বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. মনিরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মনে করে, প্রতিযোগিতামূলক বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আইন করলেও এখন পর্যন্ত বিধি না করায় আইনের প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন সম্ভবপর হচ্ছে না। আর এর সুযোগ নিচ্ছে জোটবদ্ধ ব্যক্তি-গোষ্ঠী।
এক রিট আবেদনের শুনানিতে সোমবার এমন মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট বেঞ্চ। সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং সেল গঠন এবং নীতিমালা তৈরি করার আদেশ চেয়ে গত ৬ মার্চ রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির, মনির হোসেন ও মোহাম্মদ উল্লাহ।
সোমবার আদেশ দেওয়ার কথা থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষে আদালত আবেদনটি সংশোধন করে আনতে বলে মঙ্গলবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি রেখেছে।
রবিবার রিট আবেদনকারী মহিদুল কবির শুনানি করেছিলেন। সোমবার আবেদনের বিরোধিতা করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল প্রতিকার চাকমা বলেন, ‘বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে, ইতিমধ্যে সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার দর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সরকার বাজার তদারকিতে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে এ রিটে রুল জারি করা ঠিক হবে না।’
এ পর্যায়ে বেঞ্চের এক বিচারক বলেন, ‘প্রতিযোগিতাবিরোধী জোট কীভাবে নিরূপণ করছেন? ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন হয়েছে। এখন পর্যন্ত এর বাস্তবায়ন নেই। প্রতিযোগিতাবিরোধী চুক্তি, কর্তৃত্ব বন্ধ করতে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বলেন, ‘উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
বিচারক প্রতিযোগিতা আইনের তৃতীয় অধ্যায়ের ১৫ ধারা উল্লেখ করে বলেন, এ আইনে মনোপলি (একচেটিয়া) ব্যবসা বন্ধের কথা বলা আছে। সরকার বিধি-নীতিমালা করছে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ কারণে আইনের প্রয়োগ নাই। এ রকমটা সব সময় হয়ে আসছে। আপনারা যদি কঠোর হতেন, তবে বাজার লাগাম ছাড়া হতো না। আগে থেকে সচেষ্ট থাকলে জনসাধারণের ভোগান্তি হতো না।
বিচারক বলেন, ‘একচেটিয়া ব্যবসা একটা গ্রুপের কাছে চলে যাওয়ায় এমনটা হচ্ছে। অথচ এটি বন্ধ করতে রেগুলেটরি বডি (নিয়ন্ত্রক সংস্থা) গঠনের কথা আইনে বলা আছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা থাকলে আমাদের কাছে (আদালতে) আসতে হতো না। আমরা চাচ্ছি, এগুলো হোক। আমাদের সামনে আইন বাস্তবায়নের দৃশ্যমান কোনো উদাহরণ নাই।’
প্রতিকার চাকমা তখন আবার বলেন, ‘সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে, সক্রিয় আছে। বাজার এরই মধ্যে নিয়ন্ত্রণে এসেছে।’
আদালত তখন এ আইন কর্মকর্তার কাছে প্রশ্ন রাখে- কবে থেকে সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে? সরকারের মেশিনারিজগুলো (আইন, বিধি, নীতিমালা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা, তদারক সংস্থা) সক্রিয় থাকলে মজুতকারীরা সাহস পেত না। আইন, সংগঠন সবকিছু আছে, কিন্তু প্রয়োগ নাই। আমরা চাই সরকারের মেশিনারিজগুলো ৩৬৫ দিনই সতর্ক-সোচ্চার থাকুক। এটা (বাজার তদারকি বা নিয়ন্ত্রণ) একদিনের কাজ না। যতটুকু হয়েছে, সেটি প্রশংসনীয়।
এ পর্যায়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী প্রতিকার চাকমা পুনরাবৃত্তি করে বলেন, ‘একচেটিয়াভাবে কেউ যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে, তার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার টাস্কফোর্স গঠনে হাত দিয়েছে। বাজার দর এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে। বাজারে বাজারে গিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফলে এ রকম পরিস্থিতিতে এই রিটে রুল দেওয়া ঠিক হবে না।’
তখন বিচারক বলেন, ‘সরকার খাদ্য পণ্যের বাজার দর ঠিক করে দিচ্ছে। আর একটা গ্রুপ জোটবদ্ধ হয়ে সেসব পণ্য মজুত করছে। পরে দাম বাড়িয়ে তা বাজারে ছাড়ছে। জনগণের কাছ থেকে টাকা নিয়ে চলে যাচ্ছে। যারা দুষ্কৃতকারী তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। সারা বছর বাজার তদারকি করতে হবে। রোজা আসলে তদারকি হবে, এমনটা হলে হবে না। এটা প্রতিদিনের কাজ, প্রতিদিন করতে হবে।’
এরপর রিট আবেদনকারী আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বিচারক বলেন, ‘যেকোনো সময় যেকোনো খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে পারে। কিন্তু আপনাকে নিত্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের বিষয়ে আসা উচিত। আপনার রিট আবেদনের আরজি যথাযথ হয়নি।’এরপর আদালত রিট আবেদনটি সংশোধন করে নিয়ে আসতে বলে শুনানি পরবর্তী দিন পর্যন্ত মুলতবি রাখে।