সজিবুল হৃদয়, লালপুর (নাটোর) থেকে: কাজুবাদাম চাষ পার্বত্য জেলা থেকে এসে পৌছঁছে লালপুরে। স্কুল শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম (লিটন) এখানে প্রায় ৫০ শতকে চাষ করেছেন কাজুবাদামের।
কাজুবাদামের চাষ হয় প্রধানত পাহাড়ি এলাকায়। সমতলে লালপুর উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে লালপুরে ৫ কৃষকের জমিতে ২০২১ সালে আবাদ হয়। কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম (লিটন) স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের সহায়তায় আবাদ শুরু করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তৈরি পোশাক খাতের মতো সহায়তা পেলে কাজুবাদাম রপ্তানি করে বছরে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমপরিমানের অর্থ আয় করা সম্ভব। বর্তমানে পাবর্ত্য অঞ্চলে সীমিত আকারে কাজুবাদাম দাষ হচ্ছে। কৃৃষকদের প্রশিক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের ব্যবস্থা করতে পারলে ২০২৪ সাল নাগাদ রপ্তানি আয়ের এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
বিশ্বব্যাপি কাজুবাদামের ৯ দশমিক ৯৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজার । এই বাজার ২০২৪ সাল নাগাদ ১৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। শুধু মাত্র আমেরিকাতেই এই বাজার ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজার আরও বড়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব সহজেই নিজেদের পার্বত্য অঞ্চলের পতিত জমি চাষ করে এই বাজারের অংশীদার হতে পারে। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন উন্নয়নশীল দেশ থেকে বেশী কাজুবাদাম আমদানি করে থাকে।
বিশ্বে ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন কাজুবাদাম উৎপাদন হয়। এর মধ্যে আফ্রিকাতে চাষ হয় ১ দশমিক ২ মিলিয়ন টন, পার্শবর্তীদেশ ভারত করে ৭ লাখ ৪৬ হাজার টন, ভিয়েতনাম ৪ লাখ টন উৎপাদন করে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ উৎপাদন করে মাত্র ১ হাজার টন। যদিও বাংলাদেশে ৫ লাখ হেক্টর কাজুবাদাম চাষ উপযোগী জমি রয়েছে। ২ লাখ হেক্টর জমিতে এখনই কাজুবাদামের চাষাবাদ শুরু করা যায়। তা করতে পারলে বাংলাদেশের উৎপাদনের পরিমান হবে ৫ লাখ টন।
বাংলাদেশ কাজুবাদাম ও কফি গবেষনা উন্নয়ন ও সম্প্রসারন প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং কর্মকর্তা কৃষিবিদ রেজাউল করিম রতন সোমবার কেশবপুরে প্রদর্শনী ক্ষেত দেখে গেছেন। এসময় সাথে ছিলেন লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম, কৃষি সম্প্রসার কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান, উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মনোয়ারুল ইসলাম।
পরিদর্শন শেষে কৃষিবিদ রেজাউল করিম রতন জানান, ‘বর্তমানে বান্দরবন সহ পাহাড়ি এলাকায় কাজুবাদামের ব্যাপক চাষ হচ্ছে। দেশে কাজুবাদামের চাহিদাও ব্যাপক, দেশে যে পরিমান কাজুবাদাম উৎপাদন হয় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তাই সমতলে কাজুাবদাম চাষের বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। লালপুরের আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় কাজুবাদাম চাষের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে’।
লালপুর উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ কাজুবাদাম ও কফি গবেষনা উন্নয়ন ও সম্প্রসারন প্রকল্পের আওতায় এ চাষ করা হচ্ছে, কৃষককে প্রযুক্তি ও পদ্ধতিগত সহায়তা প্রদান করা হবে।
কাজুবাদাম প্রদর্শণীর চাষি কেশবপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মাজহারুল ইসলাম (লিটন) জানান, গত অক্টোবর মাসে উপজেলা কৃষি অফিসের মাধ্যমে চারা গ্রহন করে ৫০ শতক জমিতে রোপন করি। নতুন কিছু চাষ করার ইচ্ছা থেকেই কাজুবাদাম চাষ শুরু করেছি, বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা।
বর্তমানে দেশে অল্প পরিসরে কাজুবাদাম ও কফি উৎপাদন হচ্ছে পার্বত্য অঞ্চলে। দেশের আরও এলাকায় কাজুবাদাম এবং কফির চাষাবাদের সম্ভবনা রয়েছে বলে কৃষিবিদদের অভিমত।
কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে সরকার।