নাজমুল হোসেন
চট্টগ্রাম: দরজায় কড়া নাড়ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ইতোমধ্যে কোরবানির পশু কিনতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন নগরবাসী। গেল ১২ জুলাই থেকে নগরীর ছয়টি স্থানে পশুরহাট বসিয়েছে সিটি কর্পোরেশন।
এদিকে দিন দিন বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ। এমন পরিস্থিতিতে এবার করোনা আতঙ্কে পশুর হাটে ভিড় জমাতে নারাজ সচেতন ক্রেতারা। অনেকে সরাসরি নগরের বিভিন্ন খামার ঘুরে কোরবানির পশু পছন্দ করে কিনছেন। আবার কেউবা বায়নাও দিয়ে রেখেছেন।
রবিবার (১৮জুলাই) নগরীর কাঠঘর ও হালিশহর এলাকার বাহার অ্যাগ্রো, টিকে অ্যাগ্রোসহ কয়েকটি খামারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে ক্রেতারা আসছেন গরু কিনতে। ক্রেতাদের সাথে দর-দাম করছেন বিক্রেতারা। অনেকে ঘুরে ঘুরে দেখছেন, কেউ কিনছেন, আবার কেউ কেউ পছন্দ হলে বুকিং দিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। খামারে সারি সারি বেঁধে রাখা হয়েছে গরু। কোনো কোনো সারির সব গরু বিক্রি হয়ে গেছে। আবার অনেক খামারের সব গরু বিক্রি হয়ে গেছে।
এবছর খামারে ১২৫টি গরু ছিল বাহার অ্যাগ্রোতে। ক্রেতাদের কাছ থেকে সাড়াও পাচ্ছেন বেশ। ইতোমধ্যে ৬৫টি গরু বিক্রিও হয়ে গেছে। শুধু গরু বিক্রি করে দায়িত্ব শেষ করছেন না তারা। ক্রেতাদের মাধ্যে যাদের বাসায় গরু রাখার জায়গা নেই তারাও গরু কিনে এখানে রেখে যাচ্ছেন। এর জন্য কোন প্রকার বাড়তি অর্থ দাবি করছেন না খামারটির মালিক বাহার হোসেন।
অ্যাগ্রোতে গরু কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, গেল বছরের তুলনায় এবার করোনার সংক্রমণ বেশি। কোরবানির পশুর হাটে গিয়ে গরু কেনা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। সেখানে প্রচুর লোকের সমাগম হয়, ভোগান্তিতেও পড়তে হয়। তাই এবার খামারে এসেছি গরু দেখতে, পছন্দও হয়েছে। এখন দর-দাম করে সুবিধামতো হলে কিনবো।
খামারে গরু কিনতে আসা সেলিম উদ্দীন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বিভিন্ন খামার ঘুরে দর-দাম দেখে এখানে পছন্দ করে গরু নিয়েছি। আমরা সুন্দর একটা পরিবেশ পেয়েছি, কোন প্রকার হয়রানির শিকার হতে হয়নি। পশুর হাটে মানুষের ভিড় থাকে। সেখানে করোনার ঝুঁকির পাশাপাশি দালালের আনাগোনাও থাকে। তারা কমিশন চায়, হয়রানি করে। পাশাপাশি গরু কিনে বাসায় রাখতেও সমস্যা। তাই এখান থেকে গরু কিনে এখানেই রাখছি। মালিক গরু রাখা ও খাবারেরে জন্য বাড়তি কোন টাকা নিচ্ছেন না। ভবিষ্যতেও খামার থেকে গরু কিনবো।
টিকে অ্যাগ্রোর স্বত্ত্বাধিকারী টিপু কাসেম বলেন, চট্টগ্রামে করোনার প্রকোপ বাড়ছে। তাই মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। মানুষ এক সময়ে বড় বড় গরুর বাজারে গিয়ে কোরবানির পশু কিনতেন। কিন্তু সচেতন ক্রেতারা লোক সমাগমের মধ্যে পশু কিনতে আগ্রহী নন। তাই তারা খামারকে নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কারণ এখানে নিরাপদে পশু ক্রয় করার একটা পরিবেশ রয়েছে। প্রতিদিন চার-পাঁচটা গরু বিক্রি হচ্ছে। আমার খামারে ৭৫টি গরু ছিল। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত ৩৫টা বিক্রি হয়ে গেছে। আগামী ক’দিনের মধ্যে বাকি গরু গুলোও বিক্রি হয়ে যাবে আশা করি।
তিনি আরও বলেন, আমরা গরুর গায়ে কোন ইনজেকশন পুশ করি না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে নিজ হাতে গরুগুলোর যত্ন নিই। অনেকে গরু কিনলেও তাদের রাখার জায়গা নাই। তাই আমরা আমাদের খামারে গরু রাখার সুযোগ দিচ্ছি। গরুর খাবারও বিনামূল্যে দিচ্ছি। করোনার প্রকোপ কখন কাটে কেউ বলতে পারে না। এবছর মানুষ অনেকাংশে খামারমুখী হয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি আগামী বছরও মানুষ খামার থেকে গরু কিনবেন।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. সেতু বলেন, করোনাকালীন সময়ে সচেতন মানুষ খামারের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন। আমাদের সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী চট্টগ্রামের সব খামার থেকে ৭১ হাজার কোরবানির পশু বিক্রি হয়েছে। দুটো বিষয়কে আমরা উৎসাহিত করছি। একটি হলো অনলাইন পশুর হাট, অপরটি খামারির আঙ্গিনা থেকে গরু কেনার বিষয়টি। পাশাপাশি খামারিদের সব ধরনের সহযোগিতাও করে যাচ্ছি।