খোন্দকার মহিতুল ইসলাম রঞ্জু:
রাজবাড়ির কালুখালি রেলওয়ে স্টেশন থেকে আমাদের গ্রামের পথে যেতে একটি বিশাল বটগাছ পড়তো। এর বিশালত্ব আমরা ছোটবেলায় বিস্ময়মাখা চোখে দেখতাম। ভয়ও পেতাম খুব। এই বটগাছের ডালপালায় নাকি যত রাজ্যের ভূত-পেত্নীর বসবাস। প্রত্যক্ষদর্শীরা তার বর্ণনা দিতো আর গ্রামের মানুষ হা করে সে কল্পকথা শুনতো। কেমন গল্প? একজন বললো: তখন ভর সন্ধ্যা। আমি বটতলা দিয়ে যাচ্ছি। হঠাৎ দেখি কালো রঙের একটি বিড়াল। চোখ জুলজুল করে আমার দিকে তাকালো। আমি তখন ভয়ে দোয়া ইউনুস ছুরা পড়ছি। বিড়ালটি আমার চোখের সামনে বটগাছ বেয়ে উপরে উঠে গেল। কালো বিড়ালের রঙটিও সাথে সাথে গেল পাল্টে।
আরেকজনের বর্ণনা শুনুন। নিশীথ রাত। চারপাশে জনমানব নাই। ট্রেন থেকে নেমেছি। বাড়ি যাব। এই বটগাছের নিচে দিয়েই যেতে হবে। বটগাছটির নিচে আসতেই বুক ঢিপঢিপ করতে লাগলো। আমি হাঁটছি। মনে হচ্ছে কেউ একজন আমাকে অনুসরণ করছে। বটগাছের নিচে চোখ পড়তেই দেখি শাড়ি পরিহিতা এক সুন্দরী নারী। আমারই দিকে কোমল চোখে তাকিয়ে আছে। মাথায় তার ঘোমটা। ভয়ে আমি কাতর। মেয়েটি এবার চোখ পাকিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি কি আর তখন আছি! সামনে এগুবো না পিছাবো বুঝতে পারছি না। তখন দেখি কি-শাড়ি পরিহিতা ওই বউটি গাছ বেয়ে উপরে উঠছে। গল্পকারের ভাষ্য অনুযায়ী একসময় বটগাছের মাথায় উঠে গেল এই মেয়েটি। এমন কথা শুনে গা ছমছম করবে, সেটা খুব স্বাভাবিক।
আমার বাবার মুখেও এই বটগাছের গল্প শুনেছি অনেক। আমি জানিনা, তিনিও এসব কল্পকথা বিশ্বাস করতেন কি না। তবে যেমন করে আমাদের বলতেন, কথক হিসেবে তার তুলনা মেলা ভার। তখন কলকাতার ট্রেন রাতবিরেতে এসে স্টেশনে থামতো। শিয়ালদহ থেকে আসতো গোয়ালন্দ মেল। গোয়ালন্দ থেকে শিয়ালদহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেত কলকাতা মেল। আমার বাবা কাঁচরাপাড়ায় রেলে চাকরি করতেন। এই রেলপথে তার মাঝেমধ্যেই যাওয়া আসা করতে হতো। গা শিহরণ করা এসব গল্প শুনে ছোটবেলায় খুব ভয় পেতাম। কিন্তু এখন সে রামও নাই, সে অযোধ্যাও নাই। গ্রামে বিদ্যুৎ আসার পর ভূত পরীরা যে কোথায় পালালো! এহেন ভূত-পরীর আশ্রয়স্থলকে কেটে ফেলা হয়েছে। কাটা গোড়া থেকে আবার গজিয়ে উঠেছে সেই বটগাছ। ছবি তুললাম নতুন গজানো বটগাছটির।