বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ: এখানকার অলিগলিতে রিকশাচালক বেশে খুঁজে বেড়ানো বাবা ইদ্রিস আলী সন্ধান পেয়েছেন দুই মেয়ের । তবে এখনও তার কাছে হস্তান্তর করা হয়নি। মেয়ে দুইজন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী হস্তান্তর করা হবে। দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার বাসিন্দা ইদ্রিস আলী বলেন, থানা থেকে বলা হয়েছে আমার দুই মেয়েকে পাওয়া গেছে। আমি এখন থানায় আসছি।
ফতুল্লা মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তরিকুল ইসলাম জানান, দুই মেয়েকে পাওয়া গেছে। উর্ধ্বতনদের সঙ্গে কথা বলে তারপরে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে বেশ সুখে শান্তিতেই সংসার চলছিল দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার বাসিন্দা ইদ্রিস আলীর (৩৮)। কৃষিকাজের পাশাপাশি মাঝে মধ্যে ঢাকায় এসে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আশা ছিল মেয়েদের লেখাপড়া করিয়ে ভাল জায়গায় বিয়ে দিবেন। কিন্তু কোনো এক দালালের কুমন্ত্রণা আর স্ত্রীর উচ্চ বিলাসিতায় কাল হয়েছিলো তার জন্য। তার কাছ থেকে আদরের দুই মেয়েকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছিল। মেয়েদের খোঁজে তিনি সেই দিনাজপুর থেকে নারায়ণগঞ্জে এসে হয়েছেন রিকশাচালক। রিকশা চালান আর নারায়ণগঞ্জের অলিগলিতে মেয়েদের খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন। কিন্তু কোথাও যেন তাদের দেখা মিলছিল না। মেয়ে ফিরে পাবার আশায় তার খাওয়া দাওয়াও বন্ধ হয়ে গেছে তার।
এর আগে গণমাধ্যমকে ইদ্রিস আলী বলেন, এই জীবনে এখন শুধু একটাই চাওয়া যেন মেয়ে দুইটিকে কাছ পান। মেয়েদের ছাড়া তিনি অচল। মেয়েদের ছাড়া তার কোনো কিছুই ভাল লাগে না। নারায়ণগঞ্জ এসে রিকশা চালালেও কোনো কোনো যাত্রীদের থেকে তিনি ভাড়াও নেন না। মেয়েদের খুঁজতে নারায়ণগঞ্জে এসে তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
মেয়েদের কথা জিজ্ঞাসা করতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন ইদ্রিস আলী। কান্না করতে করতে তিনি বলেন, আমার সংসারে কোনো অভাব ছিল না। দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে আমরা সুখে শান্তিতে সংসার চলছিল। এরই মধ্যে একজন দালাল এসে আমার স্ত্রী শাহনাজ বেগমকে (২৭) কুমন্ত্রণা দেয়। তাকে বলে বিদেশ গেলে অনেক আয় হবে। আমি তাকে বুঝেই যে বিদেশ যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু আমার কথা সে শুনে নাই। সে বিদেশ যাবেই।
এরই মধ্যে একদিন বাড়ি ফিরে দেখেন তার দুই মেয়ে ইতি (৯) এবং মীম (৫) কে নিয়ে স্ত্রী শাহনাজ বেগম বাড়ি ছেড়েছেন। তারপর থেকেই তিনি আর দুই মেয়ের মুখ দেখতে পারছেন না ইদ্রিস আলী। মাঝে মধ্যে ফোনে কথা হলেও তাদের কোনো ঠিকানা জানার সুযোগ হয়নি। মেয়েরা তার কাছে যেতে চাইলেও সে সুযোগ দেয়া হচ্ছে না।
ইদ্রিস আলী বলেন, গত ২০ দিন আগে আমি মেয়েদের সাথে কথা বলি। তারা আমাকে বলে নারায়ণগঞ্জে আছে। আর তাই আমি নারায়ণগঞ্জে ছুটে এসেছি। এখানে এসে আমি রিকশা চালাই আর মেয়েদের খুঁজছি। নারায়ণগঞ্জে অলিগলি সব জায়গায় আমি আমার মেয়েদের খুঁজছি। কিন্তু কোথাও তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। আমি আমার মেয়েদের ফেরত চাই। আমি আর অন্য কিছু চাই না।
এদিকে এই ঘটনায় গত ১০ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি জিডি করা হয়েছে। পুলিশ সেই জিডি আমলে নিয়ে তদন্ত কাজ শুরু করেন।
ইদ্রিস আলীর বড় ভাই হবিবরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মেয়ে দুইটাকে তার বউ নিয়ে গেছে। তার বউ বিদেশ চলে গেছে। এখন তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়েদেরকে তার বাবার কাছে আসতে দিচ্ছে না।
জিডিতে উল্লেখিত ইদ্রিস আলী শাশুড়ি আকলিমা বেগমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মেয়েদের নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকার একটি প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি করানো হয়েছে। তারা বড় হলে এমনিতেই তার বাবার কাছে চলে যাবে। আমার মেয়ে শাহনাজ দেশে নেই। সে বিদেশ থেকে আসুক। আমরা দুই মেয়েকে নিয়ে ঈদে বাড়ি যাবো।