতেও রাজি। কিন্তু অপরিকল্পিত এ কাজের কারণে আমাদের ভোগান্তি আজ চরম পর্যায়ে।’
ওই স্থানের একাধিক দোকানীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে দিনের পর দিন এই ভোগান্তি। যতদ্রুত সম্ভব এই দুর্ভোগের অবসান চান তারা।
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, ‘এই প্রকল্পের নির্মাণকাজের কারণে যে নগরবাসীকে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে তা আমরা বুঝতে পারছি। এই দুর্ভোগের কারণে আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করছি। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের আন্তরিকতার কোনো অভাব নেই। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি দ্রুত সমাধান করার।’
প্রকল্প পরিচালক আরো বলেন, ‘আমরা যখন সিমেন্ট ক্রসিং থেকে কাঠগড় অংশে এই নির্মাণকাজ করছিলাম তখন কিন্তু ওই এলাকার বাসিন্দা ও সড়ক ব্যবহারকারীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। বৃষ্টির কারণে আমরা সড়কটির মেরামতের কাজ শুরু করতে পারছি না। মাসখানেক পর মেরামতের কাজ শুরুর পরিকল্পনা আছে। তবে পুরোপুরিভাবে এই ভোগান্তি থেকে মুক্ত হতে নগরবাসীকে আরও তিন মাসের মতো অপেক্ষা করতে হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম সফরকালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ঘোষণা দেন। এরপর ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় ৩ হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এ প্রকল্প যখন অনুমোদন পায়, তখন তিন বছরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়।
নগরীর লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত চারলেনের এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সঙ্গে মাঝখানে নকশা নিয়ে কিছুটা জটিলতা দেখা দিলেও সেটার সমাধান হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৪৮ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।