বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
আওয়ামী লীগকে মূল্যবান হীরক খণ্ডের সঙ্গে তুলনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার আলোক বর্তিকাবাহী সংগঠনটির প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে অতন্দ্র প্রহরীর মতো বাংলার জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে যেন কেউ আর ছিনিমিনি খেলতে না পারে।
তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগকে বলব হিরার টুকরা। যতবার কেটেছে ততবার আরও জ্বল জ্বল হয়েছে এবং আরও নতুন ভাবে জ্যোতি ছড়িয়েছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বুধবার বিকেলে আওয়ামী লীগের ৭২ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভার সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলোচনা সভার প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই আওয়ামী লীগ অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সহ্য করেছে, অনেক চড়াই উতরাই, বন্ধুর পথ পার হয়েছে। আজকে আমরা ক্ষমতায় আছি বলেই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হচ্ছে। এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কখনো কেউ যেন ছিনিমিনি খেলতে না পারে সে জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো বাংলাদেশের মানুষের পাশে থাকবে আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতা-কর্মী-সেটাই আমি চাই।
আওয়ামী লীগকে একটা প্রবীণ ও ঐতিহ্যবাহী দল আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশের মানুষের অন্ন,বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন মৌলিক চাহিদাগুলোর সংস্থানের সুযোগ আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে জনগণ আবার বঞ্চিত হবে। কাজেই তাঁরা যেন আর বঞ্চনার স্বীকার না হয়।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এবং তিনি ’৮১ সালে দেশে আসার পরও বেশ কয়েকবার আওয়ামী লীগ ভাঙার নানা প্রচেষ্টার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগকে বলব হিরার টুকরা। যতবার কেটেছে আরও জ্বল জ্বল হয়েছে এবং আরও নতুন ভাবে জ্যোতি ছড়িয়েছে। কাজেই এই সংগঠনকে ধ্বংস করার যে যতই চেষ্টা করুক পারেনি, পারবে না। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই বাংলাদেশ আজকে অর্থনৈতিক ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। সামাজিক, সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রে এগিয়ে গিয়ে বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে।’
তিনি এ সময় আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি তাকে এবং আওয়ামী লীগকে বারবার ভোট দিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ায় দেশের জনগণকেও কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেন।
জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তারা ভরসা করেছিল বলেই আমরা টানা তৃতীয়বারের মতো রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় দীর্ঘ সময় হাতে পেয়েছি। দেশকে সুন্দরভাবে সাজানোর যেমন সুযোগ পেয়েছি তেমনি দেশের দুঃখী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করার একটা সুযোগ পেয়েছি। আজকে করোনাভাইরাস আমাদের কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছে সত্য কিন্তু এই অবস্থা থেকেও ইনশা আল্লাহ আমরা উত্তরণ ঘটাতে পারব। তিনি এ সময় কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাসহ মাস্ক ব্যবহার করা, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার বিষয়গুলোও পুনরায় দেশবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেন এবং অবশ্যই পালনের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করেন। আলোচনা সভায় আরও বক্তৃতা করেন দলের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য এবং কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এমপি এবং অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর এবং দক্ষিণের সভাপতি শেখ বজুলুর রহমান ও আবু আহমেদ মান্নাফি।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সংগঠনের ৭২ বছর পূর্তিতে প্রকাশিত দলের তথ্য ও গবেষণা পরিষদ সম্পাদিত একটি বইয়ের মোড়ক ও উন্মোচন করেন। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবসহ ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
করোনার মধ্যেও বাজেটের আকার না কমিয়ে তার সরকার ৬ লাখ কোটি টাকারও বেশি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘জাতির পিতা এদেশটাকে সাজাতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেন নাই। তার সেই অসমাপ্ত কাজকে আমাদের সমাপ্ত করতে হবে। এ কারণে আওয়ামী লীগকে সব সময় সচেতন থাকতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে, সুখে দুঃখে সাথি হতে হবে এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করতে হবে।
এ জন্য আওয়ামী লীগের মূলশক্তি তৃণমূল পর্যায় থেকে সংগঠনকে শক্তিশালী করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন সংগঠনের সভাপতি। তিনি বলেন, তৃণমূল থেকেই সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। করোনার কারণে আমাদের কাউন্সিলগুলো আমরা করতে পারছি না তারপরেও সংগঠন যাতে শক্তিশালী হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কেননা এদলই পারবে এ দেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে।