Home অন্যান্য মহিলাদের জীবনে করোনার ছাপ কতটা

মহিলাদের জীবনে করোনার ছাপ কতটা

ছবি সংগৃহীত

সঞ্জীব আচার্য

কর্ণধার সিরাম অ্যানালিসিস, কলকাতা

মহিলাদের কোভিড সংক্রমণের ঝুঁকি পুরুষদের থেকে কম। বিজ্ঞানীদের গবেষণায় এমনটাই প্রমাণ মিলেছে। সার্স-কভ-২ ভাইরাস হৃদপিণ্ডে খুব বড় প্রভাব ফেলছে। ভাইরাসের সংক্রমণে রক্ত জমাট বাঁধতে দেখা যাচ্ছে হৃদপিণ্ডে। তীব্র প্রদাহ হচ্ছে হৃদপেশীতে। সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত রোগীদের অনেকেরই হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মহিলাদের এই সম্ভাবনা কম। কারণ ইস্ট্রোজেন হরমোন। এই হরমোনই যে কোনও কার্ডিওভাস্কুলার রোগ প্রতিরোধে বড় ভূমিকা নেয়। বিজ্ঞানীদের দাবি, মহিলাদের ইস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবেই ভাইরাসের সংক্রমণ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারছে না।

স্ট্রোজেন হরমোন এই রিসেপটর প্রোটিনের কার্যকারিতাকেই কমিয়ে দেয়।  ইস্ট্রোজেন কিডনিতে এসিই-২ রিসেপটর প্রোটিনের কাজ করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এখন দেখা যাচ্ছে হার্টেও এই রিসেপটর প্রোটিনের প্রভাব কমিয়ে দিচ্ছে ইস্ট্রোজেন।  এই প্রোটিনের প্রকাশ যদি কমে তাহলেই ভাইরাস আর এই রিসেপটরকে চিহ্নিত করতে পারবে না। ফলে কোষে ঢোকার রাস্তাটাই খুঁজে পাবে না। গবেষকরা দাবি করছেন, পুরুষদের শরীরে এই রিসেপটর প্রোটিনের সংখ্যা মহিলাদের থেকে বেশি থাকতে পারে। সেই কারণেই পুরুষের শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণের হারও অধিক।

Women grieve stillborn babies as COVID-19 spreads in India | Coronavirus pandemic | Al Jazeera

করোনা কতটা ছাপ ফেলেছে মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যে

গবেষণা বলছে, দীর্ঘ লকডাউনের এই পর্যায়ে গার্হস্থ্য হিংসা যেমন বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানসিক অবসাদ। কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে কমবয়সীদের মধ্যে। সার্চ ইঞ্জিনে এই নিয়ে খোঁজাখুঁজিও হয়েছে। আবার গর্ভপাতের বিষয়ে জানতে চেয়ে অনলাইনে সার্চ করেছেন মহিলারা। অ্যাবরশন পিল নিয়ে সার্চের রেজাল্ট বেশি। ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী মহিলারাই সবচেয়ে বেশি অ্যাবরশন পিল নিয়ে সার্চ করেছেন।

বাড়িতে কীভাবে গর্ভপাত করানো যায় সেই নিয়ে খোঁজাখুঁজির ঝোঁক বেড়েছে বয়ঃসন্ধির মেয়েদের মধ্যে। গর্ভনিরোধক পিল নিয়েও সার্চ করছেন মহিলারা।

Fewer women than men taking Covid shots in India's vaccination drive - DIU News

মৃত্যুর আতঙ্ক, স্ট্রেস থেকে ইনসমনিয়া

করোনা সঙ্কটের প্রভাব পড়েছে মহিলাদের হাইজিনেও। সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাড়িতে থাকার কারণে অনেক মহিলাই স্যানিটারি প্যাড ব্যবহার করছেন না। সংক্রমণের ভয়েও প্যাড ব্যবহারে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে অনেকেরই। ১৮ বছরের নিচে ৫৮ শতাংশ মেয়েদের মধ্যে এমন দেখা গেছে। আবার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেও এই ধারণা তৈরি হয়েছে। প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতে অন্তত ৫১ শতাংশ মহিলা বলেছেন তাঁরা লকডাউনের এই সময় হয় স্যানিটারি প্যাড কিনতে পারেননি, না হয় প্যাড ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। শহরের অনেক মহিলাই স্যানিটারি প্যাডের বদলে ট্যাম্পনের ব্যবহার শুরু করেছেন। ট্যাম্পন নিয়ে অনলাইনে সার্চও হয়েছে। ৭০ শতাংশ মহিলা স্যানিটারি প্যাডের বদলে ট্যাম্পনের ব্যবহার শুরু করেছেন।

গবেষণা বলছে, নানাভাবে মানসিক চাপে ভুগছেন মহিলারা। মৃত্যুভয় তৈরি হয়েছে অনেকের মনে। আপনজনদের হারানোর ভয় থেকে ট্রমাও তৈরি হয়েছে। ভাইরাসের সংক্রমণে তাঁদের তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হবে, সেখান থেকে মৃত্যু হবে এমন আতঙ্ক তৈরি হয়েছে অনেকের মনেই। হয় তীব্র অবসাদ, না হলে সোশ্যাল ফোবিয়া। তাছাড়া ভুল বকা, ভুলে যাওয়া, স্লিপিং ডিসঅর্ডার তো রয়েছেই। মানসিক চাপ এতটাই যে তার থেকে স্লিপিং ডিসঅর্ডার দেখা দিচ্ছে অনেকের মধ্যেই। অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার, ইনসমনিয়ার শিকার হচ্ছেন অনেকে।

গার্হস্থ্য হিংসা কি বেড়েছে?

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ একদিকে ভয়ঙ্কর স্বাস্থ্য বিপর্যয় ডেকে এনেছে, অন্যদিকে সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে মানুষ তার স্বাধীনতা হারিয়ে অন্দরবাসে থাকতে বাধ্য হয়েছে। চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি জীবনের হাঁসফাঁস আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গার্হস্থ্য হিংসা, নারী নির্যাতনের মতো ঘটনা। সাইবার ক্রাইমের শিকার হয়েছেন মহিলারা। বাড়িতেই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্করা। আর এই অপরাধমূলক ঘটনার বাড়বৃদ্ধি বেশি হয়েছে রেড জ়োন চিহ্নিত এলাকাগুলিতে।

সমাজত্ত্ববিদদের অনেকেরই মত, মানুষ চরম আতঙ্ক ও আশঙ্কায় ভুগছে। যার থেকেই বিরক্তিভাব, অসহিষ্ণুতা বাড়ছে। সামাজিক মেলামেশার রাস্তা যেহেতু বন্ধ তাই পরিবারের লোকজনের উপরেই বিরক্তি বা রাগের প্রভাব বেশি পড়ছে। যার কারণেই গার্হস্থ্য হিংসা বাড়ছে। মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতনের ঘটনা অনেক বেশি বেড়েছে, এমন তথ্য সামনে এনেছে জাতীয় মহিলা কমিশনও। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা ৬৬% বেড়েছে রেড জ়োনগুলিতে। শিশুরাও যৌন নিপীড়ণের শিকার। ঘরবন্দি অবস্থায় মানসিক স্থিতি বিগড়ে যাচ্ছে অনেকেরই। মেজাজ হারাচ্ছেন বহু মানুষ। যার কারণে এই ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা বেড়ে চলেছে।