তারাগঞ্জ ( রংপুর ) থেকে সংবাদদাতা: উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষি জমির ‘টপ সয়েল’ যাচ্ছে ইটভাটায়। এতে জমি উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে।
উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে ইটভাটা। তারাগঞ্জে আবাদি জমি আছে ১১ হাজার ৫৫২ হেক্টর। আর এখানে ইটভাটা আছে ২৯টি। প্রতিবছর ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে ঝলসে যায় কৃষকদের ফসল। এক যুগের বেশি সময় ধরে মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কম দামে কিনে এসব ইটভাটায় বেশি দামে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন। মূলত আমন মৌসুমে ধান ওঠার পর থেকে মাটি কাটার হিড়িক পড়ে যায়।
উপজেলার ইকরচালী, কুর্শা, সয়ার, হাড়িয়ারকুঠি ও আলমপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, আমন ধান ঘরে তোলার পর মাঠে কৃষকদের জমি ফাঁকা পড়ে আছে। কৃষকদের কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে সেসব জমির মাটি কিনে শ্রমিক দিয়ে কেটে ট্রলিতে করে আশপাশের ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে নেওয়া হচ্ছে। দেড় থেকে দুই ফুট গভীর করে জমিগুলোর মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।
খিয়ারজুম্মার দোলায় গিয়ে দেখা গেছে, দেড় কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ১২টি ইটভাটা। এসব ইটভাটার জন্য মাটি নেওয়া হচ্ছে ফসলি জমি থেকে। মাটি কেটে নেওয়ায় ফসলি জমিগুলো নিচু হয়ে গেছে। ওই ভাটা এলাকার আশপাশের মানুষের জীবন কাটছে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে। জমিতে ভালো ফসল না হওয়ায় অনেক কৃষক ওই ইটভাটাগুলোতে বিকল্প পথ হিসেবে জমি ভাড়া খাটাচ্ছেন।
তারাগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘আমরাও পারি’র সভাপতি আজাহারুল ইসলাম বলেন, সরকারি বিধি মোতাবেক আবাসিক এলাকা বা কৃষি জমিতে ইটভাটা নির্মাণের নিয়ম না থাকলেও এসব ইটভাটা নির্মাণের ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। কোথাও কোথাও এক কিলোমিটারের মধ্যে ছয়-সাতটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। প্রতিবছর এসব ইটভাটায় লাখ লাখ ঘনফুট কৃষিজমির মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে।
চার বছর আগে কৃষিজমির মাটি বিক্রি করেন খিয়ারজুম্মা গ্রামের ইদ্রিস উদ্দিন। মাটি বিক্রির পর তিনি ওই জমিতে ঠিকমতো ফসল উৎপাদন করতে পারছেন না। ইদ্রিস বলেন, ‘ভুল করি নগদ টাকার লোভে ৫০ শতক জমির মাটি বেচাছি। জমি এখন অনেক নিচা। তিন বছর কোনো আবাদ করির পাই নাই। বছরে একবার আবাদ করলেও আগের তুলনায় অর্ধেক ফসলও হয় না। ওই জন্য ইটভাটাত জমি ভাড়া দিছি।’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওয়াজেদ আলী জানান, মাটি চারটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত, যার মধ্যে খনিজ পদার্থ ৪৫ শতাংশ, জৈব পদার্থ ৫ শতাংশ, বায়ু ২৫ শতাংশ ও পানি ২৫ শতাংশ। জমির উপরিভাগে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকে। জৈব পদার্থ সব পুষ্টি উপাদানের গুদামঘর হিসেবে কাজ করে। কিন্তু মাটি ব্যবসায়ীরা উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়ায় ওই জমিতে জৈব পদার্থ থাকছে না। ফলে কেঁচোসহ উপকারী পোকামাকড় নষ্ট হচ্ছে। এতে জমিগুলো দ্রুত উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসুম বলেন, ‘ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে প্রতিবছর কৃষকদের ফসলহানির ঘটনা শুনতে হয়। এ ছাড়া ইটভাটাগুলোয় উপরিভাগের মাটি চলে যাওয়ায় মাটি তার উর্বরতা শক্তি হারাচ্ছে, ফলে জমিগুলোতে কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন ব্যহৃত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেছি।’