হাবিপ্রবি (দিনাজপুর) থেকে মো. রুবাইয়াদ ইসলাম:দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজে (বর্তমানে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন কৃষিবিদ ইয়াসিন আলী। খ্যাতিমান এই কৃষিবিদের ১৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ (রবিবার, ১০ এপ্রিল, ২০২২)। তিনি ২০০৬ সালের ১০ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএসআরআই) পরিচালকও হয়েছিলেন।
কৃষিবিদ ইয়াসিন আলী’র জন্ম ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার বালিয়াখুলী গ্রামে। তার পিতার নাম মোঃ মনসুর আলী এবং তিনি ১৯৫৬ সালে দিনাজপুর জিলা স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে মেট্রিকুলেশন পাস করেন। পরবর্তীকালে তিনি ১৯৫৮ সালে এস.এন. কলেজ, দিনাজপুর থেকে এইচ.এস.সি. এবং ১৯৬১ ও ১৯৬৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট থেকে যথাক্রমে বি.এজি ও কৃষিতত্ত্ব বিষয়ে এম.এজি পাস করেন। এছাড়াও তিনি ১৯৬৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে এম.এস. ডিগ্রী অর্জন করেন।
কর্মজীবনের প্রথম পর্যায়ে ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যোগদান করেন। এরপর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনে ডেপুটি এগ্রোনমিস্ট হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৮৪ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি ইক্ষু গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (বর্তমানে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট) পরিচালক হিসেবে যোগদান করে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন। কিছু সময়ের জন্য তিনি হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজের (বর্তমানে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি তার বিচিত্র কর্মময় জীবনে দেশ-বিদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশে কৃষি উন্নয়নে কৃষিবিদ ইয়াসিন আলী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশ আখ ফসলকে একটি খাদ্য শস্য হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ে তিনি অগ্রণী ভুমিকা রেখেছেন। দেশকে চিনি ও গুড়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার জন্য তিনি আমরণ প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। একজন ইক্ষু বিজ্ঞানী হিসেবে তাঁর অবদান এ দেশের কৃষকরা চিরদিন কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করবে। আখের ফলন ও চিনি আহরণ হার বৃদ্ধিকল্পে বিভিন্ন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের সাথে মাঠপর্যায়ে বিস্তারের মাধ্যমে আখ আবাদকে লাভজনক করার জন্য তিনি সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তিনি আখকে লাভজনক ফসল হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য যুগান্তকারী প্রযুক্তি রোপা আখচাষ (STP) এবং জোড়াসারি আখের সাথে একাধিক সাথী ফসল চাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। গুড় ও চিনি শিল্প বিস্তারে তিনি সবসময় সচেষ্ট ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের কৃষিবিদদের প্রথম সংগঠন ওল্ড বয়েজ এসোসিয়েশন এবং কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে উন্নীতকরণে তাঁর অগ্রণী ভুমিকা ছিলো।
২০০৬ সালে ১০ এপ্রিল সোমবার দুপুর ১২.৪০ ঘটিকায় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬৫ বছর ৫ মাস বয়সে কৃষিবিদ ইয়াসিন আলী ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক পুত্র, তিন কন্যা ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
বরেণ্য এ কৃষিবিদের মৃত্যুর ব্যাপারে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. মো. আমজাদ হোসেন বলেন, “তিনি আমাদের প্রতিষ্ঠানের পরিচালক ছিলেন। কর্মজীবনে কৃষি গবেষণা তথা ইক্ষু গবেষণায় নিবেদিত প্রাণ ছিলেন। বাংলাদেশের সকল কৃষি গবেষণা ও কৃষি উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা অনস্বীকার্য।”
মহাপরিচালক আরও জানান, “আমরা তাঁর অবদানের স্মরনে কৃষিবিদ ইয়াসিন আলী প্রশিক্ষণ ভবন নামকরণ করেছি। ঠাকুরগাঁয়েও একটি কনফারেন্স রুম রয়েছে। আমি নিজে তাঁর পরিচালক সময়ে সায়েন্টফিক অফিসার পদে যোগদান করি। দীর্ঘদিন তাঁর সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছিলো।”