Home First Lead হয় সব মহাসড়কে, নতুবা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও না

হয় সব মহাসড়কে, নতুবা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেও না

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের মতবিনিময় সভা থেকে দাবি

  • বারে বারে অবহিত করে আশ্বাস পেয়েছি, প্রতিকার মেলেনিঃ মাহবুব
  • স্কেলের কারণে চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যে ভয়ানক স্থবিরতাঃ ছগীর

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

চট্টগ্রাম: হয় দেশের সব মহাসড়কে ওজন স্কেল স্থাপন করতে হবে, অথবা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে স্কেল তুলে দিতে হবে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন নেতৃবন্দ শনিবার এক মতবিনিময় সভা থেকে এই দাবি জানিয়ে বলেন, মহাসড়কের ওই ওজন স্কেলের ফলে বাণিজ্যিক বৈষম্যের শিকার চট্টগ্রাম। এখান থেকে শত বছরেরর ব্যবসা-বাণিজ্য স্থানান্তরিত হয়ে যাচ্ছে। মাঝিরঘাটের মালগুদামগুলো খা খা করছে। চট্টগ্রামের  আমদানিকারকরাও এখানে মাল খালাস না করে বড় বড় জাহাজ থেকে লাইটার করে সরাসরি ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, নওয়াপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে।এমন কি ফেনী, মিরেরসরাইর ব্যবসায়ীরাও চট্টগ্রামের পরিবর্তে ঢাকা থেকে পণ্য আনছে।

সভায় সভাপতিত্ব করেন চিটাগাং চেম্বার সভাপতি ও খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওজন স্কেলের জেরে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের বিরাজমান সংকটের বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে অবহিত করা হয়েছে। চেম্বারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অন্যান্য মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। বারে বারে আশ্বাস দেয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিকার মেলেনি। সমস্যাটি নিয়ে তিনি আবারও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করবেন বলে জানান।

এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগীর আহমদ বলেন, দেশের ৩৫ টি মহাসড়কের মধ্যে কেবলমাত্র ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর দেয়া হয়েছে ওজন স্কেল। ৩৪ টি মহাসড়কে ওজন স্কেল নেই। এসব মহাসড়ক দিয়ে ২৫ টন পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাক অবাধে চলাচল করতে পারছে। কিন্তু বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীদের চট্টগ্রাম থেকে ১৩ টনের ওপর মাল নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অর্থাৎ চট্টগ্রাম থেকে মাল পরিবহনে যে খরচ, অন্যান্য স্থান থেকে একই পরিমাণ পণ্য নিতে খরচ তার অর্ধেক বা কম। এ কারণে ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বিমুখ হয়ে পড়েছেন। বিকল্প হিসেবে অন্যান্য স্থানকে বেছে নিয়েছেন। চট্টগ্রামের ব্যবসা-বাণিজ্যে ভয়ানক স্থবিরতা বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, একদেশে দুই আইন নয়। হয় সব মহাসড়কে ওজন স্কেল স্থাপন করতে হবে, অথবা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে তা উঠিয়ে দিতে হবে। আমরা ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতির চালিকাশক্তি, তাই রাস্তায় নামার পক্ষে নই। চিটাগাং চেম্বারকে সমস্যাটি নিরসনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করতে আহ্বান জানান তিনি।

কাউন্সিরর পুলক খাস্তগীর বলেন,  আন্দোলনে বিকল্প নেই। তিনি সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন কর্মসুচি ঘোষণার আহবান জানান। আনসার ক্লাব থেকে আছদগঞ্জ পর্যন্ত যানজট নিরসনে গার্ড নিয়োগ করারও আহবান জানান।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের কার্যকরি সদস্য আলমগীল পারভেজ বলেন, আগে ঢাকার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ীরা খাতুনগঞ্জে অফিস নিতেন। এখন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা মৌলভীবাজারে সাব অফিস নিতে বাধ্য হবেন। ব্যবসা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে।

খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের কার্যকরি সদস্য অনিল চন্দ্র পাল বলেন, সংকটটি দূর করতে  সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আল্টিমেটাম দিতে হবে। চেম্বার সভাপতির নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে হবে। এ বিষয়ে দায়িত্ব নেয়ার জন্য চেম্বার সভাপতিকে আহবান জানান।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি ছালেহ আহমদ সুলেমান  বলেন, সুনির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে। চট্টগ্রাম চেম্বার ও কুমিল্লা চেম্বারকে একত্রিত করে উদ্যোগ নিতে হবে। রমজানের পর আন্দোলনের ডাক দেয়ার আহবান জানান তিনি।

আন্তঃজেলা মালামাল পরিবহন সংস্থা ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি লতিফ আহমেদ বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে চট্টগ্রামে লবণ শিল্প ছিল। ওজন স্কেলের কারণে সেটি এখন বিলুপ্তির পথে। সারাদেশে একই নিয়ম থাকার হলেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ক্ষেত্রে তা যেন ভিন্ন।

পাহাড়তলী ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এস এম নিজাম উদ্দিন বলেন, সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করতে হবে।

চট্টগ্রাম ওয়ার হাউজ মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মান্নান (মাঝিরঘাট) বলেন, সমস্যা সমাধানে সবাইকে অবহিত করার এবং জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য চেম্বার সভাপতির প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, মাল ঠিকই ৩০ টন যায়। কিন্তু সেইসঙ্গে যায় পকেট থেকে বাড়তি টাক। চেম্বারের মাধ্যমে সব সমিতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে তিনি মনে করেন।

চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সঞ্জয়দেব খোকন বলেন, স্কেলের ব্যাপারে আদালতের শরণাপন্ন হতে চেয়েও সুযোগ মেলেনি। অথচ ফেনী থেকে ২০/২৫ টন মাল যায়। চট্টগ্রাম থেকে সেই সুযোগ নেই। তিনি প্রস্তাব রাখেন চট্টগ্রামের যেসব ব্যক্তিত্ব ঢাকায় গুরুত্বপুর্ণ পদে আছেন তাদেরকে সাথে নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যাওয়ার।

মিরসরাই উপজেলা চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন বলেন,  স্কেলের জন্য অনেক আগে থেকেই আন্দোলন হয়ে আসছে। সার্কিট হাউজে সেতুমন্ত্রীকে অনেকবার বলা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর নয়, মোংলাকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এখন সরকার নানাখাতে হাজার হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। ভোগ্যপণ্যেও ভর্তুকি দিতে পারে।

চট্টগ্রাম ডাল মিল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিতোষ দে বলেন, সামনে রমজান। প্রশাসন থেকে যাতে ব্যবসায়ীরা হয়রানি না হন সে ব্যাপারে চেম্বারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।