Home সারাদেশ খাগড়াছড়িতে ধুন্ধুমার অনলাইন জুয়া

খাগড়াছড়িতে ধুন্ধুমার অনলাইন জুয়া

 

এ জুয়ার মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে  শুধুমাত্র খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা থেকে উধাও হচ্ছে  বিশ লক্ষাধিক টাকা। চার থেকে পাঁচজন করে গ্রুপ হয়ে মোবাইলে গেম খেলছেন। আর গেমে বিকাশ, রকেট ও নগদের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে থাকেন তারা।

আবদুল জলিল, খাগড়াছড়ি থেকে: সম্প্রতি বাংলাদেশে ক্যাসিনোর সম্রাটদের অনেকেই কারাগারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতায় প্রকাশ্যে জুয়া-হাউজি কমে গেছে। অথচ ডিজিটাল পদ্ধতির অপব্যবহার করে অ্যানড্রয়েড ফোনের মাধ্যমে জমজমাট হয়ে উঠেছে জুয়ার আসর। এটাকে নাম দেয়া হয়েছে- অনলাইন জুয়ার আসর। বিভিন্ন অ্যাপ খুলে চালানো হচ্ছে অনলাইন জুয়া। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা খেলা যায়। এতে দেশের স্কুল-কলেজের ছাত্র, বেকার যুবক ও তরুণ শিক্ষার্থীরা এসব খেলায় জড়িয়ে বখে যাচ্ছে। তরুণদের অনেকেই কৌতূহল বশত এ খেলা শুরু করার পরেই নেশায় পড়ে যাচ্ছেন।

অনলাইন এ জুয়ায় ২০০ টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিকাশ, নগদ ও রকেটের মাধ্যমে ডিপোজিট করে অধিক লাভবান হওয়ার আশায় সর্বস্ব হারাচ্ছে অনেকে৷ অনলাইন জুয়া সব থেকে বেশি খেলে থাকেন শিক্ষার্থী ও তরুণরা। অনেকটাই সহজলভ্য তাই অনেকেই ঝুঁকে পড়ছেন এ অনলাইন জুয়ার দিকে। এক সময় তারা এ খেলায় আসক্ত হয়ে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ জুয়ার মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে  শুধুমাত্র খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলা থেকে উধাও হচ্ছে  বিশ লক্ষাধিক টাকা। চার থেকে পাঁচজন করে গ্রুপ হয়ে মোবাইলে গেম খেলছেন। আর গেমে বিকাশ, রকেট ও নগদের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে থাকেন তারা। শুধু দীঘিনালা নয় জেলার সবকটি উপজেলায় দিনদিন এ অনলাইন জুয়া প্রসারিত হচ্ছে।

উপজেলার মধ্য বোয়ালখালী গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জুয়ারি জানান, অতীতে তিনি ছোটখাটো ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালভাবেই দিনযাপন করছিলেন৷ এক বন্ধুর মাধ্যমে জিটুইন এ্যাপস ব্যবহার করে শুরু করেন অন-লাইন জুয়া। এরপর অধিক লাভবান হওয়ার আশায় একপর্যায়ে তার ব্যবসা বন্ধ করে নিয়মিত খেলা চালিয়ে যান। বর্তমানে সর্বস্ব হারিয়ে খুবই দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন তিনি। জানতে চাইলে তিনি আরও জানান, প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকার মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তিনি।

এবিষয়ে একাধিক জুয়ারি জানান, শুরুর দিকে কিছুটা লাভবান হলেও বর্তমানে তার সবাই নিঃস্ব প্রায়। এটা অনেকের নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা আরও জানান শুধুমাত্র শিক্ষার্থী কিংবা তরুন নয়। সকল বয়সী লোকজনই এ অনলাইন জুয়ার আসক্তিতে সর্বস্ব হারিয়েছে।

এভাবে প্রতিদিন গড়ে ২০ লক্ষাধিক টাকা উধাও হতে থাকলে উপজেলার সকল ধরনের ব্যবসায় বড় ধরনের ধস নেমে আসতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এ জুয়া বন্ধে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ। পাশাপাশি অবিভাবকদের সচেতনতাও অত্যন্ত জরুরি। এমন চলতে থাকলে আমাদের দেশের কষ্টের অর্জিত টাকা হরহামেশা বিদেশে প্রাচার হতে থাকবে।

দীঘিনালা উপজেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক বশির আহমেদ রাজু অনলাইন জুয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে বলেন, এভাবে চলতে থাকলে উপজেলায় চুরি, রাহাজানি বেড়ে যেতে পারে৷ প্রশাসন যদি স্কুল-কলেজে ও গ্রাম মহল্লায়-অনলাইন জুয়ার ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে ক্যাম্পেইন করেন তাহলে অবিভাবকরা কিছুটা হলেও সচেতন হবেন। আর অবিভাবকদের সচেতনতার মাধ্যমেই এ আসক্তি থেকে অনেকেই বেড়িয়ে আসবে।

পুলিশ বলছে, ‘অনলাইনে জুয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সময় সারাদেশে অনেককে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আসা হয়েছে। সাইবার টিমসমূহ এ বিষয়ে কাজ করছে। এর বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতেও কাজ করছে পুলিশ।

এ বিষয়ে দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাহমিদা মুস্তফা বলেন, অনলাইন জুয়া রোধে অবিভাবকদের সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি।  বিষয়টি আমি মাসিক আইনশৃঙ্খলা মিটিংএ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করবো।