- মতিউর রহমান চৌধুরী
বাণিজ্যিক রাজধানী খ্যাত চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের কাছে একটি স্মার্ট
সিটি গড়ার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। সিঙ্গাপুর- দুবাইয়ের আদলে এই উপশহর গড়ার সুযোগ পেলে শহরটিকে সংযুক্ত করে চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোকে মেট্রোরেলের মাধ্যমে যুক্ত করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে চীনের তরফে। এই মেট্রোরেল নির্মাণে বাংলাদেশের কোনো অর্থ খরচ করতে হবে না বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া যে স্মার্ট সিটি গড়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে সেখান থেকে আসা আয়ের একটি অংশ বাংলাদেশকে দেয়ার কথাও বলেছে চীনা প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) কাছে এই প্রস্তাব দিয়েছে চীনের চারটি প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়া কনসোর্টিয়াম। প্রস্তাব অনুযায়ী মেট্রোরেল প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করার কাজও করবে চীনা প্রতিষ্ঠান। এর’জন্য তারা কোনো অর্থ নেবে না।
চীনা প্রতিষ্ঠানের এমন প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছে সিডিএ। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার তাদের নেই। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজ করে সিডিএ। ইতোমধ্যে চীনা প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব ওই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে চীনা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পরিকল্পনাও তুলে ধরা হয়েছ। প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিস্তারিত সমীক্ষা করে আসতে বলা হয়েছে। এই সমীক্ষার ফল হাতে আসার পর বিস্তারিত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে বলে ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানিয়েছেন সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস। তিনি বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠান প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছে। তারা বিস্তারিত সমীক্ষার ফল নিয়ে আসলে হয়তো তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রাথমিক প্রস্তাবকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে বলে তিনি জানান।
প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে এই প্রকৌশলী বলেন, বে টার্মিনালের যে নির্ধারিত স্থান এরপর থেকে মিরসরাই পর্যন্ত সাগরের মধ্যে একটি চরের মতো জায়গা আছে। ওই জায়গায় সাগরের জমি রিক্লেইম করে তারা টাউনশিপ করতে চায়। এটা দৈর্ঘ্যে দেড় কিলোমিটারের মতো হবে। এই টাউনশিপের সঙ্গে যুক্ত করে বিমানবন্দর, রেল স্টেশনসহ চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোর সঙ্গে মেট্রোরেল করে দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এই এমআরটি চীনা প্রতিষ্ঠান নিজ খরচে করে দেবে বলেছে। আর টাউনশিপে প্লট বিক্রির আয়ের একটি অংশ বাংলাদেশকে দেয়ার কথা বলেছে তারা। তবে এই অংশ কেমন হবে তা বিশদ সমীক্ষার পর জানা যাবে। প্রস্তাবিত এই প্রকল্পে পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সাগরের জমি উদ্ধার করলে কোনো ক্ষতির ঝুঁকি নেই। দুবাই, সিঙ্গাপুরসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সাগরের ভূমি রিক্লেইম করে এরকম টাউনশিপ করা হয়েছে। এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতাও আছে বলে প্রস্তাবকারী প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে।
চট্টগ্রামে মেট্রোরেল করা যায় কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতে সম্প্রতি কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দেয়ার পর এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সেখানে এমআরটি করে দিতে দক্ষিণ কোরিয়া আগ্রহ দেখায়। ইতিমধ্যে উন্নয়ন সংস্থা কোইকার মাধ্যমে এ প্রকল্পের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়েছে তারা। এ কাজে তারা ৫ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলার অনুদান হিসেবেও দিতে চায়।মেট্রোরেল ও টাউনশিপ করে দেয়ার জন্য চীনের চারটি প্রতিষ্ঠান যৌথ প্রস্তাব দিয়েছে বলে সিডিএ তথ্য দিয়েছে। তবে এই চার প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করা হয়নি। গত ১৩ই জানুয়ারি ঢাকায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিআরসিসিএল) নামের প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের আগ্রহ প্রকাশ করে। এই প্রতিষ্ঠানটি নতুন চার প্রতিষ্ঠানের কনসোর্টিয়ামে আছে বলে সিডিএ সূত্র জানিয়েছে।চীনা প্রস্তাবের বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন মনে করেন, প্রস্তাব আমলে নেয়ার আগে বাংলাদেশের স্বার্থ নিয়ে চিন্তাভাবনা করতে হবে। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয় মাথায় রেখে এগুতে হবে।
সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা