বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জ: ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউপির রামপুর গ্রামে হাজী ইউসুফ আলী এতিমখানায় হাফিজিয়া দাখিল মাদ্রাসার এতিম শিশুদের মারধরের ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়া ব্যাপকভাবে প্রচার ও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় জনমনে নানা ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
বুধবার সকালে মাদ্রাসার শিক্ষককে পুলিশ অবশেষে আটক করেছে। পুলিশ বাদী হয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
এ ঘটনায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সহকারী পুলিশ সুপার (ছাতক-দোয়ারা বাজার সার্কেল) বিল্লাল হোসেন, ওসি মিজানুর রহমান, এসআই হাবিবুর রহমান, এসআই দেওয়ান উজ্জ্বল হোসেন, এসআই নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে বিভিন্ন স্থানে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এতিম ছাত্রদের নির্যাতনকারী সেই মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল মুকিতকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছেন।
বুধবার সকালে ছাতক উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্ট থেকে বিতর্কিত শিক্ষক মাওলানা আব্দুল মুকিতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার কালারুকা ইউপির করছখালী গ্রামের মৃত ইদ্রিছ আলীর ছেলে মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র আবু তাহের (৯), গোবিন্দগঞ্জ সৈদেরগাঁও ইউপির দিঘলী চাকলপাড়া গ্রামের মৃত হাফিজুল ইসলাম মামুনের ছেলে রবিউল ইসলাম নিলয় (১০), জাউয়াবাজার ইউপির গনিপুর গ্রামের কাজী শওকতুর রহমানের ছেলে কাজী শফিউর রহমান শাফিকে (১১) মারপিট করেছেন মাদ্রাসার সুপার।
তবে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি কয়েক মাস আগের ঘটনা। নির্যাতনের ঘটনাটি মাদ্রাসার অন্য কোনো শিক্ষক গোপনে ধারণ করে। এ নিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ বলছে- ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ায় যে শিক্ষক নির্যাতন করেছিলেন এবং যিনি ভিডিও ধারণ করেছিলেন উভয়কেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
দুই মিনিট দুই সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, পাজামা-পাঞ্জাবি পরা তিন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে আছে। ওই মাদ্রাসা শিক্ষক তাদের মধ্যে এক শিশুর দুই হাতে বেত দিয়ে আঘাত করছেন।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, শিক্ষকের পিটুনি খেয়ে শিশুটি উচ্চকণ্ঠে হুজুর আর ইতা করতাম না হুজুর, আর ইতা করতাম না বলে চেঁচিয়ে কাঁদছে। তবে এরপরও শিশুটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বেত দিয়ে আঘাত করতে থাকেন ওই শিক্ষক। একপর্যায়ে শিশুটি ওই শিক্ষকের পায়ে ধরেছে। পরে স্টিলের স্কেল দিয়ে ওই শিক্ষক তাকে দফায় দফায় মারতে থাকে। তার আগে আরও দুই শিশু শফিউর ও নিলয়কেও পেটানো হয়।
মাদ্রাসাছাত্রকে নির্যাতনসহ ফেসবুকে মারধরের ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় মাদ্রাসা সুপার মাওলানা আব্দুল মুকিতকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মাদ্রাসার শিক্ষক জানান, তিন ছাত্র বিছানায় একাধিকবার প্রস্রাব করায় ২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর সকালে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। মাদ্রাসার শিক্ষকদের রুমে সহকারী শিক্ষক মাওলানা জুবায়ের আহমদ সানি, মো. আবু বক্কর এবং মাদ্রাসার হাফিজি শিক্ষক মিছবাহ উদ্দিনদের উপস্থিতিতে তিন ছাত্রকে শারীরিকভাবে বেধড়ক মারধর করেন উপজেলার ইসলামপুর ইউপির রহমতপুর গ্রামের আব্দুল গনির পুত্র মাওলানা আব্দুল মুকিত (৪০)।
মারধরের ভিডিও একই মাদ্রাসার হাফিজি শিক্ষক মিছবাহ উদ্দিন তার ব্যক্তিগত মোবাইল দিয়ে ধারণ করে রেখে দেন। মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল মুকিত ও তার রেকডকৃত ভিডিও ধারণকারী হাফিজি শিক্ষক মিছবাহ উদ্দিনে এ ঘটনা নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। পরে হাফিজি শিক্ষক মিছবাহ উদ্দিন মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আব্দুল মুকিতকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা নিয়ে দীর্ঘ প্রায় ১ বছর পর শিক্ষক মিছবাহ উদ্দিন তার পরিচিত Saymon Anwar এর ফেসবুক আইডির মাধ্যমে মাদ্রাসার সুপার কর্তৃক মারধরের ভিডিও গত ৫ নভেম্বর ফেসবুকে আপলোড করেন। এ মারধরের ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকসহ বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়া ব্যাপকভাবে প্রচার করলে এটি ভাইরাল হওয়ায় জনমনে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়।
এভাবে শিশুদের পেটানো ছাতক উপজেলার কালারুকা ইউপির রামপুর গ্রামে লন্ডন প্রবাসীদের উদ্যোগে হাজী ইউসুফ আলী এতিমখানায় হাফিজিয়া দাখিল মাদ্রাসার মোহতামিম (অধ্যক্ষ) মো. আব্দুল মুকিত কয়েক বছর আগে ওই মাদ্রাসায় নিয়োগ পান।
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মো. কমর উদ্দিন জানান, ঘটনাটি বেশ আগে ঘটেছে। এ ঘটনায় নির্যাতনকারী শিক্ষকসহ ভিডিও ধারণকারী শিক্ষকও জড়িত। দুজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেওয়ায় ভিডিওটি ভাইরাল হয়। তাই দুজনকেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গোলাম রসুল জানান, মাওলানা আব্দুল মুকিতকে মাদ্রাসা থেকে অব্যাহতি দিয়ে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিন শিশুকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে থানার ওসি মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এতিম শিশুদের নির্যাতনকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদী হয়ে মামলার প্রস্তুতি চলছে।