মোঃসোহেল রানা, ঠাকুরগাঁও থেকে: ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বোচাপুুকুর এলাকার একটি খেজুরের বাগানে ৪ বছর ধরে শীত মৌসুমে রস থেকে গুড় উৎপাদন প্রক্রিয়া চলমান ছিলো। এবারো বাগানটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন কয়েকজন গাছি। কিন্তু তারা গুড় উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত না রেখে বাড়ি চলে গেছেন । তারা জানিয়েছেন, তারা চাঁদাবাজদের হাতেত কবল থেকে বাচঁতে ভয়ে এলাকা ছেড়েছেন ।
জানা যায়, বাগানটি ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের আওতায়। বাগানে র ছোট বড় সহ মোট ৫০০ খেজুরগাছ রয়েছে। ২০১৮ সালে রাজশাহীর কয়েকজন গাছি বাগানটির দায়িত্ব নেয়। তারা রস সংগ্রহ করে গুড় উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যহত রেখেছিলেন। ঠাকুরগাঁও জেলার শহরের বিভিন্ন মানুষ ভিড় করতো বাগান দেখতে, খেজুরের রস খেতে কিংবা গুড় তৈরির প্রক্রিয়া দেখতে। প্রতিবারের ন্যায় এইবারেও রাজশাহীর গাছিরা এই বাগানে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি শুরু করে। তবে তাদের অভিযোগ কিছু দিন আগে একদল যুবকের দেওয়া হুমকির ভয়ে গুড় তৈরি বন্ধ করে তারা এলাকা ছেড়ে ভয়ে পালিয়ে গেছে।
গত শনিবার (২২ জানুয়ারি) সকালে খেজুরের গুড় তৈরির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সেখানে গাছিদের দেখা পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় গাছি দলের প্রধান কারিগর মোঃ সুজন আলীর সাথে। এই বিষয়ে কারিগর সুজন আলী মুঠোফোনে জানান, কিছুদিন আগে রাতে কয়েকজন লোক এসে বিনামূল্যে খেজুরের রস খেতে চায়। তাদের রস খেতে না দিলে তাদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এতে তারা নানা রকম হুমকি দেয় আমাদের। রাতে এসে হত্যা করবে বলেও ভয় দেখায় এই যুবক দলেরা।
সুজন আলী আরো বলেন, ‘খেজুর বাগানে এক দুইদিন পর পর এসে তারা এভাবে চাঁদা দাবি করেন ও হুমকি দেন। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত তারা চাঁদা দাবি করে। শেষ পর্যন্ত উপায়া না পেয়ে আমরা বাধ্য হয়ে গুড় তৈরির কাজ বন্ধ করে বাড়ি চলে আসি।
চাঁদা দাবি করা ও হুমকি প্রদানকারিদের পরিচয় জানতে চাইলে সুজন আলী জানান, চাঁদা দাবি করা ও হুমকি প্রদানকারিরা রাতের অন্ধকারে আসতো, নাম পরিচয় জানতে চাইলে তারা পরিচয় দিতে অপারগতা প্রকাশ করে। তাই তাদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।
এই বিষয়ে সুজন আলী স্থানীয় প্রশাসন বিভাগের কারও কাছে অভিযোগ করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের বাড়ি অন্য জেলায় । রাতে তারা যদি সেখানে আমাদের মেরে ফেলতো কে আসতো আমাদের বাঁচাতে? তাই প্রাণের ভয়ে আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি না জানিয়ে পালিয়ে এসেছি। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মাঘ মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করতাম কিন্তু হুমকি ও চাঁদা দাবি করার কারণে গত সপ্তাহে আমরা বাড়ি চলে আসি।
বিষয়টি শুনে স্থানীয়রা জানান, এটি খুব দুঃখজনক বিষয়। এতে কিছু অসাধু লোকের জন্য আমাদের ঠাকুরগাঁও জেলার সুনাম নষ্ট হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। গাছিরা বিষয়টি যদি আমাকে অবগত করতো তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে আমি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতাম। ভয় পেয়ে গাছিরা গুড় তৈরির কাজ বন্ধ না করে তাদের উচিত ছিলো প্রশাসনকে বিষয়টি অবগত করা। আগামিতে এরকম কোনো কিছু হলে কঠোরভাবে তা দমন করা হবে বলে জানান তিনি।