আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্বব্যাংকসহ ঋণদাতা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি নিয়ে যে প্রাক্কলন করে, সেটাকে ‘রক্ষণশীল’ বলেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। মহামারীর বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে চলতি অর্থবছরের বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ীই বাড়বে অর্থনীতির আকার; ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধিও অর্জিত হবে বলে তার আশা। গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জিডিপি নিয়ে আইএমএফের প্রাক্কলনের সূত্র ধরে অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে মুস্তফা কামাল বলেন, বর্তমান অর্থবছরে আমাদের বাজেটের আকার যেটা ধরেছি, সেখানে আমাদের যে জিডিপি প্রাক্কলিত আছে, সেটা ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আমরা বিশ্বাস করি, ৭ দশমিক ২ শতাংশ আমরা অর্জন করতে পারব। আপনারা জানেন, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং আইএমএফ সবসময় তারা একটু কনজারভেটিভ এ সমস্ত বিষয়ে।
আইএমএফ বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি ৬ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে পারে। বিশ্বব্যাংক যে হিসাব দিয়েছে, তাতে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি একটু বাড়িয়ে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে।
তবে ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অর্জনের আশার পেছনে যুক্তি দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যের চেয়ে বেশি হচ্ছে। রেমিট্যান্স প্রবাহও লক্ষ্যের চেয়ে বেড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। মুস্তফা কামাল বলেন, ভালো খবর হলো, এর আগে তাদের (আইএমএফের) দেওয়া আরেকটি পূর্বাভাসের চেয়ে এবারের সংখ্যাটা বড়। এ থেকে তার বিশ্বাস, ৭ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে সরকার।
অবশ্য রেমিট্যান্স নিয়ে অর্থমন্ত্রীর যে প্রত্যাশা, বাস্তবে তার বিপরীত চিত্র দেখা গেছে। চলতি বছর টানা ৫ মাস রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে। গত জুন থেকেই প্রতিমাসে রেমিট্যান্স কমছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ৮৬০ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, যা এর আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের একই সময়ে আসা রেমিট্যান্সের তুলনায় প্রায় ২১ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ১ হাজার ৮৯ কোটি ৪১ লাখ ডলার। অবশ্য রেমিট্যান্সে আগের বছরের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও ঈদের সময়ের বাড়তি প্রবাহের মাধ্যমে তা ২৫ বিলিয়ন ডলার হতে পারে আশা করছেন তিনি।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে রপ্তানি বাড়ার কথা উল্লেখ করে মুস্তফা কামাল বলেন, গত পাঁচ মাসে ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ, আর নভেম্বরে ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এভাবে এগোতে থাকলে রপ্তানি ৪৭ থেকে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের ‘নতুন মাইলফলক’ ছুঁতে পারে বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।
২০১৯-২০২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়েছিল বলে সরকার দাবি করে আসছিল। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় পর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো গত মাসে যে চূড়ান্ত হিসাব প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, মহামারীর শুরুর ধাক্কায় প্রবৃদ্ধি নেমেছে ৩ দশমিক ৫১ শতাংশে, যা তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম।
পরের অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও মহামারী পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় তা সংশোধন করে ৬ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছিল। সেটাও কমে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ হতে পারে বলে পরে সাময়িক হিসাবে দেখানো হয়েছে।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই গত জুন মাসে দেওয়া বাজেটে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, এ অর্থবছরে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৫ দশমিক ১ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি পেতে পারে।