Home অন্যান্য পৌষ মাসের কৃষি

পৌষ মাসের কৃষি

ছবি সংগৃহীত

পৌষ মাসের কৃষি
(১৬ ডিসেম্বর-১৪ জানুয়ারি)

কৃষিবিদ ফেরদৌসী বেগম

পৌষ মাস ঘন কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে শীতের আগমন। সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, শীতের মাঝেও মাঠের কাজে সহায়তার জন্য আসুন সংক্ষেপে আমরা জেনে নেই এ মাসে সমন্বিত কৃষির সীমানায় কোন কাজগুলো আমাদের করতে হবে।
বোরো ধান
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন যারা এখনও বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করেননি তাদের জন্য পরামর্শ- বীজতলায় ব্রি ধান২৮/স্বল্পমেয়াদি জাতের পরিবর্তে ব্রি ধান৮৮ এবং ব্রি ধান২৯ এর পরিবর্তে ব্রি ধান৮৯, ব্রি ধান৯২, ব্রি ধান১০০ চাষ করুন। তুলনামূলক অল্প সময়ে অধিক ফলন ঘরে তুলুন। এছাড়াও অতিরিক্ত ঠাণ্ডার সময় বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢেকে রাখা যায় এবং বীজতলার পানি সকালে বের করে দিয়ে আবার নতুন পানি দেয়া যায়। সে সাথে প্রতিদিন সকালে চারার ওপর জমাকৃত শিশির ঝরিয়ে দিতে হবে। বীজতলায় সব সময় নালা ভর্তি পানি রাখতে হয়। চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এরপরও যদি চারা সবুজ না হয় তবে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম দিলে সুফল পাওয়া যায়।
গম
গমের জমিতে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। চারার বয়স ১৭-২১ দিন হলে গমক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করে একরপ্রতি ১২-১৪ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হয় এবং সেচ দিতে হয়। সেচ দেয়ার পর জমিতে জো এলে মাটির ওপর চটা ভেঙে দিতে হবে। গমের জমিতে যেখানে ঘনচারা রয়েছে সেখান থেকে কিছু চারা তুলে পাতলা করে দেয়া ভাল।
ভুট্টা
ভুট্টাক্ষেতের গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে। গোড়ার মাটির সাথে ইউরিয়া সার ভালো করে মিশিয়ে দিয়ে সেচ দিতে হয়।
আলু
চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পর অর্থাৎ দ্বিতীয়বার মাটি তোলার সময় ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হয়। দুই সারির মাঝে সার দিয়ে কোদালের সাহায্যে মাটি কুপিয়ে সারির মাঝের মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে।  ১০-১২ দিন পরপর এভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে না দিলে গাছ হেলে পড়বে এবং ফলন কমে যাবে।
তুলা
তুলা সাধারণত ৩ পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথম বার, বাকি ফলের ৩০% পরিপক্ব হলে দ্বিতীয় বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে।
ডাল ও তেল ফসল
মসুর, ছোলা, মটর, মাষকলাই, মুগ, তিসি পাকার সময় এখন। সরিষা বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে।
শাকসবজি
ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি সবজি নিয়মিত যত্ন নিতে হয়। বিভিন্ন শাক যেমন- লালশাক, মুলাশাক, পালংশাক একবার শেষ হয়ে গেলে আবার বীজ বুনে দিতে পারেন।
প্রাণিসম্পদ
শীতকালে পোলট্রিতে অপুষ্টি ও রোগবালাই প্রতিরোধের প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে হবে। শীতের তীব্রতা বেশি হলে পোলট্রি ও গবাদিপ্রাণির শেডে অবশ্যই মোটা চটের পর্দা লাগাতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
মৎস্যসম্পদ
 এ সময়ে পুকুরে পানি কমে যায়, তাই মাছের বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার। পানি দূষিত হয়। মাছের রোগবালাইও বেড়ে যায়। এ সময় আগামী বর্ষায় রুইজাতীয় মাছকে কৃত্রিম উপায়ে ডিম ফুটাতে ইচ্ছুক চাষিগণ প্রজননক্ষম বয়ঃপ্রাপ্ত মাছ সংগ্রহ করে মজুদ পুকুরে রেখে দেয়া প্রয়োজন।  
সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, শীতকাল  শুকনো মৌসুমে প্রতি ফসলে চাহিদামাফিক সেচ প্রদান নিশ্চিত করতে পারলে ফলন অনেক বেড়ে যাবে। কৃষির যে কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য আপনার নিকটস্থ উপজেলা কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়াও যেকোনো প্রশ্নের সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা ও যে কোনো মোবাইল নাম্বার থেকে কল করতে পারেন কৃষি তথ্য সার্ভিসের কৃষি কল সেন্টার ১৬১২৩ নম্বরে। আপনাদের সবার জন্য শুভ কামনা।

লেখক : সম্পাদক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা,  টেলিফোন : ০২৫৫০২৮৪০৪, মেইল : editor@ais.gov.bd