বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: জেদ্দা এবং মদিনা বিমান বন্দরে বিপুল সংখ্যক উমরাহ যাত্রী আটকে পড়েছেন। এদের মধ্যে অন্ততঃ দেড় হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে বিভিন্ন সময়ে তারা সেখানে পৌঁছেন।
সৌদি সরকার আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন উমরাহ সফর।প্রাণঘাতি করোনাভাইরাস আতংকে বুধবার এ সিদ্ধান্ত নিয়ে সাথে সাথে তা কার্যকর করেছে। অনলাইন উমরাহ ভিসা রেজিস্ট্রেশন সিস্টেম ব্লক করে দেয়া হয়েছে।
ট্যুর অপারেটররা জানান, নতুন কোনো ভিসা ইস্যু হচ্ছে না এবং আজকের নির্ধারিত উমরাহ যাত্রীদেরও সৌদি যেতে দেয়া হয়নি। সকালে বিমানবন্দরে যে যাত্রীরা গিয়েছেন তাদের কাউকে বোর্ডিং পাস দেয়া হয়নি। কেবল আজ শাহজালাল থেকে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সে ১১০ জন উমরাহ যাত্রী গেছেন। এয়ারলাইন্স তাদের ব্যাপারে সৌদি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ক্লিয়ারেন্স নিয়েছে। এই ফ্লাইটের অপর উমরাহ যাত্রীদের যাত্রা বাতিল হয়েছে। সকালে সৌদি আরবের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া বিমানগুলোতেও কোনো উমরাহ যাত্রী ছিলেন না।
বুধবার মধ্যরাতের পর থেকে যেসব উমরাহ যাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন তাদেরকে আটকে দেয়া হয়েছে। বিমান বন্দরে তারা আটকে রয়েছেন। প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। অথচ তারা গেছেন ভিসা নিয়ে। অনুমান করা হচ্ছে জেদ্দা এবং মদিনা বিমান বন্দরে প্রায় ২০ হাজার উমরাহ যাত্রী আটকে পড়েছেন। এদের অন্ততঃ ১৫০০ জন বাংলাদেশি। আজ শেষ সংবাদ পাওয়া পর্যন্ত তারা বিমান বন্দরে ছিলেন। তাদের ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত সৌদি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে পাওয়া যায়নি।
হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম বিজনেসটুডে২৪ কে জানান, সৌদি সরকারের আকস্মিক সিদ্ধান্তের ফলে এজেন্সি মালিকরা অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখে পড়বে।বলেন, ‘আটকে পড়া উমরাহ যাত্রীদের বিষয়ে সকালে সৌদি দূতবাসের সঙ্গে কথা হয়েছে। দূতাবাস কিছু বলতে পারেনি।’ জানান, ১০ হাজার উমরাহ যাত্রীর ভিসার বিপরীতে প্রায় ৫ হাজার টিকিট সংগ্রহ হয়েছে। এদের মধ্যে লো-কস্ট এয়ারলাইন্সের নন-রিফান্ডেবল টিকিটগুলোর মূল্য ৯ কোটি টাকা।
মেয়র হজ কাফেলার নির্বাহী পরিচালক আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন বিজনেসটুডে২৪কে জানান, বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক উমরাহযাত্রীর সৌদি আরব যাওয়া আটকে গেল। তাতে এজেন্সি মালিকরা বিপুল আর্থিক ক্ষতির
সম্মুখীন।ওমরাহ ভিসা ফি, হোটেল ভাড়া ও নন রিফান্ডেবল বিমান ভাড়া আর ফেরত পাওয়া যাবে না বলে এ বিপুল উমরাহ ভিসার মেয়াদ এক মাস। এক মাসের মধ্যে খুলে দেয়া হলে অথবা ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হলে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ কমবে।
মোজাদ্দেদিয়া হজ ট্রাভেলস এন্ড ট্যুরস-এর চেয়ারম্যান আলহাজ মো. ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ‘আজই বেশকিছু উমরাহ ভিসার আবেদন করার কথা। খবর শোনার পর তড়িঘড়ি করে আবেদন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছি।’
আল-নূর হজ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেলস-এর স্বত্ত্বাধিকারি আলহাজ শরিয়তউল্যা শহীদ জানান, সমগ্র বিষয়টি নির্ভর করছে সৌদি সরকারের ওপর । সৌদি সরকার চাইলে পরবর্তী সময়ে এ ভিসার মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে পারবে। সেটা হলে এজেন্সি মালিকরা কম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
অপর এক অপারেটর জানালেন, কয়েকদিনের মধ্যে তার প্রায়৬০ জন উমরাহ যাত্রীর সৌদি আরব যাওয়ার কথা। কেউই যেতে পারছে না। তাতে বিপুল ক্ষতি বলে জানালেন তিনি। বললেন, সৌদি সরকারের মিনিস্ট্রি অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স-এর অনুমতি সংগ্রহসহ অন্যান্য খাতে প্রতি যাত্রীর জন্য ২০ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি নোটিশ জারি করা হয়। সে নোটিশে বলা হয়েছে, উমরাহ পালন ও মসজিদে নববী পরিদর্শন এবং টুরিস্ট ভিসা সাময়িক বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব সরকার।