বাংলা সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী সুচিত্রা সেনের অভিনয়ের ক্যারিয়ার মাত্র ২৫ বছরের। তার অভিনীত বাংলা সিনেমার সংখ্যা মাত্র ৫৩টি। তবুও রুপালি পর্দায় তার ছেড়ে দেওয়া সিংহাসনটি আজও শূন্যই পড়ে আছে। তুখোড় ব্যক্তিত্ব, মায়াভরা চাহনি, গ্ল্যামার, মন জয়করা অভিনয়- সব কিছু নিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের সবসময়ের সেরা সুচিত্রা সেন।
আজ এই মহানায়িকার জন্মদিন। সুচিত্রা সেনের জন্ম হয়েছিল ১৯৩১ সালের আজকের এই দিনে বাংলাদেশের পাবনায় মামার বাড়িতে। দাদু আদর করে তার নাম রেখেছিলেন কৃষ্ণা। তবে শোনা যায় কৃষ্ণা নামটি তার বাবা করুণাময় দাশের পছন্দ ছিল না। তাই পরে তিনি মেয়ের নাম রেখেছিলেন রমা দাশগুপ্ত।
সুচিত্রা সেন পড়ালেখা করেন পাবনাতে। ১৬ বছর বয়সে ১৯৪৭ সালে বাঙালি ব্যবসায়ী আদিনাথ সেনের ছেলে দীবানাথ সেনের সঙ্গে তার বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে সূত্রে নাম হয়ে যায় রমা সেন। বিয়ের পরপরই স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় চলে যান সুচিত্রা। শ^শুরবাড়ির সূত্রেই পরিচালক বিমল রায়ের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল সুচিত্রা সেনের। চলচ্চিত্র অভিনয়ের কথা শুরু সেখান থেকেই। ১৯৫২ সালে ‘শেষ কোথায়’ নামের চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন তিনি। তবে সে ছবিটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়নি। সুচিত্রা সেনের প্রথম মুক্তি প্রাপ্ত সিনেমা ‘সাত নম্বর কয়েদী’। এই ছবিতেই নীতিশ রায় তার নাম দেন সুচিত্রা। পরের বছর ১৯৫৩ সালে ‘ভগবান শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য’ ছবিতে বিষ্ণুপ্রিয়া চরিত্রে অভিনয় করে সবার নজর কাড়েন সুচিত্রা সেন। উত্তম কুমারের সঙ্গে প্রথম অভিনয় করেন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে।
তবে জুটি হিসেবে তাদের সাফল্য আসে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিতে। এই ছবিটি করার পরই দর্শকরা খুঁজে পেলেন তাদের স্বপ্নের জুটি। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। ৩০টির বেশি ছবিতে এই জুটি দাপটের সঙ্গে অভিনয় করে বনে যান সর্বকালের সেরা জুটি। তবে উত্তম ছাড়াও যে অনবদ্য তিনি সেটাও প্রমাণ করে দিয়েছেন দীপ জ্বেলে যাই, সাত পাকে বাঁধার মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে। বাংলা সিনেমার পাশাপাশি হিন্দি সিনেমাতেও কাজ করেছেন সুচিত্রা। তার অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি দেবদাস। আর সঞ্জিব কুমারের সঙ্গে করা ‘আধি’ হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে রীতিমতো মাইলফলক হয়ে রয়েছে।
১৯৫৫ সালে দেবদাস সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার অর্জন করেন, যা ছিল তার প্রথম হিন্দি ছবি। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে ১৯৬৩ সালে মস্কো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কার জেতেন সুচিত্রা সেন। ১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাকে ‘পদ্মশ্রী’ সম্মান প্রদান করে। ১৯৭৮ সালে প্রণয় পাশা সিনেমাতে শেষবারের মতো অভিনয় করেন তিনি। মাত্র ৪৭ বছর বয়সেই নিজের ইচ্ছাতেই অভিনয় থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন তিনি। জনপ্রিয়তার চূড়ায় থেকেও কীভাবে নিজেকে এভাবে গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা আজও বিস্ময়। ২০১২ সালে তাকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সর্বোচ্চ সম্মাননা বঙ্গবিভূষণ প্রদান করা হয়। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এ কিংবদন্তি শিল্পীর মৃত্যু হয়। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাকে ঘিরে সাধারণ মানুষের ছিল অপরিসীম কৌতূহল।