বিধি বহির্ভূত চলাচল রোধের দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত, তারা উদাসীন অথবা তাদের এ ব্যাপারে প্রচ্ছন্ন সায় রয়েছে। নতুবা এভাবে অস্বাভাবিক পরিমাণ পণ্যবোঝাই ট্রাক চলাচল করতে পারতো না বলে মনে করেন তথ্যাভিজ্ঞমহল।
আবদুল জলিল, খাগড়াছড়ি থেকে: পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত ১০ বেইলি ব্রিজের ওপর দিয়ে ৫ টনের অধিক পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বিধি বিধানের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব ব্রিজের ওপর দিয়ে অবাধে চলাচল করছে ২৫ টনের ট্রাক।
অনুমোদিত ক্ষমতার ৫ গুণ মালামাল নিয়ে ট্রাক চলাচলের ফলে ব্রিজগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। বিধি বহির্ভূত চলাচল রোধের দায়িত্ব যাদের ওপর ন্যস্ত, তারা উদাসীন অথবা তাদের এ ব্যাপারে প্রচ্ছন্ন সায় রয়েছে। নতুবা এভাবে অস্বাভাবিক পরিমাণ পণ্যবোঝাই ট্রাক চলাচল করতে পারতো না বলে মনে করেন তথ্যাভিজ্ঞমহল।
খাগড়াছড়ি সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি শহরের সঙ্গে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির কয়েকটি উপজেলাকে সংযুক্ত করেছে ১০টি বেইলি ব্রিজ। অতিরিক্ত কাঠ বোঝাই ট্রাকের ভারে ভেঙে পড়ে ব্রিজ। বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থা। অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ট্রাক চলাচল করার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
সরেজমিন দেখা যায়, খাগড়াছড়ির দীঘিনালার দীঘিনালা-সাজেক সড়কের মাইনী ব্রিজ, দীঘিনালা-লংগদু সড়কের চৌমুহনী বেইলি ব্রিজ ও দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি সড়কের জামতলী বেইলী ব্রিজ এলাকায় প্রতিদিন শতাধিক কাঠবাহী ও মালবাহী ট্রাক চলাচল করে। কাঠবাহী প্রতিটি ট্রাকের ধারণক্ষমতা ২৫ টন। ব্রিজের ধারণক্ষমতার বেশি ওজন নিয়ে মালবাহী ট্রাক চলাচল করায় দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। প্রতিটি বেইলি ব্রিজের সামনে ৫ টনের বেশি মালামাল নিয়ে চলাচলে নিষেধাজ্ঞার সাইনবোর্ড লাগানো থাকলেও তার তোয়াক্কা করছেন না ট্রাকচালকরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাকচালকরা জানান, ‘প্রতিটি গাড়ির ধারণক্ষমতা ২৫ টন। পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঠ নিয়ে ঢাকা, ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাই। ধারণক্ষমতার কম কাঠ বহন করলে মালিকের পোষাবে না। তাই বেশি বেশি কাঠ বা অন্যান্য মাল বহন করতে হয়। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে।’
চালক আনোয়ার হোসেন জানান, বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে ব্রিজের উপর দিয়ে যেতে হয়। তবে পাকা ব্রিজ নির্মাণ করা হলে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হবেনা।
স্থানীয়রা জানান, দ্রুত এ ব্রিজগুলো পাকা করা না হলে দিনদিন ঝুঁকি বাড়তেই থাকবে। এ বিষয়ে স্থানীয় সাংসদের সুদৃষ্টি কামনাও করেন অনেকে।
বছর দুয়েক আগে দীঘিনালা-লংগদু সড়কের চৌমুহনী বেইলি ব্রিজে অতিরিক্ত কাঠ বোঝেই ট্রাকের কারণে ব্রিজ ধসে যায়। পরে সওজ ও স্থানীয় প্রশাসন ব্রিজটি মেরামত করে। পার্বত্য অঞ্চলের বেশির ভাগ বেইলি ব্রিজ ৯০-এর দশকে নির্মিত। দীর্ঘদিন ব্রিজগুলোর কোনো সংস্কার কাজ না হওয়ায় কোনো রকমে তা টিকে আছে। এ অবস্থার মধ্যে ২৫ টনের ট্রাক চলাচল ভয়াবহ রকমের ঝুঁকি তৈরি করেছে।
খাগড়াছড়ির সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সবুজ চাকমা বলেন, ‘বেইলি ব্রিজের উপর ৫ টনের অধিক মালামাল বহনে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও তা মানছে না ট্রাকচালকরা। খাগড়াছড়ি সওজ’র আওতাধীন ১০টি বেইলি সেতু রয়েছে। মূলত অতি লাভের আশায় চালকরা ধারণক্ষমতার বেশি কাঠ বোঝাই করে। ফলে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। পাহাড়ি নদী কিংবা ছড়ার উপর বেইলিগুলোর স্থলে স্থায়ী ভিত্তিতে সেতু নির্মাণ করা গেলে ঝুঁকি এড়ানো যাবে।’