বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
গান স্যালুটের মধ্যে দিয়ে মুম্বেইয়ে বিদায় জানানো হল সুর সম্রাজ্ঞী লতা মঙ্গেশকরকে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে শেষকৃত্য। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সমস্ত ক্ষেত্রের বিশিষ্ট মানুষের ভিড়ে শিবাজি পার্ক ভরে যায়।
তাঁর গানের মধ্যে দিয়েই তাঁকে স্মরণ করা হয়েছে এই শিবাজি পার্ক।
শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যেমন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তেমনই উপস্থিত ছিলেন, সপরিবারে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে, রাজ ঠাকরে, শরদ পাওয়ার, অজিত পাওয়ার, পীযূষ গোয়েল। পরিবারের তরফ থেকে উপস্থিত ছিলেন ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর, বোন ঊষা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে । উপস্থিত ছিলেন শাহরুখ খান, আমির খান, রণবীর কাপুর, বিদ্যা বালন, জাভেদ আখতারের, শঙ্কর মহাদেবনের মত ব্যক্তিত্ব। আর ছিলেন তাঁর ‘পুত্র’ শচীন তেন্ডুলকার।
তাঁর মরদেহে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানান মোদী। তারপর একে একে উপস্থিত সকলেই পুষ্পস্তবক দিয়ে সুর সম্রাজ্ঞীকে বিদায় জানান। তাঁর মরদেহের সামনে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করলেন সকলেই।
পার্কের প্রায় ২ হাজার বর্গফুট জায়গা শ্মশানের জন্য ব্যারিকেড করা হয়েছিল। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং প্রিয় শিল্পীকে শেষবারের জন্য দেখার জন্য দুপুর ১টা থেকেই সাধারণ মানুষরা ভিড় করেন পার্কে।
ভারতরত্ন, পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ এবং দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারের প্রাপক, লতা মঙ্গেশকর ভারতীয় চলচ্চিত্রের এক অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন তিনি। তাঁর চলে যাওয়া যে সঙ্গীত জগতের অপূরণীয় ক্ষতি, তা সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন।
তাঁর মৃত্যুতে গোটা দেশে দু’দিন রাষ্ট্রীয় শোক পালন করার কথা ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। মুম্বই সরকার আগামীকাল ছুটিও ঘোষণা করেছেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সকলের প্রিয় পাত্র ছিলেন লতা।
১৯২৯ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর অধুনা মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর শহরে জন্মেছিলেন লতা। বাবা-মায়ের দেওয়া নাম হেমা মঙ্গেশকর। লতার বাবা পণ্ডিত দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন বিখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী এবং মঞ্চাভিনেতা। মা সেবন্তি দেবী। তাঁদের পারিবারিক পদবী ছিল হারিদকর। পরিবারসূত্রে মঙ্গেশকরেরা ছিলেন গোয়ার মঙ্গেশ মন্দিরের পুরোহিত। সেই যোগসূত্রের কথা মনে রেখেই দীননাথ হারিদকর উপাধি পাল্টে তাঁদের পদবী রাখেন মঙ্গেশকর। চার সন্তানের মধ্যে হেমাই বড়।
৫ বছরের ছোট্ট লতা তানপুরা হাতে অবলীলায় তুলে নিলেন পুরিয়া ধানেশ্রীর মতো সুকঠিন রাগ। এর দু’বছরের মাথায় বাবার সাথে মঞ্চে গান গেয়েছেন, কিশোর চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন লতা। একক শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার সুযোগ আসে এর পরেই। লতা তখন ন’বছরের কিশোরী।
১৯৪৩ সালে মারাঠি ছবি গজভাউ’য়ে প্রথমবার হিন্দিতে গান গাওয়ার সুযোগ এল। ১৯৪৫ সালে মাস্টার বিনায়কের সঙ্গেই বম্বে’তে পা রাখলেন লতা মঙ্গেশকর।তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। একের পর তাঁর অনবদ্য সৃষ্টি মানুষের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছিল। অনেকেই মনে করেন, সরস্বতী যেন স্বয়ং লতা রূপে ধরা দিয়েছিলেন পৃথিবীতে।
প্রসঙ্গত, রবিবার সকালে ৮ঃ১৪ নাগাদ ৯২ বছর বয়সেই ছেড়ে চলে গেলেন সুর সম্রাজ্ঞী। ২৮ দিন ধরে করোনার সঙ্গে লড়াই করেছেন তিনি হাসপাতালের বেডে। সঙ্গে ছিল ফুসফুসে সংক্রমণও। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাল্টি অর্গান ফেলিওয়ের ফলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।