প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে: সংসদ
ডিসি’র তদন্তের নির্দেশ
নয়ন দাস, কুড়িগ্রাম: উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ পরিবেষ্টিত দ্বীপ ইউনিয়ন সাহেবের আলগা ইউনিয়নে কর্মসৃজন প্রকল্পে শ্রমিকদের ৩৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভাগবাটোয়ারা করার সংবাদ পত্র পত্রিকায় প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়েছে। একটি সুবধাভোগী পক্ষ ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেও পার পায়নি।
ওই এলাকার বঞ্চিত শ্রমিকরা জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় এমপি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়ার পর অনিয়মের ঘটনা তদন্তের জন্য উলিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৩১ জুলাই উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নে চরদুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে ২০২০-২১ অর্থ বছরে কর্মসৃজন কর্মসূচি (মঙ্গা) প্রকল্পে ৮৮৬ জন শ্রমিক রাস্তাসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক মাটির কাজ করেন। শ্রমিকরা দু’দফায় ৮০ দিন কাজ করেন। দুশো টাকা করে ৮৮৬জন শ্রামকের ৮০ দিনের পাওনা হিসেবে ১ কোটি ৪১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়। প্রতি শ্রমিকের জন্য ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ তোলা হলেও বিভিন্ন খরচের কথা বলে ইউপি চেয়ারম্যান সিদ্দিক আলী মন্ডল ও মেম্বারগণ প্রত্যেকের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা করে কর্তন করার সিদ্ধান্ত জানালে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়। পরে ব্যাংক কর্মকর্তারা ১৬ হাজার টাকা করে শ্রমিকদের হাতে তুলে দিলেও বাইরে অপেক্ষায় থাকা চেয়ারম্যান ও মেম্বারসহ তাদের গুন্ডা বাহিনী ৪ হাজার টাকা করে কেটে নেয়। এসময় হুড়োহুড়িতে কয়েকজন শ্রমিক টাকা না দিয়ে পালিয়ে গেলে পরে মধ্যরাতে তাদেরর বাড়ী বাড়ী গিয়ে টাকা জোর করে তুলে নেয় এই সন্ত্রাসী দলটি। এভাবে ৩৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় এমপি’র কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়।
অভিযোগকারী নুরুল ইসলাম লিখিত অভিযোগে জানান. তিনি স্থানীয় নন এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান দৈ খাওয়ার চর নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। করোনাকালিন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে পেটের দায়ে ওই প্রধান শিক্ষক ও তার অপর ৫ শিক্ষক আত্মমর্যাদা জলাঞ্জলি দিয়ে কাজ নেন সরকারের কর্মসৃজন প্রকল্পে। সেখানে তারা ৮০ দিন কাজ করে ১৬ হাজার টাকা পেলেও তাদের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা জোর করে হাতিয়ে নেয়।
নুরল ইসলাম আরো জানান, ব্যাংক কর্মকর্তাদের কাছ থেকে মজুরির টাকা নিয়ে বের হতেই বারান্দায় বসে থাকা আলী হোসেন, ইউসুফ আলী ও আয়নাল হক মৃধা এই ৩ ব্যক্তি প্রত্যেক উপকারভোগিদের কাছ থেকে জোর করে ৪ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এসময় আমিসহ অন্য শিক্ষকরা চার হাজার করে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ইউসুফ আলী গংরা হুমকি ধামকি দেন। তারা বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর নির্দেশে টাকা তোলা হচ্ছে। এতে বাধ্য হয়েই তিনিসহ তার স্কুলের শিক্ষক মনসুর আলী, শাহীন আলম, শহিদুল আলম এবং শহিদুল ইসলাম তাদেরকে ২০হাজার টাকা দেন। পরে অসহায় শিক্ষকরা তাদের দেয়া ২০হাজার টাকার মধ্যে ১০হাজার ফেরত চেয়ে হাতে পায়ে ধরলেও মন গলেনি স্থানীয় ইউপি মেম্বার ও চেয়ারম্যানের। বরং তারা উল্টো তাদের জীবননাশের হুমকি দেন।
তিনি আরও বলেন, গত ৩ জুলাই মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যানের তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন থেকে ফোন দিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে জেলা প্রশাসক এবং স্থানীয় এমপি বরাবর একটি লিখিত অভিযোগে দায়ের করেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন মন্টুর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোন মন্তব্য করতে পারব না।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ভিডিও ফুটেজ দেখে সংশ্লিষ্ট ইউএনও কে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তদন্তের প্রতিবেদন পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে ওই শিক্ষকের লিখিত অভিযোগ এখনও পাইনি বলেও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে উলিপুর ইউএনও নুরে জান্নাত রুমি জানান, ঘটনা শুনেছি। এখনো নির্দেশপত্র হাতে পাইনি। পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক এমএ মতিন অভিযোগ পাবার কথা স্বীকার করে বলেন, একজন শিক্ষক কতটুকু অসহায় হলে শ্রমিকের কাজ করতে পারেন। আর তাদের ন্যায্য মজুরি জোরপূর্বক হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি অত্যন্ত ঘৃণিত। শুধু এসব শিক্ষকদের নয়, সেখানে বেশির ভাগ উপকারভোগির কাছ থেকে একইভাবে ৪হাজার করে টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে এর সত্যতা পাই। এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবার সুপারিশ করব।