জিরো কুপন বন্ডের মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহের ঘোষণা দিয়েছে ডাক বিভাগের মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি ‘নগদ’। যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) আয়োজিত বাংলাদেশে বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট এক রোড শোতে সোমবার এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
এসইসির অনুমোদন পেলে দেশের যেকোনো মোবাইল বা ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানির জন্য এটিই হবে প্রথম কোনো বন্ড ছাড়ার ঘটনা। পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে ৫০০ কোটি টাকার জিরো কুপন বন্ডটির অভিহিত মূল্য বেড়ে হবে ৭৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ নগদের বন্ডে বিনিয়োগকারীরা পাঁচ বছর পর বিনিয়োগের ওপর ৫০ শতাংশ মুনাফা পাবেন।
জিরো কুপন বন্ড ছাড়ার ঘোষণার পর থেকে ‘নগদ’-এর বন্ডে বিনিয়োগ করতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি করেছে ‘নগদ’। ইতিমধ্যে কিউ গ্লোবাল লিমিটেড নামে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ডিজিটাল কোম্পানি এই বন্ডে ৩ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার আগ্রহ দেখিয়েছে।
রিভারস্টোন ক্যাপিটাল লিমিটেড বন্ডটির অ্যারেঞ্জার হিসেবে কাজ করছে। একই সঙ্গে গ্রিন ডেল্টা ক্যাপিটাল লিমিটেড ট্রাস্টি’র দায়িত্ব পালন করছে।
সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তহবিল সংগ্রহের জন্য পুঁজিবাজারে বন্ড ছেড়ে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা ধার করে। বিনিময়ে কোনো বন্ডে মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময় পর পর সুদ দেওয়া হয়, যেগুলোকে নিয়মিত বন্ড বলা হয়। আর কোনোটিতে সুদ না দিয়ে অভিহিত মূল্যের ওপর ডিসকাউন্ট বা ছাড়ে বিক্রি করা হয় এবং মেয়াদ শেষে পুরো অভিহিত মূল্য ফেরত দেওয়া হয়। এগুলোকে জিরো কুপন বন্ড বলা হয়।
বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ ‘নগদ’ তাদের ভবিষ্যতের প্রয়োজনীয় ডিজিটাল অবকাঠামো নির্মাণ, নেটওয়ার্ক তৈরি, কার্যকরী প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা, আইটি সরঞ্জাম সংগ্রহ, বিপণন ও প্রচারের কাজে খরচ করবে। ইতিমধ্যে বন্ডের বিষয়ে এসইসির কাছ থেকে প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছে বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে নগদ।
এ বিষয়ে ‘নগদ’-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কো-ফাউন্ডার তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে সাম্প্রতিক সময়ে বন্ডের বাজারও প্রাণবন্ত হয়েছে উঠেছে। নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা বন্ডকে আরও একটি উৎস হিসেবে বিবেচনা করছি। তাছাড়া ‘নগদ’ সবসময়ই উদ্ভাবনী কোম্পানি হিসেবে অগ্রযাত্রা ধরে রেখেছে এবং সে কারণেই আমরা প্রথাগত অর্থায়নের চেয়ে বন্ডের বাজারকে বেশি পছন্দ করছি।
এসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশের পুঁজিবাজার, বিশেষত ঋণ বাজারের উন্নয়নে কাজ করছে এসইসি, যা আমাদের শিল্প ও অবকাঠামোর দীর্ঘমেয়াদি প্রয়োজনে অর্থায়নের জন্য অত্যাবশ্যক। আশা করি ‘নগদ’-এর বন্ড বাজারে আসা আমাদের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা এবং অন্যান্য কোম্পানিকে উৎসাহিত করবে।’
ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘নগদ’ এর উদ্বোধন করেন। দুই বছরের মধ্যে ‘নগদ’ ৫ কোটি ৩০ লাখ গ্রাহক পেয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের (অর্থ বিভাগ) সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, ‘নগদ’ লিমিটেডের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. কামাল, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিআইডিএ)-এর নির্বাহী চেয়ারমান মো. সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. নজরুল ইসলাম, কিউ গ্লোবাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভেন ল্যান্ডম্যানসহ বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মূলত বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরার উদ্দেশ্য নিয়ে বিএসইসি বিনিয়োগ বিষয়ক এই রোডশো’র আয়োজন করেছে, যেখানে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধি ছাড়াও প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ী এবং বিনিয়োগকারীরা অংশ নিচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্রের চারটি শহর নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, লস অ্যাঞ্জেলেস (ক্যালিফোর্নিয়া) এবং সিলিকন ভ্যালি (স্যান্টা ক্লারা)-তে আগামী ২ আগস্ট পর্যন্ত চারটি রোডশো অনুষ্ঠিত হবে।-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি