Home অন্যান্য ইউসুফ মারফানি: আজাদ হিন্দ অধ্যায়ের এক বিস্মৃত নাম

ইউসুফ মারফানি: আজাদ হিন্দ অধ্যায়ের এক বিস্মৃত নাম

ইন্দ্রজিৎ মেঘ

গুজরাত সৌরাষ্ট্রের ধোরাজি শহরের একজন বণিক ছিলেন আবদুল হাবিব ইউসুফ মারফানি। মেমন জাতিগোষ্ঠী ছিল বণিক সম্প্রদায়ভুক্ত। মেমন জাতিগোষ্ঠীর উৎপত্তি প্রাচীন ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে, বর্তমানে আধুনিক পাকিস্তানের সিন্ধু অঞ্চলে। বিশ্বের অধিকাংশ মেমন সম্প্রদায় সুন্নি ইসলামের হানাফি ফিকহ অনুসরণ করে। খোজা, খত্রী (ভোহরা) এবং গুজরাতি জনগণের সঙ্গে মেমন সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে। এই সম্প্রদায়েরই একজন ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন আবদুল হাবিব ইউসুফ মারফানি। তিনি তাঁর প্রায় ১ কোটি টাকার পুরো সম্পদ আজাদ হিন্দ ফৌজকে দান করেছিলেন।

গুজরাতি বণিকরা যেমন মহাত্মা গান্ধির অহিংস স্বাধীনতা সংগ্রামে উদারভাবে দান করেছিলেন, তেমনি কিছু মানুষ ছিলেন যাঁরা নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মিকেও সহায়তা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য নাম এই আবদুল হাবিব ইউসুফ মারফানি।

আবদুল হাবিব ইউসুফ মারফানি রেঙ্গুনে বসতি স্থাপন করেছিলেন। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪৪-এর ৯ জুলাই যখন রেঙ্গুনে আইএনএ স্থাপন করেছিলেন, তখন মারফানিই প্রথম আজাদ হিন্দ ব্যাঙ্কে আর্থিকভাবে অবদান রাখেন। তখনকার দিনে এক কোটি টাকা ছিল রাজকীয় এক মহার্ঘ।

শোনা যায়, মারফানি রুপোর ট্রের উপর দিয়ে হাঁটতেন। সেই ট্রেতে সজ্জিত থাকত গয়নাগাটি, সম্পত্তির কাগজপত্র কিংবা মুদ্রা। তখন এর আনুমানিক মূল্য ছিল এক কোটি টাকা। তার ভাগের প্রতিটি কানাকড়ি দান করার পর তিনি নিজের জন্য আজাদ হিন্দ ফৌজের একটি খাকি পোশাক চেয়ে নিয়েছিলেন। স্বয়ং নেতাজি তাঁকে আজাদ হিন্দ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার তঘমা-ই-সেবক-ই-হিন্দে ভূষিত করেছিলেন।

আবদুল হাবিব ইউসুফ মারফানি সম্পর্কে নেতাজি বলেছিলেন, “কেউ কেউ বলেন, ‘হাবিব পাগল হয়ে গেছে’। আমি তা স্বীকার করি। আমি চাই আপনারা প্রত্যেক ভারতীয় পাগল হয়ে উঠুক। আমাদের দেশ, আমাদের মাতৃভূমির বিজয় এবং স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আমাদের এমন নারী-পুরুষই দরকার।”

আবদুল হাবিব ইউসুফ মারফানির কার্যকলাপ বিভিন্ন ইতিহাসের গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে। ইতিহাসবিদ রাজমাল কাসলিওয়াল তাঁর ‘নেতাজি, আজাদ হিন্দ ফৌজ এক কার্যক্রম’-এ বলেছেন, “রেঙ্গুনের একজন মুসলিম বার্মিজ ব্যবসায়ী এক কোটি টাকা নগদ এবং গয়না দান করেছিলেন। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে কাজ করেছিলেন তিনি। স্ত্রীর গয়না এনে তা উপচে দিয়ে সুভাষচন্দ্রের সামনে টাকার বান্ডিল রাখতেন।

নেতাজি তাঁকে বলেছিলেন, ‘ভাই! আজ আমি খুব খুশি যে, মানুষ তাদের দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেছে। মানুষ সবকিছু ত্যাগ করতে প্রস্তুত। হাবিব শেঠ যা করেছেন, তা প্রশংসনীয়। এবং যাঁরা তাঁকে অনুকরণ করে মাতৃভূমির সেবায় নিয়োজিত হয়েছেন, তা প্রশংসনীয়।’ এই বলে তিনি মারফানিকে ‘সেবক-ই-হিন্দ’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।” নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপনের সময় মারফানির নাতি ইয়াকব হাবিবকে তাঁর পূর্বপুরুষের কাজের জন্য নয়াদিল্লিতে সম্মানিত করা হয়েছিল। তবে মারফানিই একমাত্র গুজরাতি মুসলিম নন, যিনি ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি অর্থাৎ আজাদ হিন্দ ফৌজে অবদান রেখেছিলেন। সুরাতের গোলাম হোসেন মুস্তাক রান্দেরি সেনাবাহিনীর একজন রিক্রুটিং অফিসার ছিলেন।