Home অন্যান্য কোন বয়সের বিয়েতে ডিভোর্সের ঝুঁকি কম

কোন বয়সের বিয়েতে ডিভোর্সের ঝুঁকি কম

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

বিয়ের সঠিক বয়স বলে কিছু আছে? গবেষকদের মতে তেমন কিছু নেই। বিয়েকে বয়স বা সময়ের গণ্ডিতে বেঁধে ফেলা যায় না। প্রেম যেমন বাঁধনহীন, তেমনই বিয়ে কখন হবে তাও ‘ব্রহ্মাই জানেন’।

বিয়ের সঠিক বয়সের মাপকাঠি না থাকলেও দু’জনের সম্পর্ক কতটা সফল হবে, দাম্পত্য কতটা সুখের হবে, বিচ্ছেদের সম্ভাবনা প্রায় থাকবেই না—এইসবই অনেকটাই নির্ভর করে কত বছর বয়সে বিয়ে হচ্ছে তার ওপরে। খুব বেশি বয়সে বিয়ে হওয়াটাও যেমন ঝক্কির, তেমনি একদম কচি বয়সে বিয়ে করলেও সম্পর্কে নানা জটিলতা আসে। তাই কোন বয়সটা বিয়ের জন্য উপযুক্ত হতে পারে তারই একটা হিসেব দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কোন বয়সে বিয়ে করলে দাম্পত্য একদম মাখোমাখো হবে, প্রেমের ঢেউ খেলবে এবং ডিভোর্সের ঝুঁকিও কম থাকবে, তার একটা গাণিতিক হিসেব আছে। বিভিন্ন সময় নানারকম স্বভাব-চরিত্র, ভাষাভাষীর মানুষের ওপরে সমীক্ষা চালিয়ে এই হিসেবটা কষেছেন বিজ্ঞানীরা। এর একটা সূত্র ও ব্যাখ্যা আছে যার নাম গোল্ডিলকস থিওরি । মহাকাশবিদ্যার গোল্ডিলকস থিওরি নয় কিন্তু, এই সূত্র সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে। এমন একটা গাণিতিক হিসেব যা অনেকটাই নির্ভুলভাবে বলে দিতে পারে ঠিক কোন বয়সটা বিয়ের জন্য একদম পারফেক্ট। নারী ও পুরুষ উভয়ের মনস্তাত্বিক নানা দিক বিশ্লেষণ করেই এই হিসেব করা হয়েছে। সম্পর্কের খুঁটিনাটি দিক তো বটেই, পরস্পরের ভাল লাগা-মন্দ লাগা, আবেগ-ভালবাসা, সম্পর্কের বুনিয়াদ ঠিক কোন বয়সে গিয়ে পরিপক্ক হতে পারে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সবটাই এই সূত্র ধরেই।

 

ক্যারি ক্রাওয়েক নামে এক থেরাপিস্ট মিশিগানের বার্মিংহাম ম্যাপল ক্লিনিকে গবেষণা করেন। তিনি বিভিন্ন সময় বৈবাহিক সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে লেখালিখি করেছেন। গোল্ডিলকস থিওরি-র ব্যাখ্যা তিনিই দিয়েছেন। বিশেষজ্ঞ বলছেন, খুব বেশি বয়স বা খুব কম বয়স বিয়ের জন্য উপযুক্ত নয়। বিয়ের আদর্শ বয়স হওয়া উচিত ২৮ থেকে ৩২ বছর।

গোল্ডিলকস থিওরি কী ব্যাখ্যা দিচ্ছে—

২৮ তেকে ৩২ বছর বয়সের মধ্যে বিয়ে হলে ডিভোর্সের ঝুঁকি সবচেয়ে কম থাকে। কারণ এই বয়সে এসে মানুষের মন ও মস্তিষ্ক অনেক পরিণত হয়। একে অপরের সূক্ষ্ম ভাবনাগুলোকে বুঝতে ও সম্মান করতে শেখে।

সারা জীবন যে সঙ্গীর সঙ্গে কাটাতে হবে তাকে জানা ও বোঝাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি। এই বোঝার ব্যাপারটা তাৎক্ষনিক নয়। ‘চোখে চোখে কথা বলো, মুখে কিছু বলো না’… কম বয়সেই এমন চোখের দেখায় প্রেম হতে পারে। কাজেই সৌন্দর্য বা তাৎক্ষণিক আকর্ষণের ভিত্তিতে যদি জীবনসঙ্গী নির্বাচন করা হয়, তাহলে সেই বাঁধন বেশিদিন নাও টিকতে পারে। ভাললাগার দিকগুলো বদলে গেলে, সম্পর্কের ধারাপাতও বদলে যায়। তখন নানা রকম সমস্যা তৈরি হয়। নিত্যদিনের ঝগড়া, অশান্তি, আলাদা থাকা এবং সেখান থেকে বিচ্ছেদ।

থিওরি বলছে, ত্রিশের কোঠায় যাঁরা বিয়ে করেন তাঁরা অনেক বেশি প্রাপ্তমনস্ক হন, তেমনই আর্থিক ভাবেও সফল হন। এই সময় যোগ্য সঙ্গী খুঁজে পাওয়া এবং সঙ্গী নির্বাচন করাও অনেক সহজ। সঙ্গীকে বোঝা, তাঁকে সম্মান দেওয়া এই ভাবনাগুলোও অনেক বেশি পরিপক্ক হয় একটা নির্দিষ্ট বয়সে এসেই। মান-অভিমান হতেই পারে, কিন্তু কীভাবে সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ী করা যায়, পারস্পরিক বিশ্বাস ও ভরসার জায়গাটা মজবুত করতে হয়, সেই চিন্তাগুলো ওই বয়সেই এসেই হতে পারে। তাই বিয়ের জন্য ২৮ থেকে ৩২ বছর বয়সকেই বেছে নিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নিকোলাস এইচ উলফিঙ্গারও এই ২৮ থেকে ৩২ বছর বয়সকে বিয়ের জন্য আদর্শ বলেছিলেন। কোন বয়সে ডিভোর্সের ঝুঁকি কত বেশি সেই নিয়ে উলফিঙ্গারের গাণিতিক মডেলও আছে। তাঁর গ্রোথ কার্ভ মিলে গেছে র ন্যাশনাল সার্ভে অব ফ্যামিলি গ্রোথের সমীক্ষার সঙ্গে। ২০০৬-২০১০ ও ২০১১-২০১৩ পর্যন্ত তথ্য খতিয়ে দেখে উলফিঙ্গার একটি গাণিতিক হিসেব দিয়েছেন। বিয়ের প্রথম পাঁচ বছরের মধ্যে ডিভোর্সের ঝুঁকি কাদের বেশি ও কাদের কম সেটা বোঝা যাবে এই গ্রাফ দেখেই।

তবে হ্যাঁ, ৩২ পেরিয়ে গেলে কিন্তু আবার অন্য সমস্যা হতে পারে। চল্লিশের কোঠায় বিয়ে করলে ডিভোর্সের ঝুঁকি কিছুটা বেড়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বয়স যত বাড়বে বুদ্ধি-বিবেচনা ও অভিজ্ঞতাতেও ততটাই শান পড়বে। নিজস্ব চিন্তাভাবনা ও জীবনশৈলী তৈরি হবে। সেখানে আরও একজনের চিন্তাভাবনাকে মিলিয়ে দেওয়া অত সহজ নয়। সম্পর্কে খিটিমিটি হবেই। তাই সময় থাকতে বিয়ে করাই ভাল।