ঢাকা : গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি আব্দুল হাইকে গ্রেফতার করছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
বুধবার রাতে র্যাব-২ এর একটি দল জঙ্গিগোষ্ঠী হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের সাবেক আমির ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মুফতি আবদুল হাইকে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা থেকে গ্রেফতার করে।
তিনি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা পুঁতে রেখে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলার এবং রমনার বটমূলে বোমা হামলার মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি। এ ছাড়াও তিনি আরও মামলায় যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাাপ্ত আসামি। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে।
র্যাব সদর দপ্তরের সহকারি পরিচালক (গণমাধ্যম) আ ন ম ইমরান খান হুজিবি’র নেতা আবদুল হাইকে গ্রেফতারের বিষয়টি বাসস’কে নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বাসস’কে জানান, দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকা আবদুল হাইকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা হামলায় ১০ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার মামলায় ২০১৪ সালের ২৩ জুন হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি হান্নানসহ ৮ জনকে মৃত্যুদন্ড এবং ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন বিচারিক আদালত। এর আগে ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় জনসভাস্থলে বোমা পুঁতে রেখে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ওই মামলায় ১৪ জঙ্গিকে মৃত্যুদন্ড দেন আদালত।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, এই দুই মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে ছিলেন মুফতি আবদুল হাই। এ ছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে গ্রেনেড হামলা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি তিনি।
২০০০ সালের ২০ জুলাই কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি চায়ের দোকানের পেছনে এ বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় তৎকালীন কোটালীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক নূর হোসেন একটি মামলা দায়ের করেন।
পরে ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট এ মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ জঙ্গির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড দেন। আদালত ফায়রিং স্কোয়াডে প্রত্যেকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার আদেশ দেন। এ ছাড়াও চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেন।
অন্যদিকে ২০০১ সালে পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে বোমা বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত ও ২০ জন আহত হন। এরপর ওই ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক মামলা করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ২৯ নভেম্বর হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে সিআইডির পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ আদালতে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২০১৪ সালের ২৩ জুন হত্যা মামলাটির রায় ঘোষণা করেন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত। রায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত হরকাতুল জিহাদের শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, মুফতি আব্দুল হাই, বিএনপি নেতা ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিনসহ ৮ জনের মৃত্যুদন্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া হয়।
-সূত্র বাসস