বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
কোভিড থেরাপির যুগান্তকারী ওষুধ অ্যান্টিবডি ককটেল তৈরি হচ্ছে ভারতে। মহারাষ্ট্রের কোলাপুরের একটি বায়োমেডিক্যাল কোম্পানি তৈরি করেছে এই ওষুধ। প্রাথমিকভাবে এই ওষুধের ক্লিনিকাল ট্রায়াল হয়েছে পশুর শরীরে। হিউম্যান ট্রায়াল বা মানুষের শরীরে এই ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রথম পর্ব শুরু হবে। গবেষকরা বলছেন, কোভিড সংক্রমণ মৃদু বা মাঝারি হলে এই ওষুধে খুব তাড়াতাড়ি সারবে। চিকিৎসার খরচও কমবে।
অ্যান্টিবডি ককটেলের থেরাপিতে করোনা রোগীদের দ্রুত সেরে ওঠার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এই থেরাপি এখনও গবেষণার স্তরেই আছে, তবে দেশে জরুরি ভিত্তিতে এর প্রয়োগ শুরু হয়েছে। অ্যান্টিবডি ককটেল অর্থাৎ জোড়া অ্যান্টিবডির ডোজ খুব তাড়াতাড়ি করোনা রোগীদের দিতে পারলে হাসপাতালে ভর্তির ঝুঁকি কমবে বলেই মত ডাক্তারদের। এতদিন মার্কিন কোম্পানির থেকে অ্যান্টিবডি ককটেলের ডোজ কেনা হচ্ছিল, ভারতে উৎপাদন শুরু হলে রোগীদের থেরাপি আরও সহজে ও কম খরচে হবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
কীভাবে তৈরি হয়েছে ওষুধ?
আইসেরা বায়োলজিক্যাল তৈরি করেছে এই অ্যান্টিবডি ককটেল। পুণের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সহযোগিতায় ভাইরাল অ্যান্টিজেন নিয়ে তার প্রতিরোধী মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি তৈরি করেছেন গবেষকরা। আইসেরা বায়োলজিক্যালের ডিরেক্টর নন্দকুমার কদম বলেছেন, সার্স-কভ-২ ভাইরাসের প্রোটিন সরবরাহ করেছে সেরাম ইনস্টিটিউট। এই ভাইরাল প্রোটিন ঘোড়ার শরীরে ইনজেক্ট করে অ্যান্টিবডি তৈরি করা হয়েছে।
ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল এন কে গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ঘোড়ার সেরামে তৈরি এই অ্যান্টিবডি বিশুদ্ধ এবং এর কার্যকারিতাও বেশি। মূলত পলিক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেকে মিশ্রণ তৈরি করা হয়েছে। মার্কিন কোম্পানির অ্যান্টিবডি ককটেল দুই রকম মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি থেকে তৈরি। আইসেরার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পলিক্লোনাল অ্যান্টিবডির মিশ্রণ আরও দ্রুত কাজ করবে। ভাইরাস প্রতিরোধে প্রায় ৯৫ শতাংশ কার্যকরী হবে।
ভারতে তৈরি হওয়ার সুবিধা কী?
আইসিএমআরের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল বলছেন, আমেরিকার বায়োটেকনোলজি কোম্পানি রিজেনারেশন ফার্মাসিউটিক্যালসের তৈরি অ্যান্টিবডি ককটেলের দাম অনেক বেশি। তাদের তৈরি ওষুধের ব্র্যান্ড নাম রিজেন-কভ (REGEN-COV) । দুরকম মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে এই ককটেল তৈরি করা হয়েছে—ক্যাসিরিভিমাব (REGN10933) ও ইমডেভিমাব (REGN10987) । ভারতেও এই ওষুধের থেরাপি শুরু হয়েছে, তবে ওষুধের একটি ডোজ ১২০০ মিলিগ্রামের যার মধ্যে ৬০০ মিলিগ্রাম থাকবে ক্যাসিরিভিমাব ও ৬০০ মিলিগ্রাম ইমডেভিমাব। দেশের বাজারে এই ককটেলের দাম পড়বে ৫৯ হাজার ৭৫০ টাকা (ট্যাক্স সমেত)। আর মাল্টিডোজ প্যাকের দাম হবে ১ লক্ষ ১৯ হাজার টাকা। প্রতি প্যাকে দুজন কোভিড রোগীর থেরাপি করা যাবে। সেদিক থেকে ভারতে এই ওষুধ তৈরি হলে দাম অনেক কম পড়বে। অনেক সহজেই রোগীদের থেরাপি করা যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অ্যান্টিবডি ককটেলে করোনা রোগীদের চিকিৎসা করলে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমবে। হাই-রিস্ক গ্রুপে রয়েছেন যে কোভিড রোগীরা তাঁদের অবস্থা খারাপের দিকে যাওয়ার আগে অ্যান্টিবডি ককটেলের থেরাপিতে সংক্রমণ কমানো যাবে বলেই আশা করা হচ্ছে। ভ্যাকসিন দিলে বা করোনার ওষুধ দিলে ১৪ দিন পর থেকে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু এই ককটেল ওষুধে সঙ্গে সঙ্গেই অ্যান্টিবডি তৈরি হতে থাকবে রক্তে। এই অ্যান্টিবডি ইমিউন সিস্টেমকে সক্রিয় করবে।