বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়াল। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ শনিবার বিকেলে তাকে সিইসি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে ।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, শপথের পর প্রথম চ্যালেঞ্জ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার। বড় দলগুলো যেন নির্বাচনে অংশ নেয় সেই চেষ্টা করা হবে।
শনিবার বিকালে নির্বাচন কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারির পর গণমাধ্যমকে এক প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল ছাড়াও এছাড়া চারজনকে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) করেও প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
তারা হলেন- সাবেক সিনিয়র সচিব আনিছুর রহমান, সাবেক সিনিয়র সচিব আলমগীর হোসেন খান, ব্রি. জেনারেল (অব.) আহসান হাবীব খান ও সাবেক জেলা জজ রাশিদা সুলতানা।
আরেক কমিশনার আনিছুর রহমান বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন কাজ করবে। যেসব চ্যালেঞ্জ আছে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।
প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে তাদের নিয়োগ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ আগামী পাঁচ বছরের জন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে তাদের নিয়োগ দিয়েছেন।
কে এই হাবিবুল আউয়াল
হাবিবুল আউয়ালের পৈত্রিক বাড়ি চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে। তবে বাবার চাকরি কারণে তার জন্ম হয় কুমিল্লায়।
হাবিবুল আউয়ালের বাবা কাজী আবদুল আউয়াল ছিলেন কারা বিভাগের কর্মকর্তা। ১৯৭৫ সালের নভেম্বর মাসে জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার বাদী ছিলেন হাবিবুল আউয়ালের বাবা তৎকালীন কারা উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) আবদুল আউয়াল।
হাবিবুল আউয়াল ১৯৭২ সালে খুলনার সেন্ট জোসেফ’স হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৭৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন তিনি।
বিসিএস ১৯৮১ ব্যাচের এই কর্মকর্তা সরকারি চাকরি শুরু করেন মুনসেফ (সহকারী জজ) হিসেবে। ১৯৯৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান হাবিবুল আউয়াল।
২০০০ সালের ডিসেম্বরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিবের দায়িত্ব পান তিনি । ২০০৪ সালে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত সচিব হন। ২০০৭ সালে পদোন্নতি পেয়ে একই মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্ব পান হাবিবুল আউয়াল।
২০১০ সালে বিচার বিভাগের এই কর্মকর্তার আইন সচিব হিসেবে নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় আদালত। আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে হাবিবুল আউয়ালের নিয়োগের সময় নীতিমালা মানা না হওয়ায় আদালত তার নিয়োগ অবৈধ ঘোষণা করে।
আইন সচিব থাকা অবস্থায় বিধিবহির্ভূতভাবে দুই বিচারককে অবসরে পাঠানো নিয়েও জটিলতায় জড়িয়েছিলেন হাবিবুল আউয়াল। সংসদীয় কমিটি এজন্য তাকে তলব করলে তিনি ওই ঘটনার দায় নিয়ে ক্ষমা চান।
ওই ঘটনার পর ২০১০ সালের এপ্রিলে ধর্ম সচিব করা হয় হাবিবুল আউয়ালকে। পরে জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পান তিনি।
২০১৪ সালে সেখান থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব করে পাঠানো হয় তাকে। ওই বছরই পদোন্নতি পেয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব হন হাবিবুল আউয়াল।
২০১৫ সালের জানুয়ারিতে অবসরে যাওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু পিআরএল বাতিল করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে তাকে এক বছরের চুক্তিতে নিয়োগ দেয় সরকার।
ওই চুক্তির মেয়াদ ২০১৬ সালে আরও এক বছর বাড়ানো হয়। এরপর ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেই জ্যেষ্ঠ সচিব হিসেবে ২০১৭ সালে অবসরে যান তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে তিন সন্তানের বাবা হাবিবুল আউয়াল। তার স্ত্রীর নাম সাহানা আক্তার খানম। তার আত্মজীবনীমূলক একাধিক গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে।