দু’চারদিন ধরে আধপেটা খেয়েই দিন কেটেছে। একদিন তো পুরো উপোস। খিদের জ্বালায় তার স্বরে কাঁদছে কোলের শিশু। আর সহ্য করতে পারেননি প্রেমা। অসুস্থ শরীরে দিনমজুরির কাজ করতে পারেননি কয়েকদিন। তাতেই এই বিড়ম্বনা। পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে হাত পেতেও লাভ হয়নি। শেষে মাথার চুল বিক্রি করে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিলেন মা।
তামিলনাড়ুর সালেমের বাসিন্দা প্রেমার বয়স ৩১ বছর। জীবনের লড়াই বয়স যেন আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। অনাহার আর অসুস্থতায় নুব্জ্য শরীর। তিন সন্তানকে নিয়ে কোনওরকমে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই চলছে। স্বামী আত্মঘাতী হয়েছেন সাত মাস আগে। তারপর থেকেই সংসারে অভাবের ছায়া নেমেছে।
প্রেমা জানিয়েছেন, প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তাঁর স্বামী। নিজের ব্যবসা শুরু করার জন্য আড়াই লক্ষ টাকা ধার নিয়েছিলেন। সেই টাকা শোধ করতে গিয়েই সর্বস্ব খুইয়ে বসেন। মিথ্যা জালে ফাঁসিয়ে সবকিছু লুটে নেন এক ব্যক্তি। এরপর থেকে সংসারের বোঝা টানার দায়িত্ব প্রেমারই। দিনমজুরি, ইটভাটায় কাজ করে যা আয় হয় তাতে একদিনে চারটে পেটে কোনওরকমে চলে যায়। খিদের জ্বালা মেটাতে প্রতিটা দিনই তাঁর কাছে এক একটা নতুন লড়াইয়ের দিন।
“ভোর থেকে দিনমজুরি, তারপর ইটভাটা কাজ। অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। রোজের আয়, তাই কাজে না গেলে টাকা জুটবে না। খেতেও পাচ্ছিলাম না। বাচ্চারা খিদেয় কাঁদছিল,” প্রেমা বলেন, প্রতিবেশীরা শুধু সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি কেউই। অনাহার, অবসাদে মৃত্যুর অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। প্রেমার কথায়, “এক ব্যক্তিই আমাকে এই প্রস্তাব দেন। পরচুলের জন্য মাথার চুল বিক্রি করলে ১৫০ টাকা পাওয়া যাবে। তাতেই রাজি হয়ে যাই। পেটটা তো ভরবে।”
প্রেমার এই লড়াইয়ের কথা সামনে আনেন ইটভাটার মালিক প্রভু। ফেসবুকে দীর্ঘ পোস্ট করে তিনি লেখেন, “প্রেমা আমার ইটভাটাতেই কাজ করেন। কিছু টাকা দিয়ে সাময়িকভাবে তাঁর এই সমস্যা দূর করার মানে হয় না। আমরা চাই সকলে এগিয়ে এসে তাঁকে সাহায্য করুন।” এই পোস্টে সাড়াও মেলে দ্রুত। প্রশাসনের তরফে প্রেমাকে ২৫ হাজার টাকা ও রেশন কার্ড করে দেওয়া হয়। প্রেমা বিধবা ভাতা-সহ সরকারি সমস্ত সুযোগ সুবিধা পাবেন ।
বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক