নাজমুল হোসেন
চট্টগ্রাম: রবিবার (১১ জুলাই) সন্ধ্যায় দেশের আকাশে দেখা গেছে জিলহজ মাসের চাঁদ। সেই হিসেবে ২১ জুলাই উদযাপিত হবে ঈদুল আজহা। ঈদকে সামনে রেখে পুরোদমে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছেন খামারিরা।
হাটের ইজারাদাররা বলছেন, এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামে ট্রাকে ট্রাকে গরু আসার অপেক্ষা করছেন তারা।
সোমবার (১২ জুলাই) বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে হাটের ইজারাদাররা। টাঙানো হয়েছে ত্রিপল, মাঠ উঁচু করার পাশাপাশি বাধা হয়েছে বাঁশ-কাঠের খুঁটি। সরকারি নির্দেশনা মেনে চলতে রাখা হয়েছে পৃথক প্রবেশ ও বহির্গমন পথ।
পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠ, সল্টগোলা ক্রসিং পশুর হাট ও সাগরিকা গরুর বাজারে দেখা গেছে, এরই মধ্যে চলে এসেছে বেশ কিছু সংখ্যক গরু। তবে দূর-দূরান্ত থেকে আসা বেপারিরা জানান, চলমান লকডাউনে ক্রেতা কম হওয়ার শঙ্কা তাদের।
অন্যদিকে ইজারাদাররা বলছেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু নিয়ে আসতে খামারিরা যেন কোন বাধার মুখে না পড়ে, তার জন্য প্রশাসনের সাথে আলাপ আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি চলমান লকডাউনে ক্রেতারা যেন স্বাচ্ছন্দে কোরবানি পশুর হাটে আসতে পারেন সেজন্যও বিশেষ অনুরোধ করা হয়েছে।
কোরবানি পশুর হাটে পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুরোধ জানানো হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠে গরুর হাটের তত্ত্বাবধায়ক ও ৪১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর পুত্র ওয়াহিদ চৌধুরী বলেন, আমাদের খাইন-খুঁটি প্রস্তুত করা হয়েছে। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট ক্রেতারা আসতে শুরু করবে বলে আশা করছি। এরই মধ্যে রবিবার চার ট্রাক গরু এসেছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু নিয়ে আসতে খামারিরা যোগাযোগ করছেন। পথে প্রায় ৩০০ গরুর গাড়ি আছে। যেগুলো খুব শীঘ্রই চলে আসবে বলে আশা করছি।
খামারিরা বলছেন, যশোর, কুষ্টিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারিপুর, খুলনা, বাগেরহাটসহ দূর-দুরান্ত থেকে গরু নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। অনেক গরুভর্তি গাড়িই আছে ফেরিতে বা সড়কে। মাত্র দু’একদিনের মধ্যেই সেগুলো প্রবেশ করবে চট্টগ্রামের হাটগুলোতে।
এবার অনুমতি পাওয়া তিনটি অস্থায়ী কোরবানি পশুর হাট হলো— কর্ণফুলী পশুর হাট (নূর নগর হাউজিং), সল্টগোলা ক্রসিং পশুর হাট এবং পতেঙ্গা বাটারফ্লাই পার্কের দক্ষিণে টিকে গ্রুপের খালি মাঠে গরুর হাট। তাছাড়া বসছে তিনটি স্থায়ী হাট— সাগরিকা গরুর বাজার, বিবির হাট এবং পোস্তারপার ছাগলের বাজার।
কোরবানি পশুর হাট বসাতে ১৭টি কঠিন শর্ত বেঁধে দিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। এ শর্তানুসারে— অস্থায়ী পশুরহাট প্রধান সড়ক থেকে কমপক্ষে ১০০ গজ দূরে বসাতে হবে যাতে কোনো অবস্থাতেই প্রধান সড়কের যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে না পারে।
ইজারালব্ধ অর্থের ২০ শতাংশ ভূমি রাজস্ব দিতে হবে, হাটের বাইরে সড়কে কোনো পশু রাখা বা খুঁটি স্থাপন করা যাবে না। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান-পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে। হাটে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় লাইনে দাঁড়িয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। চাঁদা আদায় বা ক্রেতা-বিক্রেতাকে হয়রানি করা যাবে না। জাল নোট শনাক্তের যন্ত্র বসাতে হবে।
এবারে কোরবানি পশুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ইজারাদারদের বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কঠোর মনিটরিং করছে সিটি কর্পোরেশন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রেয়াজুল হক বলেন, কোরবানি পশুর হাটে সামাজিক দূরুত্ব বজায় রাখতে মাইকিং করা হবে। তাছাড়া অনলাইনে কোরবানি পশু কিনতে উৎসাহিত করছি আমরা।