Home কৃষি অগ্রহায়ণ মাসের কৃষি (১৬ নভেম্বর-১৫ ডিসেম্বর)

অগ্রহায়ণ মাসের কৃষি (১৬ নভেম্বর-১৫ ডিসেম্বর)

ভুট্টা

কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম

বাঙালির ঐতিহ্য নবান্ন উৎসবের সময় অগ্রহায়ণ মাস। কৃষি ভুবনে জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা ও নিরাপদতার একটি নিশ্চিত মৌসুম। তাহলে আসুন আমরা জেনে নেই অগ্রহায়ণ মাসের কৃষিতে আমাদের করণীয় কাজগুলো।

আমন ধান
এ মাসে প্রায় আমন ধান পেকে যাবে। তাই রোদেলা দিন দেখে ধান কাটতে হবে। ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকায় আমন ধান শতকরা ৮০ ভাগ পাকলে কেটে ফেলা ভালো। আগামী মৌসুমের জন্য বীজ রাখতে চাইলে সুস্থ সবল ভালো ফসল কেটে, মাড়াই-ঝাড়াই করার পর রোদে ভালোমতো শুকাতে হবে। শুকানো গরম ধান আবার ঝেড়ে পরিষ্কার করে এবং ছায়ায় রেখে ঠাণ্ডা করতে হয়। পরিষ্কার ঠাণ্ডা ধান বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে।

বোরো ধান
বোরো ধানের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময়। রোদ পড়ে এমন উর্বর ও সেচ সুবিধাযুক্ত জমি বীজতলার জন্য নির্বাচন করতে হয়। যেসব এলাকায় ঠাণ্ডার প্রকোপ বেশি সেখানে শুকনো বীজতলা তৈরি করতে পারেন। এক্ষেত্রে প্রতি দুই প্লটের মাঝে ২৫-৩০ সেমি. নালা রাখতে হবে। বোরো মওসুমের পানি সাশ্রয়ী জিংকসমৃদ্ধ জাত ছাড়াও এলাকাভিত্তিক আধুনিক উচ্চফলনশীল ও ব্রি হাইব্রিড ধানের জাত নির্বাচন করতে পারেন। বীজ বপন করার আগে ৬০-৭০ ঘণ্টা জাগ দিয়ে রাখতে হবে। এ সময় ধানের অঙ্কুর গজাবে। অঙ্কুরিত বীজ বীজতলায় ছিটিয়ে বপন করতে হবে। প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ৮০-১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

গম
অগ্রহায়ণের শুরু থেকে মধ্য অগ্রহায়ণ পর্যন্ত গম বোনার উপযুক্ত সময়। এরপর গম যত দেরিতে বপন করা হবে ফলনও সে হারে কমে যাবে। দো-আঁশ মাটিতে গম ভালো হয়। অধিক ফলনের জন্য এলাকাভিত্তিক ও ঘাতসহিষ্ণু আধুনিক উচ্চফলনশীল গমের জাত বপন করতে হবে।

ভুট্টা
ভুট্টা গত মাসে আবাদ না করে থাকলে এ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জমি তৈরি করে এলাকাভিত্তিক ও ঘাতসহিষ্ণু আধুনিক উচ্চফলনশীল জাতের বীজ বপন করতে হবে।
সরিষা ও অন্যান্য তেল ফসল
তেল ফসলের মধ্যে সরিষা অন্যতম। তাছাড়া বাদাম, সূর্যমুখী এসব আবাদ করতে পারেন।

আলু
উপকূলীয় অঞ্চলে এ মাসেও আলু আবাদ শুরু করা যায়। অন্যান্য স্থানে রোপণকৃত আলু ফসলের যত্ন নিতে হবে।

শাকসবজি
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, শালগম, মুলা এসব বড় হওয়ার সাথে সাথে চারার গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। চারার বয়স ২-৩ সপ্তাহ হলে সারের উপরি প্রয়োগ করতে হয়। সবজি ক্ষেতের আগাছা, রোগ ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করা প্রয়োজন।

গাছপালা
এবারের বর্ষায় রোপণ করা ফল, ঔষধি বা বনজ গাছের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। গাছের গোড়ায় মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। প্রয়োজনে গাছকে খুঁটির সাথে বেঁধে দেয়া যেতে পারে।

প্রাণিসম্পদ
হাঁস-মুরগির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর ভালো সময় এখন। তাছাড়া সামনে শীতকাল আসছে। শীতকালে পোল্ট্রিতে রোগবালাইয়ের আক্রমণ বেড়ে যায় এজন্য সতর্কতা দরকার। গবাদিপ্রাণির রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে প্রাণী চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।

মৎস্যসম্পদ
এ সময় বার বার জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে মৎস্যবিদদের সাথে পরামর্শ করে চুন বা তুঁতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, সংক্ষেপে আগামী তথা অগ্রহায়ণ মাসের কৃষি উপস্থাপন করা হলো। বিস্তারিত কৌশল জানার জন্য স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করতে হবে। মনে রাখতে হবে আমাদের সম্মিলিত অংশগ্রহণই নিয়ে আসবে কৃষির কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।

লেখক : সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা। টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪, ই-মেইল : editor@ais.gov.bd