Home কৃষি নকলায় সূর্যমুখী চাষের বিশাল সম্ভাবনা

নকলায় সূর্যমুখী চাষের বিশাল সম্ভাবনা

নকলা ( শেরপুর ) থেকে মো. মোশারফ হোসাইন:নকলা উপজেলায় পতিত জমিতে তেলবীজ ফসল সূর্যমুখী চাষের অপার সম্ভাবনার কথা জানালেন কৃষিবিদরা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ জানান, অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষে খরচ কম; কিন্তু লাভ বেশি পাওয়া যায়। এতে ২-৩ বার সেচ ছাড়া তেমন সার ও কীটনাশক লাগেনা বললেই চলে। এ তেলবীজ চাষে বাড়তি তেমন পরিচর্যারও দরকার হয়না। তাছাড়া অন্যান্য তেলবীজের তুলনায় অনেক বেশি তেল পাওয়া যায়। তিনি আরও জানান, ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণে প্রতি বছর বিদেশ থেকে সূর্যমুখীর বীজ ও এর তেল আমদানি করতে হয়। দেশে সূর্যমুখী তেলবীজ ফসলের আবাদ বৃদ্ধি করা গেলে আমদানি কমবে, পক্ষান্তরে বাড়বে কৃষি আয়। পতিত ও অপেক্ষাকৃত অনুর্ব্বর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন অনেক কৃষক এমনটাই আশাব্যক্ত করেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ

এখানকার মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য বেশ উপযোগী। কম সময় ও অল্প ব্যয়ে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই কৃষি বিভাগ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে পরীক্ষামূলকভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তেলবীজ সূর্যমুখী আবাদ শুরু হয়েছে গত কয়েক বছর থেকেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে সূর্যমুখী ফুলের চাষ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হবে বলে আশাবাদী কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।

গত বছর উপজেলার পাঠাকাটা, চন্দ্রকোনা ও চরঅষ্টধর ইউনিয়নের ৭ একর পতিত জমিতে প্রণোদনার মাধ্যমে সূর্যমুখী চাষের আওতায় আনা হয়। ওই বছর ২০ কৃষককে দেওয়া হয় সূর্যমুখী চাষের কৃষি প্রণোদনা। এতে কৃষকরা লাভবান হওয়ায় অন্যান্য কৃষকরা আগ্রহী হয়েছেন। এফসল চাষ করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন, ফলে সৃষ্টি হয়েছে কর্মসংস্থান।

এ বছরে নকলা উপজেলায় কৃষি বিভাগের সহায়তায় ৩ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেছেন কৃষকরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আওতায় ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের তেল ফসল প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের প্রদর্শনী দেওয়া হয়েছে। ৩ মাস মেয়াদি এফসলে লাভ বেশি পেলেও, কৃষি বিভাগ থেকে যথেষ্ট প্রণোদনা না পাওয়ায় এবং কৃষকরা স্থানীয় ভাবে ব্যাপকহারে বাজারজাত করার সুযোগ না পাওয়ায় আবাদ কমতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বানেশ্বরদী, চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা, টালকী ও চরঅষ্টধর ইউনিয়রে অনেক কৃষক নিজ উদ্যোগে ও কৃষি বিভাগের পরামর্শে তেলবীজ ফসল সূর্যমুখী চাষ করেছেন। এছাড়া অনেকে বাড়ির আঙিনায় ও অফিসের সামনে শখের বসে সূর্যমুখী ফুল হিসেবে চাষ করেছেন। এটি স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করা সহজ নাহলেও, দামি ফসল হিসেবে সবার কাছে পরিচিত।

ভোজ্যতেলের মধ্যে সূর্যমুখীর তেল মানব শরীরের জন্য খুব উপকারী। সূর্যমুখীর আবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে উপজেলা কৃষি অফিস কর্তৃক পরীক্ষামূলক ভাবে ৩ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে। এসব জমিতে সূর্যমুখীর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন দেখে অন্যান্য কৃষকরা তাদের পতিত জমিতে তেলবীজ ফসল সূর্যমুখী চাষের দিকে ঝুঁকছেন। সেইসাথে উপজেলার বিভিন্ন বাড়ির আঙ্গিনাসহ পতিত জমিতে আরো অন্তত ২ থেকে ৩ হেক্টর জমিতে এ তেলবীজ ফসলের চাষ সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে করা হয়েছে। এসব সূর্যমুখীর খেতের ফুলের সৌন্দর্য দেখতে এসে অনেক দর্শনার্থী এফসল চাষ করার পদ্ধতিও শিখছেন বলে চাষীরা জানান।

নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের তেল ফসল উৎপাদনকারী কৃষক দলের সদস্য বানেশ্বরদী ব্লকের আড়িয়াকান্দা এলাকার কৃষক আফজাল হোসেন জানান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তেলজাতীয় ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের আওতায় তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য প্যাটার্ন ভিত্তিক একক প্রদর্শনীর মাধ্যমে সূর্যমুখী-আউশ-রোপা আমন প্যাটার্নের আওতায় ৫০ শতাংশ জমিতে হাইসান-৩ জাতের সূর্যমুখী চাষ করেছেন। এতে তার নিজস্ব তহবিল থেকে খরচ হয়েছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা। তবে কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনা হিসেবে ২ কেজি বীজ ও কিছু সার দেওয়া হয়েছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় তার মুখে হাসি ফোটে ওঠেছে। তিনি আশা করছেন সূর্যমুখী-আউশ-রোপা আমন প্যাটার্ন ভুক্ত এই ৫০ শতাংশ জমির সূর্যমুখী থেকেই লক্ষাধিক টাকা আয় হবে। তবে স্থানীয় ভাবে চাহিদা ও বাজারজাতের ব্যবস্থা করতে পারলে তার ৫০ শতাংশ জমির সূর্যমুখী থেকে দেড় লাখ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা আয় হতো। তিনি বলেন, তার এই জমিতে আগে আমন ধান চাষ করা হয়েছিলো। এখন সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। এর পরে রোপা আমন বা পাট রোপন করা হবে। মধ্যবর্তী ও অপ্রধান এ তেলবীজ ফসল চাষে অন্যরা আগ্রহী হলেও, বাজারজাত নিয়ে চিন্তা থাকায় কৃষকদের মধ্যে পিছুটান লক্ষনীয়। ভবনায় আছেন কৃষকরা।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, সূর্যমুখীর তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে বেশ আলাদা। কোলেস্টেরলমুক্ত সূর্যমুখীর তেলে প্রচুর পরিমাণ প্রাণশক্তি থাকায় এটি আমাদের শরীরের দুর্বলতা কমিয়ে কর্মক্ষমতা বাড়ায়। রান্নার জন্য সয়াবিন বা সরিষা তেলের চেয়ে সূর্যমুখীর তেল প্রায় ১০ গুণ বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। শরীর সুস্থ রাখতে ও হাড় মজবুত করতে সূর্যমুখী তেল গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে বলে স্থানীয় পুষ্টিবিদরা জানান।